বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

২৩৫ প্রজাতির জবা

মো. আমান উলস্নাহ
  ১১ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

কর্মব্যস্ততায় মগ্ন নগরীর মানুষের কাছে ছাদবাগান সতেজতার পরিচয় বহন করে। প্রত্যেকেরই সুযোগ থাকে এই ব্যস্ত নগরীতে পরিবেশের জন্য ভালো কিছু উপহার দেওয়া। বাসাবাড়ির পরিত্যক্ত জায়গায় অথবা ছাদবাগানে গাছ রোপণ করে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। সৌন্দর্য পিয়াসী ব্যক্তি হলেই এসব জায়গায় সুন্দর বাগান করা সম্ভব। নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশি-বিদেশি থেকে ২৩৫ প্রজাতির জবার গাছ রোপণ করে এমন বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল ও উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর শাহানারা বেগম। প্রতিদিনই বাহারি রং-বেরঙের সে ফুলগুলো ফুটছে তার সেই ছাদবাগানে। ডক্টর শাহানারা কৃষি অনুষদের ১৯৯২-৯৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। অনার্স শেষ করে মাস্টার্স চলাকালে ২০০১ সালে বাকৃবিতে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন এই অধ্যাপক। টোকিও ইউনিভার্সিটি অফ এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি থেকেও অর্জন করেছেন পিএইচডি ডিগ্রি। জবা চাষে আগ্রহ সৃষ্টি জবা ফুলের প্রতি আগ্রহ হঠাৎ করে জন্মেছিল ডক্টর শাহানারা বেগমের। জবা ফুলের ২৩৫ ধরনের প্রজাতি হতে পারে সেই সম্পর্কে কোনো ধারণাই ছিল না। 'এসো বাগান করি' ফেসবুক গ্রম্নপের মাধ্যমে প্রথম জবা ফুল আকৃষ্ট করে। সেখানে জবা ফুলের বিভিন্ন ধরনের রং, ধরন থেকে ভালো লাগা শুরু তার। মূলত করোনাকালে ছাদবাগানকারীদের সংখ্যা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সালে করোনার ভিতরে বাড়িতে অলস বসে থাকার সময় ছাদবাগানের কাজ শুরু করা হয়। অনেকের কাছে বিরল প্রজাতির জবার গাছ রয়েছে। তবে ২৩৫ প্রজাতির জবার গাছ বাংলাদেশে সম্ভবত অন্য কারও কাছে নেই। যেভাবে শুরু অধ্যাপকের নিজের উদ্যোগে জবাফুলের বাগান করা। জবাফুলের নতুন নতুন প্রজাতি সংগ্রহ শুরু হয় করোনা যখন পরিস্থিতি শীতল হলে। প্রথমে বাকৃবি ক্যাম্পাসের আশপাশের নার্সারি থেকে ফুলের প্রজাতি সংগ্রহ শুরু করেন। একদম শুরুতে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের পাশের নার্সারি থেকে গাছ ক্রয় করেন। এরপর আস্তে আস্তে সারা বাংলাদেশ থেকে ফুলের চারা সংগ্রহ করতে থাকেন। বর্তমানে ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ির আবিদুল ইসলামের নার্সারি ও বগুড়ার ইসলামুল হকের কাছ থেকে জবাফুলের সংগ্রহ চলমান। অনলাইন-অফলাইন দুই পদ্ধতিতে ফুল সংগ্রহ করা হয়। এরপর সাভারের হাসান হাওলাদারের কাছ থেকে ফুলের চারা সংগ্রহ করি। এ ছাড়া অধ্যাপকের স্বামী অধ্যাপক ডক্টর মো. আজহারুল ইসলাম একজন অধ্যাপক ও গবেষক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনিও দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজে কিংবা ভ্রমণে গেলে সেখান থেকে জবাফুলের প্রজাতি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে বাগানের জন্য। ছাদবাগানে ফুল দেখার অনুভূতি ডক্টর শাহানারা বলেন, 'জবাফুল দেখতে খুবই ভালো লাগে। প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার পর নতুন ফুল দেখার অপেক্ষায় থাকা হয়। একেক দিন একেক ধরনের ফুল ফুটতে দেখা যায়। অবসর সময়ে ফুলের পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত থাকা হয়। দিনে সকাল-বিকাল ফুলের পিছনে সময় দেওয়া হয়। দিনের অন্যান্য সময় ক্যাম্পাসে অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে সময় ব্যয় করার কারণে বিকালের সময়ে ছাদবাগানে সময় দেওয়া হয়।' অধ্যাপক বলেন 'জবা একদিনের ফুল। সকালে ফুটলে বিকালে ফুলের জীবন শেষ হয়ে যায়। সব ফুল এক ফোটে না। একেক দিন একেক প্রজাতির জবার ফুল ফুটে থাকে। জবাফুল দুই দিন বা তিন দিন বেঁচে না থাকার কারণে সব ফুল একসঙ্গে দেখা যায় না। কয়েকদিন জবাফুল টিকে থাকলে একসঙ্গে অনেক ফুল দেখা যেত। অন্যদিকে ফুলের সব ফুল একসঙ্গে দেখা যায় না। আবহাওয়ার তারতম্যের ওপর জবাফুল ফোটা অনেকাংশ নির্ভর করে। অতিবৃষ্টি ও শীতল বৃষ্টির সময়ে কমসংখ্যক গাছে ফুল ফুটতে দেখা যায়। আবহাওয়া ভালো অথবা খারাপের জন্য জবাফুল কম-বেশি ফুটতে দেখা যায়।' ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ডক্টর শাহানারা বলেন, 'নিজের ভালোলাগা থেকে জবা ফুল চাষ করা। এই বাগানটি আমার অবসরের শান্তির জায়গা। যতদিন সুস্থ থাকব ততদিন আরও অনেক জবাফুলের প্রজাতি সংগ্রহ করতেই থাকব। শুধু একটি নির্দিষ্ট প্রজাতির গাছ নিয়ে কাজ করতে চাই সেটি হচ্ছে জবা। বিশ্বের বিভিন্ন প্রজাতির জবা সংগ্রহ করে আমার বাগানে রাখতে চাই এটাই আমার পরিকল্পনা।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে