রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সাইবার অপরাধের শিকার নারী

হ্যাকাররা বিভিন্ন লিংক পাঠিয়ে কৌশলে সেখানে ক্লিক করিয়ে পাসওয়ার্ড জেনে নেয়। এভাবে তারা আইডি হ্যাক করে ছবি, ব্যক্তিগত তথ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে 'বস্ন্যাকমেল' করে টাকা আদায় করতে এগুলো ব্যবহার করে। এছাড়া প্রতারক চক্রের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে তারা নারীদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে।
নুরুল আমিন
  ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সাইবার অপরাধের নতুন নতুন ধরন সামনে আসছে। বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতারণার ঘটনাই বেশি ঘটছে। আর এর শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি নারীরাও।

ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) এক শিক্ষার্থীর ফেসবুক নিয়ন্ত্রণে নেয় একটি অপরাধী চক্র। মেয়েটির ছবি সম্পাদনা (এডিট) করে সেটা তার পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে ১০ হাজার টাকা দাবি করে তারা। এই অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সূত্রাপুর থানায় মামলা করেন মেয়েটির মা। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

এ ঘটনায় বায়তুল ইসলাম ওরফে মুন্না নামের এক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে ডিবি। পরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বায়তুল বলেন, তিনি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের নিশানা করে তাদের ফেসবুক নিয়ন্ত্রণে নিতেন। পরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা দাবি করতেন। গ্রেপ্তারের সময় তার একটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়। মুঠোফোনটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করে অনেক নারীর ছবি, ভিডিও এবং বিভিন্ন পরিবারকে টাকা চেয়ে হুমকি দেওয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, সাইবার জগতে নারী ভুক্তভোগীদের ক্ষেত্রে ফেসবুক আইডি হ্যাকিংয়ের ঘটনাই বেশি ঘটে। হ্যাকাররা বিভিন্ন লিংক পাঠিয়ে কৌশলে সেখানে ক্লিক করিয়ে পাসওয়ার্ড জেনে নেয়। এভাবে তারা আইডি হ্যাক করে ছবি, ব্যক্তিগত তথ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে 'বস্ন্যাকমেল' করে টাকা আদায় করতে এগুলো ব্যবহার করে। এছাড়া প্রতারক চক্রের সদস্যরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। পরে তারা নারীদের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে।

গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে ব্যাংক ও মুঠোফোনে আর্থিক সেবায় প্রতারণার ঘটনা ঘটছেই। তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতারক চক্র নানা কৌশলে গ্রাহকদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে। এরপর তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পরিচয়ে গ্রাহকদের ফোন করে। তখন কৌশলে ব্যাংক ও মুঠোফোনে আর্থিক সেবার বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে পাঠানো ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) জেনে টাকা তুলে নেয়। এ ছাড়া ব্যাংকের সার্ভার থেকেও তথ্য হাতিয়ে গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ আসছে।

এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা ফারজানা তাসনিনের সঙ্গে। গত ২৫ এপ্রিল তার একাধিক ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের নিয়ন্ত্রণ নেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা। তারা কয়েক ধাপে ১ লাখ ৯৬ হাজার টাকা তুলে নেয়। এ ঘটনায় ফারজানা বাদী হয়ে ঢাকার আদাবর থানায় মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, ব্যাংকের কল সেন্টারের কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে তার ক্রেডিট কার্ডের বিপরীতে আসা ওটিপি জেনে নেন এক প্রতারক। পরে তার টাকা তুলে নেওয়া হয়।

সাইবার অপরাধ নিয়ে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তৌহিদ ভূঁইয়া বলেন, দেশে যত সাইবার অপরাধ হয়, তার সব অভিযোগ পুলিশের কাছে আসেও না। বিচিত্র ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। সামাজিক হেনস্তার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই অভিযোগ না করে চেপে যান। এতে সাইবার অপরাধীরা আরও অপরাধের সুযোগ পায়।

সাইবার অপরাধের ঘটনায় ভুক্তভোগীদের পর্যাপ্ত আইনি সহায়তা দিতে সরকারি উদ্যোগ দরকার বলে মনে করেন অধ্যাপক তৌহিদ ভূঁইয়া। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে বাধ্যতামূলকভাবে সাইবার সুরক্ষাবিষয়ক সচেতনতামূলক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে