সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে কাঠগোলাপ

নাজমুল হুদা
  ২২ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

'কাঠগোলাপ' নাম শুনলে মনে হতে পারে কাঠ দিয়ে তৈরি গোলাপ ফুল। 'গোলাপ' নামটি মনে পড়লেই চোখে ভাসে কাঁটাযুক্ত গাছে রক্তিম ভালোবাসায় সিক্ত পাপড়িগুচ্ছ। কিন্তু লাল পাপড়ি ও কাঁটা ছাড়াও সুবিশাল উঁচু গাছেও ধরে গোলাপ। বলছিলাম পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি বন্দে আলী মিয়া মুক্তমঞ্চের সাদার ওপর লাল (লালচে গোলাপি) পাপড়ি ও কাঁটাবিহীন কাঠগোলাপ।

গোলাপের সঙ্গে ফুলটির কোনো সম্পর্ক নেই। তাও অধিকাংশ লোক ফুলটিকে কাঠগোলাপ নামেই চেনে। তবে যতদূর জানা গেছে ফুলটি করবী বংশোদ্ভূত। নাম কাঠকরবী। লোকের মুখে মুখে ফুলটি কাঠগোলাপ নামে পরিচিতি পেয়েছে। কাঠকরবী বললে কেউ চেনে না'।

গাছটি সারা বছর পাতাহীন থাকে। কিন্তু বর্ষার ছোঁয়ায় গাছটি যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। সবুজ পাতা ও সাদার ওপর লাল (লালচে গোলাপি) ফুলের ছোঁয়ায় উৎফুলস্ন গাছটি। যেটি দূর থেকে নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। এই কাঠগোলাপের কথা মনে হলেই মনে পড়ে যায় অর্ণবের সেই বিখ্যাত গান 'কাঠগোলাপের সাদার মায়া মিশিয়ে দিয়ে ভাবী, আবছা নীল তোমার লাগে ভালো।'

এ ফুল নানা রঙের হয়। কোনোটি দেখতে ধবধবে সাদা, কোনোটি সাদা পাপড়ির ওপর হলুদ দাগ, আবার কোনোটি লালচে গোলাপি রঙের। দূরে বা কাছ থেকে এসব বাহারি কাঠগোলাপ সহজেই নজর কাড়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের। কাঠগোলাপের সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে ফটোসেশন করতেও দেখা যায়।

কাঠগোলাপ মূলত প্রশান্ত মহাসাগরের গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের ফুল। এটি মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকা, ক্যারিবীয় অঞ্চল, ভেনিজুয়েলা ও দক্ষিণ ভারত হয়ে এ দেশে থিতু হয়েছে। এই উদ্ভিদটির রয়েছে অসংখ্য প্রজাতি। যদিও আমাদের দেশে গুটিকয়েক ভ্যারাইটি যেমন- পস্নুমেরিয়া রুব্রা, পস্নুমেরিয়া অ্যালবা, পস্নুমেরিয়া অবটুজা ও পস্নুমেরিয়া পুডিকাই বেশি দেখা যায়। প্রজাতিভেদে গাছের উচ্চতা ৮/১০ ফুট হতে পারে। গাছের পাতার গড়নও বিচিত্র ধরনের। পস্নুমেরিয়া রুব্রার পাতার কিনারা সুচালো, পস্নুমেরিয়া অবটুজার পাতা গোলাকার ও পস্নুমেরিয়া পুডিকার পাতা চামচ আকৃতির। অনেকের মতে, পস্নুমেরিয়া রুব্রা ও পস্নুমেরিয়া অবটুজার সংকরায়নের মাধ্যমে প্রথম হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফারহানা শান্তা বলেন, মেঘলা দিন। বাইরে হালকা বৃষ্টি হচ্ছে! মুক্তমঞ্চে হাঁটতে গিয়ে দেখি লালচে গোলাপি রং ছড়িয়ে যেন সবাইকে নিজের রঙের মহিমায় বেঁধে রাখতে চায়। ছোট্ট একটা ফুল, কী মায়া, কী স্নিগ্ধতা! কাঠগোলাপের এই দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্য যেন পুরো ক্যাম্পাসকেই বিমোহিত করে রাখছে।'

কাঠগোলাপ গাছে সারা বছর ফুল ফোটে। তবে গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শরৎকালে গাছ ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। অঞ্চলভেদে এ ফুল কাঠচাঁপা, গরুড়চাঁপা, গুলাচ, গুলাচিচাঁপা, গোলাইচ, গোলকচাপা, চালতাগোলাপ ইত্যাদি নামে পরিচিত। দেখতে দুধের মতো সাদা, কোনোটি সাদা পাপড়ির ওপর হলুদ দাগ, আবার কোনোটি লালচে গোলাপি রঙের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাশেদ স্বস্তি বলেন, কাঠগোলাপ আমাদের এই সময়ের হঠাৎ বিখ্যাত হয়ে যাওয়া একটি ফুল! ব্যাপারটা আমার কাছে ঠিক ওই আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো! কিছুদিন আগেও এই দেবীসত্তাকে নিয়ে এতটাও মাতামাতি ছিল না।

তবে শেষ পর্যন্ত এই মুক্তমঞ্চের পাশের এই কাঠগোলাপটা দেখলে নিজেও কেমন যেন একটু আবেগী হয়ে যেতে

ইচ্ছে করে! মনে হয় যেন থাক না, কাঠগোলাপটা তো

বেশ প্রণয়িনী!

কাঠগোলাপগাছে অল্প-বিস্তর ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। কাটিং, অঙ্গজ প্রজনন ও বীজ থেকে এই গাছের বংশবিস্তার হয়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে