শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্টেজ কন্যা কর্নিয়া

মাতিয়ার রাফায়েল
  ৩০ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
জাকিয়া সুলতানা কর্নিয়া

তরুণ প্রজন্মের আলোচিত ও ব্যস্ত কণ্ঠশিল্পী জাকিয়া সুলতানা কর্নিয়া। ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে পপ, ফোক, রোমান্টিকসহ প্রায় সব ধরনের গান করেন। মিক্সড, ডুয়েটসহ পেস্ন-ব্যাকও করেছেন অনেক। কণ্ঠ দিয়েছেন আইটেম গানেও। শেখ সাদী খান, আসিফ আকবর, বেলাল খান, আরফিন রুমিসহ অনেক জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে গান করেছেন। ছায়ানটে শিক্ষা নেওয়া কর্নিয়া ওস্তাদ সঞ্জীব দের কাছে ক্ল্যাসিকসহ সব ধরনের গানের তালিম নিয়েছেন।

বর্তমানে গান পিপাসু তরুণ প্রজন্মের খুব আগ্রহের কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে দ্রম্নত লাইম লাইটে চলে আসা জাকিয়া সুলতানা কর্নিয়াকে এখন প্রথম সারিতেই রাখতে হয়। কারণ যেখানেই স্টেজ শোতে তার নাম ঘোষণা করা হয় শ্রোতা ও দর্শকের সাড়া থেকে এটাই বোঝা যায়। বাংলাদেশের হট গায়িকা এখন জাকিয়া সুলতানা কর্নিয়া। স্টেজের কেন্দ্রীয় আকর্ষণই এখন কর্নিয়া। দর্শকের আকর্ষণের দিক থেকে সেজন্য তাকে স্টেজ কন্যাও বলা যায়।

২০১২ সালে সঙ্গীত বিষয়ক রিয়েলিটি শো 'পাওয়ার ভয়েস' থেকে তার উঠে আসা। গানের শ্রোতাদের কাছে যিনি কর্নিয়া নামেই বেশি পরিচিত। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কর্নিয়ার তার গানের মাদকতা ও উদ্দামতা দিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে আসছেন। এরই মধ্যে বেশ কিছু শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগ্রহের তালিকায় রয়েছে 'শাকালাকা মন'। গানটিতে কর্নিয়া নেচে গেয়ে যেমন পারফর্ম করেছেন এক কথায় যে কারো জন্যই হবে সেটা দারুণ মাদকীয় অভিজ্ঞতার। এ ছাড়া তার অন্যান্য শ্রোতাপ্রিয় গানের মধ্যে আছে- পাওয়ার স্টোর, তোমার হাসি, একবার ছুঁয়ো যা হৃদয়, কি করে তোকে বুঝাই, এলোমেলো জীবন, মেঘ বলছি, যত ভালোবাসি, তারায় তারায়, মন খারাপের দিন, বাংলাদেশ, হিরো, বৈশাখের গান, প্রেমের খেলা, লাগ ভেলকি, তোমায়, তুই সে ভালো থাক- প্রভৃতি। এখন নতুন কোনো গান করেছেন কিনা জানতে চাইলে কর্নিয়া বলেন, 'দুটি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে। তবে এ নিয়ে এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। চূড়ান্ত হলে বিষয়টি নিয়ে আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব। এ ছাড়া ঈদের আগে ও পরে ঢাকার বাইরে স্টেজ শো আছে। এর মধ্যেও রোজার আগে বেশ কয়টি স্টেজ শো করেছি।'

দর্শকের চাহিদা দেখে অনেক ধরনের গানই করেন তিনি। যে গান হয়তো তার নিজের কাছেই পছন্দ নয়, কিন্তু নিজের কাছে যে গানগুলো পছন্দের, দর্শকের সবাইর কাছে পছন্দ নাও হতে পারে এমন গানগুলো কী করেন? এমন কথায় কর্নিয়া বলেন- 'আমার নিজের কাছে যে গানটি পছন্দ সেটিই আমার ইউটিউবে রাখি। আমি মনে করি, এটা একটা স্বাধীনতা। যদিও সে গান দর্শক-শ্রোতার কাছে আলোচিত নাও হতে পারে। তারপরও ইউটিউবে এসব গান প্রকাশ করি- কারণ সেটা আমার পরিবারের ভালো লাগবে। আমার প্রিয়জনদের ভালো লাগবে। যারা আমার একান্ত শ্রোতাকুল তাদের কাছে ভালো লাগবে।'

যেসব শিল্পী একটু আলোচনায় আসেন তাদের প্রায় সবাইকেই দেখা যায় ইউরোপ-আমেরিকা অথবা দুবাই-ভারত প্রভৃতি দেশে পারফর্ম করতে যান। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেল এখন পর্যন্ত কর্নিয়া বিদেশের কোনো স্টেজে পারফর্ম করেননি এটা শুনলেও যে কোনো গানপিপাসু অবাক হবেন। কিন্তু বাস্তবতা তা-ই। তবে কি এ নিয়ে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন? এ প্রসঙ্গে এমন প্রশ্ন করা হলে জাকিয়া সুলতানা কর্নিয়া বলেন, 'এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের বাইরে কোনো গানের প্রোগ্রাম করা হয়নি আমার। অনেকে তো নিজস্ব উদ্যোগেই একা একা বাইরে গিয়ে গান করেন। আমি একা দেশের বাইরে যাইতে চাই না। যদি নিজের কিছু মিউজিশিয়ান নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে আমার বিদেশে যেতে সমস্যা নেই।' তবে তার মধ্যে কোনো রক্ষণশীলতা ক্রিয়া করে নয়তো অন্য মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে গাইতে সমস্যা কোথায়- এমন প্রশ্নেও কর্নিয়া সাফ সাফ জবাব দেন- 'আমি আসলে যে কোনো ছেলে কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে কাজ করি না। যাদের আমি চিনি, যাদের ভয়েস আমার ভালো লাগে, যাদের ভয়েস আমার সঙ্গে মানানসই হবে বলে মনে করব আমি তাদের সঙ্গে কাজ করি এবং তাদের সঙ্গে কাজ করতে স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করি।'

এখন তো অনেক কণ্ঠশিল্পী নিজে গান লেখেন এবং সুর দেন এ নিয়ে কর্নিয়ার কোনো আগ্রহ আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, 'আমি সুর করি কিন্তু লিখতে পারি না। কিছু গানের সুরও করেছি, ইচ্ছা আছে সেগুলো সুযোগ পেলে পরে প্রকাশ করার। আমার সুর করা কোনো কাজ এখনো শ্রোতারা শোনেনি। তবে শিগগিরই শ্রোতারা আমার করা সেই সুর শুনতে পারবে।'

মায়ের কাছে গানের হাতে খড়ি নেওয়া জাকিয়া সুলতানা কর্নিয়া শুধু গানের ক্যারিয়ারেই নয় পড়াশোনার ক্যারিয়ারেও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। মাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ, উচ্চমাধ্যমিক পড়াশোনা করেছেন আইডিয়েল কমার্স কলেজে এবং বিবিএ সম্পন্ন করেছেন ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে।

কলাবাগানের লেক সার্কাস ডলফিন গলিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন 'ইন্সপায়ার মিউজিক একাডেমি ও ইন্সপায়ার মিউজিক স্টুডিও'। এটা যে কোনো বয়সের মানুষ সঙ্গীত বিষয়ক শিক্ষা নিতে পারার উপযোগী করে খোলা হয়েছে। ভোকাল ট্রেনিং থেকে শুরু করে ড্রাম, পিয়ানো, গিটারসহ অন্যান্য যন্ত্র বাজানো শেখানো হয় এখানে। এ নিয়েই এখন সব ধ্যান-জ্ঞান ও স্বপ্ন কর্নিয়ার।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে