শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

এখনো প্রাণোচ্ছল আফজাল

অভিনয় জগতের কিংবদন্তি এক অভিনেতার নাম আফজাল হোসেন। মঞ্চ, টেলিভিশন কিংবা চলচ্চিত্র- এক কথায় অভিনয়ের সব জায়গাতেই তিনি প্রাণবন্ত। অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তাকে চিরসবুজ অভিনেতা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই বরেণ্য অভিনেতা শুধু অভিনয়েই নন, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নানা আঙিনার সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন তিনি। নির্মাতা, চিত্রশিল্পী, লেখক, ফটোগ্রাফার হিসেবেও তিনি প্রশংসিত। বিজ্ঞাপনী ইন্ডাস্ট্রিতেও তিনি এক অনন্য নাম। আলোঝলমলে ক্যারিয়ারে এখনো তিনি সমুজ্জ্বল। তাকে নিয়ে লিখেছেন- মাসুদুর রহমান
  ১৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
এখনো প্রাণোচ্ছল আফজাল

সময়ের পালা বদলে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটলেও এতটুকুনও যেন বদলায়নি আফজাল হোসেন। আগের মতোই প্রাণোচ্ছল তিনি। এখনো লাইট-ক্যামেরায় সামনে দাঁড়ান স্বতঃস্ফূর্তভাবে। সাবলীল অভিনয়ে মগ্ন হন অবিরাম। তারই ধারাবাহিকতায় আফজাল হোসেন ফেব্রম্নয়ারি মাসে শেষ করেছেন 'একা' নামের আরেকটি সিনেমার কাজ। গত বছরের ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল এর শুটিং। ফরিদুর রেজা সাগরের 'একা' গল্প অবলম্বনে এটি পরিচালনা করেছেন সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী। একাকিত্বের গল্প নিয়ে এই সিনেমায় নন্দিত অভিনেতা আফজাল হোসেনের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন দীপা খন্দকার। আফজাল হোসেন জানান, সিনেমায় তাকে দেখা যাবে সিন্ধু চরিত্রে। অভিনেতা বলেন, 'ঘটনাচক্রে একদিন সিন্ধু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তারপরও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। তবে তার স্বপ্ন ফানুসের মতো মাটিতে পড়ে যায়। এই চরিত্রে অনেক বাঁক রয়েছে- যা দর্শক পর্দায় দেখতে পারবেন।' পরিচালক সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী জানান, এই সিনেমায় তথাকথিত নায়ক-নায়িকা নেই। আছে কিছু চরিত্র। গল্প, শিল্পীদের অভিনয়। রাজধানীর ধানমন্ডি, কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া, রাজেন্দ্রপুরের নক্ষত্রবাড়ীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরে সিনেমাটির দৃশ্যধারণ শেষ হয়েছে। শুরুতে সিনেমার নাম ছিল 'অপরাজেয়'। পরে নাম পাল্টে রাখা হয়েছে 'একা'। এতে আরও অভিনয় করেছেন তাহমিনা অথৈ, ঝিলিক জান্নাত প্রমুখ। এর আগে আফজাল হোসেন শেষ করেছেন 'মানিকের লাল কাঁকড়া' সিনেমার কাজ। এটি নির্মাণ করছেন আফজাল। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে এটি। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুটিং শুরু করলেও করোনার কারণে আটকে যায় এর কাজ। অবশেষে গত বছরের শেষ দিকে এর কাজ শেষ হয়। 'মানিকের লাল কাঁকড়া' চলচ্চিত্রে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস ও সোহানা সাবা। এদিকে সরকারি অনুদানের 'যাপিত জীবন' নামে আরেকটি সিনেমায় কাজ করছেন আফজাল। দেশভাগ ও ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নিয়ে এর গল্প। সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাটি পরিচালনা করছেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। সিনেমার চিত্রনাট্য করেছেন অনিমেষ আইচ ও ইমতিয়াজ হৃদয়। এ সিনেমায় আফজাল হোসেনের বিপরীতে দেখা যাবে রোকেয়া প্রাচীকে। এই সিনেমাটির শুটিং প্রায় শেষ দিকে। রোজার আগেই এর কিছু অংশের শুটিং হবে নারায়ণগঞ্জের পানামা সিটিতে। ঈদের পর টানা শুটিংয়ে শেষ হবে এর কাজ। আফজাল হোসেন অভিনয় করছেন সোবহান চরিত্রে; অন্যদিকে রোকেয়া প্রাচী আফসানা চরিত্রে। আফজাল হোসেন বলেন, 'এ ?সিনেমার নির্মাণ কাজটা বেশ চমৎকারভাবে এগোচ্ছে। গল্পটা যেমন পারিবারিক, সিনেমা নির্মাণের পরিবেশটাও পারিবারিক। কাজ করেও ভীষণ ভালো লাগছে।'

সম্প্রতি কামরুল ইসলাম রিফাতের চলচ্চিত্র 'ওয়ান ইলেভেন'-এ যুক্ত হয়েছেন আফজাল হোসেন। যেখানে এই বরেণ্য অভিনেতাকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে। 'ওয়ান ইলেভেন'র গল্প হুমায়ুন কবির বিশ্বাসের। সংলাপ মোজাফফর হোসেনের। আর চিত্রনাট্য সংশোধন ও পরিমার্জন করেছেন চলচ্চিত্রকার যুগল নূরুল আলম আতিক ও মতিয়া বানু শুকু। গত কয়েক বছরে অভিনয়ের নতুন মাধ্যম ওটিটিতেও আফজাল হোসেনের বিচরণ শুরু হয়েছে। প্রথম সিরিজ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর 'লেডিস অ্যান্ড জেন্টলমেন'। শুরুতেই বাজিমাত করেন তিনি। নেতিবাচক চরিত্রের আফজাল হোসেনের অভিনয় দেখে সবাই এক ব্যাক্যে বলছিলেন, এ এক অন্য আফজাল হোসেন। এরপর তাঁকে 'পেট কাটা ষ', 'কারাগার'-এর মতো সিরিজেও দেখা গেছে। ৪ নভেম্বর ওটিটি পস্ন্যাটফর্ম হইচইয়ে প্রকাশ হয়েছে অমিতাভ রেজা চৌধুরী পরিচালিত 'বোধ' ওয়েব সিরিজটি। এতে আফজাল হোসেনের অসাধারণ অভিনয় বেশ প্রশংসিত হয়। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আলমগীর হোসেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।

আফজাল বলেন, 'আমি ১৯৭৪/৭৫ থেকে অভিনয়ের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত। অভিনয় আমার ভালোলাগে, অভিনয়কে উপভোগ করি। আমি কখনো কোনো কিছুই ভেবে বা প্রাপ্তির আশায় করি না। আমার যা যা ভালো লাগে তাই করি। সেটা অভিনয়, নির্মাণ, চিত্রকর্ম, লেখা যাই হোক না কেন। একেবারেই ভালোলাগা থেকে করা। প্রশংসা পাওয়ার জন্য অভিনয় করি না। প্রতিটি মানুষের ধরন আলাদা হয়। আমার ধরন হচ্ছে- কাজগুলো আমি উপভোগ করি। অভিনয়ও খুব উপভোগ করি।'

টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে বেশ জনপ্রিয় হলেও আফজাল হোসেনের অভিনয় জীবনের শুরু মঞ্চে। চারুকলায় পড়ার সময় ঢাকা থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চে কাজ শুরু করেন তিনি। সত্তরের দশকের শেষ দিকে টেলিভিশন জগতে প্রবেশ তার। আশির দশকে হয়ে ওঠেন টেলিভিশন নাটকের জনপ্রিয় এক নাম। ১৯৮০ সালে প্রচারিত 'রক্তের আঙ্গুরলতা' টেলিভিশন নাটকে তিনি নিয়ে আসেন নতুন ধারা, নতুন ভাবনা। 'পারলে না রুমকি' নাটকটি বিটিভির নাটকের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে আজও। মডেলিং ও বিজ্ঞাপন চিত্রকে শিল্প পর্যায়ে উন্নীত করেছেন এই তারকা। বর্তমানে বিজ্ঞান নিয়ে কোনো কাজ করছেন না বলে জানান এই অভিনেতা। তিনি বলেন, 'কোনো কাজেই আমার তাড়াহুড়ো নেই। 'মানিকের লাল কাঁকড়া'র শুটিং শেষ হলেও আরো কিছু কাজ বাকি আছে। এটা শেষ করে নতুন কিছু নিয়ে ভাবব।'

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তির এই সময়ে দেশে এখন দুই ডজনেরও বেশি টিভি চ্যানেল। পাশাপাশি রয়েছে ইউটিউব চ্যানেল। বছর জুড়ে এসব চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে সহস্রাধিক নাটক। টেলিভিশন নাটকের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আফজাল বলেন, 'আগের মতো মেধাবী নাট্যকার, শিল্পী ও মেধাবী নির্মাতা সবই রয়েছেন, শুধু নেই ডেডিকেশন ও একাগ্রতা। সবাই অল্পতেই জনপ্রিয় হতে চান। ফেসবুকের লাইক-কমেন্ট পেয়ে মনে করেন তারকা হয়ে গেছেন। এখন দেশে এত এত তারকা! তারা নিজেরা যেমন নষ্ট হচ্ছেন তেমনি নষ্ট করছেন তাদের চারপাশ।'

নন্দিত অভিনেতা আফজাল হোসেনের রুচিবোধ, পোশাকের স্টাইল, নিজেকে উপস্থাপনের ভঙ্গি সবই অনুকরণীয় নবীনদের কাছে। আজও তরুণদের ফ্যাশন আইকন হিসেবে অনুসরণীয় রয়েছেন আফজাল হোসেন। ৬৮ বছর বয়সে এসেও চমকে দিলেন তিনি। সম্প্রতি আফজাল হোসেনের বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করেন রায়নো আরিয়ান খান নামের এক ব্যক্তি। মুহূর্তেই সেসব ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিগুলো দেখলে প্রথমে কারো বিশ্বাসই হবে না কিছুদিন পরেই ৬৯ বছরে পা রাখবেন আফজাল হোসেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে