সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব এখন আমাদের নিত্যসঙ্গী। এসব ছাড়া আমরা আমাদের জীবন কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু এসবের অপব্যবহার আমাদের একটি অসীম অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই এর থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে 'সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে তারুণ্যের অপব্যবহার' শিরোনামে তরুণদের মতামত নিয়েছেন- শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী -মো. আশরাফুল ইসলাম
নতুনধারা
  ১২ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সময় হত্যার রসদ

গত শতাব্দীর শেষদিকে ইন্টারনেট প্রযুক্তি একটা পরিণত পর্যায়ে এসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর আবির্ভাব ঘটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মূলত মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপকারিতার সঙ্গে রয়েছে নানা রকম অপকারিতা।

আমাদের দেশে প্রতি ১২ সেকেন্ডে ১ জন করে ফেসবুক ব্যবহারকারী যুক্ত হচ্ছে যা দেশের জন্মহার এর চেয়েও বেশি। এই তথ্য বিশ্লেষণ করলে সহজেই অনুমান করা যায় যে তরুণ প্রজন্ম ফেসবুক তথা সোশ্যাল মিডিয়ায় কতটা আসক্ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণেই সমাজ আজ যান্ত্রিকতায় পরিপূর্ণ।

মানুষের সঙ্গে মানুষের দূরত্ব বৃদ্ধি করা, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা বাড়িয়ে দেওয়া, আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতিসহ এমন কিছু নেই যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে করা হচ্ছে না। ড্রাগের আসক্তির চেয়েও সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছে এ আসক্তি।

সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন আপত্তিকর কন্টেন্ট কিশোর-কিশোরীদের মানসিকতায় অস্বাভাবিক সব পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। ফলে ছেলেমেয়ে উভয়ের দৈহিক ভাষার অস্বাভাবিক পরিবর্তনসহ অতিমাত্রায় এডরিন্যাল হ্রাস করছে।

ধর্ষণ-নারী-নির্যাতন-খুন-গুমের প্রবণতা তৈরির পেছনেও রয়েছে অন্ধকারের অনলাইন চর্চা।

প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন, 'ব্যাধিই সংক্রামক, স্বাস্থ্য নয়।' সংক্রামক ব্যাধির মতোই অপসংস্কৃতি ও অসামাজিক কার্যকলাপ ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দেয়ালজুড়ে। প্রকৃতপক্ষে সামাজিক মাধ্যম এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।

পরিশেষে বলা যায় সামাজিক যোগাযোগের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মানুষের কল্যাণ সাধন করতে পারে।

সুষ্মিতা ভট্টাচার্য্য মৌ

নৃবিজ্ঞান বিভাগ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় অনলাইনে ব্যয় করায় মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিঃসন্দেহে আশীর্বাদ; যদি অপব্যবহার না করা হয়। প্রাইভেসি বজায় রাখা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হওয়া সত্ত্বেও তরুণদের একটা বড় অংশ একান্ত ব্যক্তিগত এবং স্পর্শকাতর তথ্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে, যা পরবর্তীতে সাইবার বুলিংয়ে রূপ নিচ্ছে এমনকি অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছে।

পরিতাপের বিষয় এই, তরুণরা প্রয়োজনের চেয়ে ঢের বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করছে, যার একাধিক নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। বেশকিছু গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এর ফলে তরুণরা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ব্যবহারকারীদের শেয়ার করা তথ্য থেকে তাদের জীবনধারা কেমন তা সামনে চলে আসে। এসব পর্যবেক্ষণ করা এমন অনেক তরুণই মনে করে অন্যরা তাদের তুলনায় উন্নত এবং সুখী সময় যাপন করছে, যা হতাশা বা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পস্ন্যাটফর্মগুলোতে তরুণরা কি দেখছে এবং তাদের বানানো কন্টেন্টের বিষয়বস্তু কেমন, এ বিষয়ে আলোকপাত করা যাক। নির্দিষ্ট কোনো ঘরানার কন্টেন্ট উলেস্নখ না করে যদি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করি, তবে বলা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নিউজফিড থেকে উপভোগ করা কন্টেন্টের বড় অংশই শিক্ষামূলক নয়, অনেকাংশে অসুস্থ বা অসামাজিক। এ ধরনের কন্টেন্ট তৈরিতে তরুণরাই বেশি আগ্রহী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার থেকে তরুণদের বেরিয়ে আসা উচিত। আশা করছি বর্তমান এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

সুমাইয়া আক্তার

নৃবিজ্ঞান বিভাগ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।

\হতারুণ্যের ওপর ভরসা করেই

একটি দেশ স্বপ্ন দেখে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তারুণ্যের অপব্যবহার যে কোনো জাতির জন্য ভয়াবহ একটি উদ্বেগের বিষয়। বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক দিক তারুণ্যের ওপর মারাত্মকভাবে প্রভাব

বিস্তার করছে।

ইন্টারনেটের বদৌলতে, বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবীর বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থা দৈশিক গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তঃদেশীয় পরিসরে পরিব্যাপ্ত লাভ করেছে। ফলে অভিন্ন বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন দেশ অংশগ্রহণ করছে বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়; কিন্তু এই বিশ্বায়নের ফলে তারুণ্যের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিবাচক দিকের পরিবর্তে নেতিবাচক দিক গ্রহণ তা একটি উন্নয়নশীল দেশের অগ্রগতিকে রুখে দেওয়ার সামিল।

তারুণ্যে শক্তির ওপর ভিত্তি করেই একটি দেশ সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। 'তারুণ্যেই বাঁচে দেশ, তারুণ্যেই বাঁচে আশা' এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার থেকে পশ্চাৎপদ

হওয়া উচিত।

বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার এই পরিস্থিতিতে, তারুণ্যের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিবাচক দিকসমূহ ব্যবহারই আমাদের সংকট উত্তরণের পথ অনেকখানি সুগম করে দিতে পারে।

মিশন রায়

বাংলা বিভাগ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে