বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যাওয়ার্ডের রানী টেইলর সুইফট

তারার মেলা ডেস্ক
  ২৫ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
টেইলর সুইফট

মিষ্টি চেহারা; তার চেয়েও সুমিষ্ট তার কণ্ঠ। নতুন নতুন গানের মাধ্যমে ভক্তদের উন্মাতাল করা, মঞ্চে শ্রোতাদের উন্মাদ করে তোলা আর কদিন পর পরই নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা যেন নিয়মে পরিণত করে ফেলেছেন তিনি। বলা হচ্ছে, বিশ্ব সংগীতের তরুণ কণ্ঠশিল্পী টেইলর সুইফটের কথা; যিনি অতি অল্প সময়েই সারা বিশ্বের সংগীতপ্রেমীদের কাছে অতি পরিচিত একটি নাম হয়ে উঠেছেন। সোনালি চুল, গাঢ় নীল চোখ আর পাতলা গড়নের টেইলরকে হঠাৎ দেখলে রূপকথার পাতা থেকে উঠে আসা পরীদের মতোই মনে হয়। রূপকথার আবেশ থাকে তার প্রতিটি গানের কথা জুড়ে। এক নতুন দিন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা আর নতুন প্রতিজ্ঞার কথাই থাকে তার প্রতিটি গানের কথায়। মাত্র ২৮ বছরের জীবনেই টেইলরের আকাশছোঁয়া খ্যাতি, অঢেল অর্জন আর পৃথিবীজোড়া কোটি ভক্তের ভালোবাসা প্রাপ্তি। এরই মধ্যে বগলদাবা করেছেন বিশ্ব সংগীতের বাঘা বাঘা সব পুরস্কার। শুধু তাই নয়, সংগীত জগতে একের পর এক রেকর্ড ভেঙেই চলেছেন এই শিল্পী। ২২ নভেম্বর বাংলাদেশ সময় সকাল সাতটায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসের মাইক্রোসফট থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হওয়া আমেরিকান মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (এএমএ)-এ সেরা ফেবারিট নারী পপ আর্টিস্ট ও সেরা ফেবারিট অ্যালবামের জন্য দুটি পুরস্কার অর্জন করেন টেইলর সুইফট।

এর আগের সপ্তাহে একদিনে দুই রেকর্ড ভাঙলেন এ তারকা। তার অ্যালবাম 'রেড টেলরস ভার্সন' প্রকাশের মাধ্যমে মিউজিক স্ট্রিমিং পস্ন্যাটফর্ম স্পটিফাইতে ভেঙেছেন তিনি। অ্যালবামটি স্পটিফাইয়ের ইতিহাসে কোনো একদিনে সর্বোচ্চ শোনা নারী শিল্পীর অ্যালবামের রেকর্ড গড়েছে। পাশাপাশি স্পটিফাইয়ের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ স্ট্রিম হওয়া নারী শিল্পীর রেকর্ডও গড়েছেন সুইফট। জানা গেছে, মাত্র একদিনে ৯০.৮ মিলিয়ন বার শোনা হয়েছে টেইলর সুইফটের 'রেড টেলরস ভার্সন' অ্যালবামটি। আর শুক্রবার একদিনে টেইলর সুইফটের সব গান মিলিয়ে শোনা হয়েছে ১২২.৯ মিলিয়নের বেশিসংখ্যক বার। এর আগে, টেইলর ২০২০ সালে তার প্রকাশিত অ্যালবাম ফোকলোরের জন্য স্পটিফাইতে গড়ে ছিলেন রেকর্ড। নিজের গড়া রেকর্ডই ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছেন টেইলর সুইফট। আধুনিক পপ মিউজিকে অন্যতম পরিচিত এক নাম টেইলর সুইফট। মার্কিন এই গায়িকা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পপ সংগীত সাম্রাজ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। টেইলর সুইফট শুধু যে গাইতে পারেন তা নয়, তিনি গানও লেখেন। একইসঙ্গে গিটার, পিয়ানোর মতো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন। তার ঝুলিতে অ্যাওয়ার্ডের পরিমাণও কম নয়।

টেইলর অ্যালিসন সুইফট ১৯৮৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর পেনসিলভানিয়ার রিডিংয়ে জন্ম নেন। ছোটবেলা কাটে উয়্যামিসিংয়ের অনতিদূরে তার পারিবারিক ক্রিসমাস ট্রি ফার্মে। বাবা স্কট কিংসলে সুইফট ও মা আন্দ্রিয়া ফিনলের আদরের মেয়ে টেইলরের ওপর তার অপেরা শিল্পী নানী মেজরি ফিনলের যথেষ্ট প্রভাব ছিল। তবে সংগীতের মূল প্রভাবটা টেইলর পান প্যাস্টি ক্লাইন, ডলি পার্টন, লে অ্যান রাইমস, শানিয়া টোয়াইন ও ডিক্সি চিকসের মতো নামকরা সব শিল্পীদের কাছ থেকে। টেইলরের নামটিও 'টেইলর' রাখা হয় প্রখ্যাত আমেরিকান শিল্পী, গীতিকার ও গিটারিস্ট জেমস টেইলরের নামানুসারে। সংগীতের প্রতি তীব্র আকর্ষণ যে তার পরিবারে বরাবর বিরাজমান ছিল, তা বলাই বাহুল্য। কান্ট্রি মিউজিক দিয়েই টেইলরের সংগীত সাধনা শুরু। কান্ট্রি মিউজিক হলো আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলে উদ্ভূত এক ধরনের পপুলার মিউজিক, যাতে নৃত্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কোনো লোকগাথা বা গল্প বর্ণিত হয়। বাঁশি, ব্যাঞ্জো, গিটার ও বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার হয় এতে। ১০ বছর বয়স থেকেই টেইলর সুইফট বিভিন্ন স্থানীয় অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করতেন। লে অ্যান রাইমসের 'বিগ ডিল' গেয়ে একটি লোকাল ট্যালেন্ট প্রতিযোগিতা জিতে নেন তিনি। ১২ বছর বয়সেই তিনি গিটারের তারের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। একই সময়ে গান লিখতেও শুরু করেন ছোট্ট টেইলর। টেইলরের মেধার দু্যতি যেন ঠিকরে বেরুচ্ছিল। তার সম্ভাবনাকে অবজ্ঞা করেননি তার বাবা মা। যথেষ্ট প্রেরণা তারা দিয়েছেন, সেই সঙ্গে বিভিন্ন ক্যাম্পেইনে অংশ নিতে ও বিভিন্ন রেকর্ডিং লেবেলে ইন্টারভিউ দিতে সাহায্য করেন। সেই ১১ বছর বয়স থেকেই বাড়িতে তৈরি টেপ নিয়ে টেইলর ন্যাশভিলে যাতায়াত শুরু করেন। ২০০৬ সালের অক্টোবরে বের হয় 'টেইলর সুইফট' নামে টেইলরের প্রথম অ্যালবাম। এই অ্যালবামটি বিলবোর্ডে ৫ম স্থান দখল করে নেয় আর এর গানগুলো ১৫৭ সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে। ১৬ বছরের টেইলর এরপর নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করতে থাকেন নানা জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে। এর মধ্যে 'আওয়ার সং' গানটির মাধ্যমে টেইলর কোনো প্রথম স্থান দখল করা কান্ট্রি সং-এর সবচেয়ে কমবয়সি গায়িকা ও গীতিকার হিসেবে পরিচিত হন। এরপর একে একে আসতে থাকে টেইলরের অনবদ্য একেকটি অ্যালবাম। ২০০৮-এ আসে তার 'ফেয়ারলেস'। কান্ট্রি মিউজিকের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অ্যাওয়ার্ড অর্জন করে অ্যালবামটি। একই সঙ্গে আমেরিকা, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের মিউজিক চার্টে প্রথম স্থান দখল করে নেয় এটি। এই অ্যালবামের 'লাভ স্টোরি' টেইলরের প্রথম স্থান দখলকারী একক বা সিংগেল হয় অস্ট্রেলিয়ায়। টেইলরের তৃতীয় অ্যালবাম 'স্পেক নাউ' আসে ২০১০-এ। এর সবগুলো টেইলরের নিজের লেখা। এটিও প্রকাশিত হওয়ার পরপরই আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডে চার্টের প্রথম স্থান দখল করে। নিজের রাজ্যে অদ্বিতীয় হয়েই যেন এসেছিলেন টেইলর সুইফট। রেকর্ড ভাঙার, নতুন রেকর্ড গড়ার আর প্রথম স্থান নিজের দখলে রাখার ধারা অব্যাহত থাকে তার পরবর্তী অ্যালবামগুলোর মধ্যে দিয়ে। এর মধ্যে ২০১২ সালে 'রেড', ২০১৪ সালে '১৯৮৯', ২০১৭ সালে 'রেপুটেশন' অ্যালবামগুলোই সাফল্যের শীর্ষে

অবস্থান করে। এছাড়া নিজের অভিনীত মিউজিক ভিডিওগুলোও

টেইলরের অভিনয় প্রতিভার অনন্য নিদর্শন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে