সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তাই পরিবেশ। চারপাশের অবস্থা, জলবায়ু, প্রভাব বিস্তারকারী অন্যান্য জীব ও জৈব উপাদান সবকিছুই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত। আর এর সবকিছুই একজন ব্যক্তিকে প্রভাবিত করে। ফলে কেউ যদি সচেতন না হয়, তাহলে জীবন চলাচল ব্যাহত হবে। শাহ বিলিয়া জুলফিকার
মারিয়া সুলতানা
  ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০

পরিবেশ দূষণ কমাতে হবে

১৯৭২ সালে জাতিসংঘের মানবিক পরিবেশ বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনপি) আয়োজনে প্রতি বছর ১০০টিরও বেশি দেশে এ দিবস পালিত হয়।

আমাদের অসচেতনতার জন্য পরিবেশ হুমকির মুখে আছে। প্রতিনিয়ত পরিবেশ দূষিত হয় এমন কর্মকান্ড বেড়েই চলছে। খোদ রাজধানী ঢাকা ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। গতবছর লন্ডনভিত্তিক ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এক জরিপে বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান ছিল শেষের দিক থেকে সপ্তম। সেই ছোটবেলা থেকে পড়ে আসছি আমাদের চারপাশে যা কিছু রয়েছে সবকিছু মিলেই আমাদের পরিবেশ। অথচ আমরা দিন দিন চারপাশের অবস্থানকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছি।

১. ব্যক্তিগত যানবাহনের ব্যবহার কমাতে হবে।

২. অপ্রয়োজনে এসি, ওয়াশিং মেশিন, ডিসওয়াশার ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

৩. পটকা, আতশবাজি ফোটানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

৪. কীটনাশক, রাসায়নিক সারের প্রয়োগ সঠিক মাত্রায় করতে হবে।

৫. ট্যানারি শিল্পের জন্য আলাদা অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে।

৬. মেডিকেল বর্জ্য যত্রতত্র ফেলানো বন্ধ করতে হবে।

৭. নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করা।

৮. উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রম্নত সময়ে শেষ করা।

৯. ফুটপাতের আশপাশে ময়লা ফেলানো, মূত্র বিসর্জন ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকা।

আবদুলস্নাহ আল মারুফ

শিক্ষার্থী : যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগ, আইইউবিএটি, ঢাকা।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ছাদকৃষি

ছাদকৃষি শব্দটি বাংলাদেশে কিছুটা অপ্রচলিত হলেও বহির্বিশ্বে ইতিমধ্যেই এটি বিপস্নব সৃষ্টি করেছে। সারাবিশ্বে পালস্না দিয়ে বাড়ছে এর পরিধি। বিশ্বের সঙ্গে মিলিয়ে বাংলাদেশেও বড় বড় শহরগুলোতে এর ব্যাপকভাবে চর্চা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকায় ছাদকৃষির ব্যাপকতা চোখে পড়ার মতো। বর্তমানে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বৃক্ষনিধনের ফলে প্রতিনিয়ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রচন্ড গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। শহরাঞ্চলে গাছপালা কম থাকায় অক্সিজেন উৎপাদন কম এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। বড় বড় শহরগুলোতে অধিক জনসংখ্যা, যানবাহন ও গাছপালা কমে যাওয়ার কারণে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গাছ কেটে গাছ লাগানোর পরিবর্তে বড় বড় ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। বসতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের পরিবেশ দিন দিন প্রতিকূলে যাচ্ছে মানুষের। শহরের অধিকাংশ জায়গা দখল করে আছে ফাঁকা ছাদ, যা তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক? এমন পরিস্থিতিতে শহরগুলোতে বসবাসের উপযোগী করতে হলে গাছ লাগানোর কোনো বিকল্প নেই? যেহেতু সারি সারি ভবনের কারণে গাছ লাগানোর জায়গা তেমন নেই, সেহেতু বাড়ির ছাদে কিংবা ব্যালকনিতে সুষ্ঠুভাবে বাগান করা হলে তাপমাত্রা অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।

ভবনের ছাদে বাগান করা গেলে বাগানের গাছ এ তাপ শুষে নেয় এবং গাছের দেহ থেকে যে পানি জলীয়বাষ্প আকারে প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বেরিয়ে যায়, তা সেই স্থানের তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি কমিয়ে আনে? অসংখ্য ছাদবাগান বা শহুরে গাছপালা এ প্রক্রিয়ায় শহরের উচ্চ তাপমাত্রাকে কমিয়ে আনে? ছাদকৃষি শুধু শখ থেকে নয়, পরিবেশের প্রয়োজনে করতে হবে? বিশেষ করে ঢাকা শহরের জন্য? এতে একদিকে যেমন পরিবেশ নির্মল থাকবে, অন্যদিকে পারিবারিক ফুল, ফল ও শাকসবজির চাহিদা মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখারও সুযোগ রয়েছে? ছাদকৃষি শুধু একটি শখের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এটি একসঙ্গে অর্থ আয়ের উৎস, পারিবারিক পুষ্টিসাধন এবং সর্বোপরি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে। সরকারিভাবে ছাদকৃষির মতো সম্ভাবনাময় খাত সম্পর্কে জনগণকে উৎসাহিত করা হলে এটি আরও বৃদ্ধি পাবে।

শাহ মুহাম্মদ আব্দুলস্নাহ

শিক্ষার্থী : বাংলা সাহিত্য বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

বৃক্ষ রোপণ করতে হবে

পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বৃক্ষ মানুষের প্রকৃত বন্ধু। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গাছ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করছে। অক্সিজেন সরবরাহ ও কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণের মাধ্যমে গাছ প্রাণিকূলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখছে। একটি পরিণত গাছ বছরে ৪৮ পাউন্ড কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে। যা বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে প্রবলভাবে সাহায্য করছে। কিন্তু আজ আমরা তথাকথিত নগরায়ণ ও উন্নয়নের নামে নির্বিচারে কেটে ফেলছি এসব গাছ। যার ফলে বাস্তুতন্ত্র তার ভারসাম্য হারাচ্ছে। প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। আমরা জানি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূখন্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা অপরিহার্য। সেখানে, বাংলাদেশের বনভূমি রয়েছে ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। সুতরাং, প্রয়োজনের তুলনায় বনভূমি রয়েছে শতকরা ৫৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ঘাটতি রয়েছে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ, যার প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের জলবায়ুর ওপর। সাম্প্রতিক দেশের তাপমাত্রা জানান দিচ্ছে, আমাদের পরিবেশের কী ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে। তারপরও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় বৃক্ষের সংখ্যা কম হলে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যায় এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই পৃথিবীনামক এই গ্রহে মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তাই বৃক্ষ রোপণের কোনো বিকল্প নেই।

মরিয়ম রিমা

শিক্ষার্থী: ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

জনসচেতনতা ও কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

আমাদের চারপাশের সবকিছু নিয়েই আমাদের পরিবেশ। নশ্বর পৃথিবীতে বিদ্যমান প্রাণিকূলের সুস্থতা, প্রাণবন্ততা, দৃঢ়চেতা মনোবল ও কর্মদক্ষতা নির্ভর করে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নির্মল পরিবেশের ওপর। অথচ পরিবেশের সুরক্ষায় মানবজাতির উদাসীনতা ও অপতৎপরতা প্রকাশ পায় প্রতিনিয়ত। তবে বর্তমানে পৃথিবীর সর্বস্তরের মানুষ পরিবেশ রক্ষায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে? কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ ও জনসচেতনতার অভাবে পরিবেশ রক্ষা সম্ভবপর হচ্ছে না। পৃথিবীকে জীবের জন্য বসবাসযোগ্য করার নিমিত্তে পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই। সরকারের উচিত উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নীতিমালা প্রণয়ন। পাশাপাশি গৃহীত নীতিমালা কতটুকু কার্যকর হচ্ছে সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখা। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষার উপকারী দিকগুলো তুলে ধরে জনসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা। পরিবেশ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপগুলো হতে পারে, যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকা, আবর্জনাপূর্ণ ডোবা-নালা ভরাট করে ফেলা, কলকারখানার বর্জ্য সুচারুরূপে অপসারণকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ, অগণিত বৃক্ষ রোপণ ও বনায়নের কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা।

মারিয়া সুলতানা

শিক্ষার্থী : ইংরেজি বিভাগ, ইডেন মহিলা কলেজ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে