বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আজব গাছ পাগলা গাছ

তানিউল করিম জীম
  ২৭ মে ২০২৩, ০০:০০

পাগলা গাছ! কথাটি শুনে যে কেউ প্রথমে একটু অবাক হবেন। গাছ আবার পাগলা হয় নাকি? আর এমন নাম তো আগে কখনো শুনি নাই। শুধু মানুষ নয় গাছও পাগল হয়। পাগল মানুষের যেমন আচার-আচরণের ঠিক থাকে না তেমনি এই গাছের ক্ষেত্রে ঠিক থাকে না তার পাতার ধরন। সাধারণত কোনো গাছের পাতা মোটামুটি একই রকম হয়, কিন্তু এ পাগলা গাছের কোনো পাতার সঙ্গে কোনো পাতারই মিল নেই। সব পাতাই আলাদা আলাদা। কোনো পাতা লম্বা তো কোনো পাতা বেঁটে আবার কোনো পাতা গোল তো কোনো পাতা খাঁজ কাটা। তাই তো এই গাছটিকে হিন্দিতে 'পাগাল পাত্তা' বা পাগল পাতা, বাংলায় পাগলা গাছ এবং ইংরেজিতে গধফ :ৎবব বলে। বিচিত্র ধরনের গাছ সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুজ্জামানের। তাই বিভিন্ন বই-পুস্তক থেকে জানার চেষ্টা করেন বিচিত্র প্রজাতির গাছ-গাছালি সম্পর্কে। জায়েদ ফরিদের উদ্ভিদ স্বভাব বইয়ের গাছপালার বিচিত্র জীবনকথন (দ্বিতীয় খন্ড) পড়তে গিয়ে তিনি জানতে পারেন এই পাগলাগাছ সম্পর্কে। তারপর খোঁজ করতে করতে অবশেষে এ গাছের দেখা মেলে বাকৃবি বোটানিক্যাল গার্ডেনে এবং ক্যাম্পাস এলাকায় অবস্থিত দারুল কোরআন মুসলিম একাডেমির দক্ষিণ পাশে একটি করে মোট ২টি গাছের। পাগলাগাছ সম্পর্কে ড. আশরাফুজ্জামান জানান,

পাগলাগাছ এক আজব গাছ। এই পাগলাগাছ আসলে বুদ্ধনারিকেলের (ইঁফফযধ্থং ঈড়পড়হঁঃ) একটি জাত। বুদ্ধনারিকেল নাম হলেও গাছটি দেখতে আদৌ নারিকেলগাছের মতো নয়। তবে গাছের ডালে ডালে ঘন পাতার আড়ালে ছোট ছোট লম্বাটে-গোল ফলগুলো দেখে প্রথম দৃষ্টিতে নারিকেলই মনে হবে। সাধারণত বুদ্ধনারিকেল গাছের পাতাগুলো একই রকম দেখতে হয়। কখনো কখনো (১%) গাছের এই পাগলামী শুরু হয়, পাতা আলাদা আলাদা। আবার এই পাগলা গাছের ফুল ও ফল একদম আসল বুদ্ধনারিকেলের মতোই। এই পাগলাগাছের ফল থেকে যখন নতুন চারা জন্মায় তখন শুধু তিন শতাংশ নাকি পাগলাগাছ হয় বাকিগুলো সাধারণত বুদ্ধনারকেল। এই গাছের পাগলামী প্রথম দেখেছিলেন স্যার উইলিয়াম রাইট স্মিথ লাতিন দেবতার (ঝঃবৎপঁষরধং) নামানুসারে তিনি গাছের বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছিলেন ঝঃবৎপঁষরধ ধষধঃধ াধৎ. রৎৎবমঁষধৎরং।

এই গাছের ফুলগুলোও অদ্ভুত, তারার মতো এবং খুব ছোট, ফুলে কোনো পাপড়ি হয় না, বৃতিগুলোই পাপড়ির মতো, ফুলের গন্ধও বাজে। আবার ফল মোটা খোলশযুক্ত, দেখতে নারিকেলের মতো এবং গন্ধও অনেকটা সেরকম মনে হলেও ভিতরে নারিকেল বলতে যা থাকে তা অত্যন্ত স্বল্প। পরিণত অবস্থায় একদিকে ফেটে যায়, তখন খোলশটিকে বুদ্ধ ভিক্ষুর ভিক্ষা-পাত্রের মতো লাগে, তাই হয়তো এরকম নাম হয়েছে গাছটির। খোলশের ভিতরে থাকে অনেক বীজ, অনেকটা মেহগনি বীজের মতো, পাখনাওয়ালা বীজ দিয়ে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে চলে যায় বহুদূর। পাখনাওয়ালা বীজের জন্য পরে এর নাম রাখা হয় চঃবৎুমড়ঃধ ধষধঃধ। গ্রিক ভাষায় টেরিগোটা শব্দের অর্থ পাখনা বা ভেসে বেড়ানো। বীজের মধ্যে আফিমের মতো নেশাকর গুণাবলিও রয়েছে। আগ্রহীরা অবশ্যই পাগলাগাছ দর্শনের এই সুযোগ হাতছাড়া

করবেন না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে