শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

গানচিত্রের সফল শিল্পী

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৮ জুন ২০২৩, ০০:০০
ইমরান মাহমুদুল

ক্যাসেট, সিডির যুগ অবসানের পর এখন অনলাইন ভিডিও শেয়ারিং পস্ন্যাটফর্ম সময়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ইউটিউবকে বেছে নিয়েছেন শিল্পীরা। ইউটিউবে প্রকাশের পরই যে গান ছড়িয়ে যায় বিশ্বজুড়ে। বিশ্বজুড়ে যেখানেই বাংলা ভাষাভাষী আছেন শুনছেন তাদের গান। ফলে এই পস্ন্যাটফর্মে যে গানটির ভিউ বেশি সেই গানই শোনা যায় শ্রোতার মুখে মুখে। তেমনই একটি গানের মিউজিক ভিডিও ৫০ মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করেছে। অর্থাৎ ৫ কোটি দর্শক-শ্রোতারা গানটির ভিডিও দেখেছেন এবং শুনেছেন। বাংলাদেশি একটি মিউজিক ভিডিওর জন্য এটা অবশ্যই একটা রেকর্ড। আর এই রেকর্ডটি করেছেন হালের জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ২০০৮ সালে চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠের মঞ্চ থেকে উঠে আসা ইমরান মাহমুদুল। সময়ের পরিক্রমায় যিনি এখন মিউজিক ভিডিওর একচ্ছত্র শিল্পী হয়ে উঠেছেন।

গানটি ইমরান তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৫ সালে ৫ এপ্রিল তার গাওয়া 'বলতে বলতে চলতে চলছে' গানটির ভিডিও প্রকাশিত হয়। আরেক সঙ্গীতশিল্পী শফিক তুহিনের কথায় গানটির সুর ও সঙ্গীত করেছেন শিল্পী ইমরান নিজেই। গানটির ভিডিও চিত্র নির্মাণ করেছেন আশিকুর রহমান। মডেল ছিলেন ছোটপর্দার তানজিন তিশা।

এভাবেই হালে পুরুষ বিভাগের গানে যেন প্রায় একতরফাই হয়ে উঠেছেন ইমরান মাহমুদুল। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের সুপারস্টার গায়ক। ২০১১ সালে 'স্বপ্নলোকে' নামক একক অ্যালবাম দিয়ে তার একক মৌলিক গান গাওয়া শুরু করেন। ২০১৩তে 'তুমি' এবং ২০১৫তে 'বলতে বলতে চলতে চলতে', ২০১৬তে 'মন করিও' ও 'বাহুডোরে' নামক আরও চারটি একক অ্যালবামে নিজের মৌলিক গান প্রকাশ করেন। চ্যানেল আই 'সেরাকণ্ঠ' থেকে উঠে আসা এ শিল্পী এরপর থেকেই আস্তে আস্তে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশি সঙ্গীতাঙ্গনে নিজের অবস্থানকে সুসংহত করে তোলেন। গান ছাড়াও তিনি তার ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে আয় করেন। সেইসঙ্গে স্টেজ পারফর্মেন্স করেও তিনি যথেষ্ট ভালো আয় করেন।

এরই মধ্যে তিনি চলে গেছেন বাংলাদেশ পেরিয়ে সীমানার ওপারেও। সেখান থেকে প্রকাশ পেয়েছে তার রোমান্টিক গানের মিউজিক ভিডিও 'তুমি কেমন করে'। যখন থেকে গানের ভুবনটি শাসন করতে শুরু করেছে মিউজিক ভিডিও। গানের সুরও বদলে যেতে থাকে মিউজিক ভিডিওর নাচ ও অভিনয়ের মাপে মাপে- সেই সময়ের গানের শিল্পী ইমরান মাহমুদুল। এই সময়ের মিউজিক ভিডিওটাকে তিনি যেন প্রায় একচ্ছত্র করে ফেলেছেন এবং সেজন্য ইমরানকে মিউজিক ভিডিওর বিশিষ্ট শিল্পী বললেও বাড়িয়ে বলা হয় না।

মিউজিক ভিডিও আসার মধ্য দিয়েই এর আগের প্রজন্মের শিল্পীরাও যেন গেলেন পিছিয়ে। পূর্ব প্রজন্মের অনেকে তো এই মিউজিক ভিডিওকে মেনেও নিতে পারছিলেন না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও যে মিউজিক ভিডিও করেছেন সেখানে মিউজিক ভিডিওর যুগোপযোগী গল্পনির্ভর বিনোদনটাও দিতে পারছিলেন না তারা। গানের সঙ্গে নিজের শরীরের অঙ্গভঙ্গিটাও যেন মেলাতে পারছিলেন না। সেখানে ইমরান মাহমুদুল নিজেকে যেন মানানসই করে নিলেন। খ্যাত হলেন মিউজিক ভিডিওর বিশিষ্ট রূপকার হিসেবে।

একপর্যায়ে মিউজিক ভিডিওর ভালো প্রভাব পড়ে পেস্ন-ব্যাকেও। মিউজিক ভিডিওর প্রভাবে পড়ে বদলে গেছে পেস্ন-ব্যাকের ধারাও। যারা মিউজিক ভিডিওতে সুনাম কুড়িয়েছেন তারাই ডাক পাচ্ছেন পেস্ন-ব্যাকে। সেদিক থেকে পেস্ন-ব্যাকও প্রায় একচেটিয়া করে নিয়েছেন ইমরান মাহমুদুল। বরেণ্য শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে 'ভালোবাসার লাল গোলাপ' নামক সিনেমায় পেস্ন-ব্যাক করার মাধ্যমে তিনি তার ক্যারিয়ারের সূচনা করেন। এরপর তার সঙ্গে জুটি হিসেবে আসছেন কখনো কোনাল কখনো কনা কখনো বা কর্ণিয়া। এছাড়া আরও অনেকে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেছেন একাধিকবার। পেস্ন-ব্যাক তো করছেনই সেইসঙ্গে সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায়ও ডাক পাচ্ছেন তিনি। একে একে এত সাফল্য এখন যেন তিনি গানের জগতে কেবলই উড়ছেনই। মিউজিক ভিডিওর দৃশ্যায়নে ধরা মেঘের সঙ্গে মেঘ হয়ে মিলিয়ে যাচ্ছিলেন নীলিমায়। কিন্তু এভাবে আর কতদূর মেঘে মেঘে উড়ে যাওয়া? পা কি আর মাটিতে নামবেই না তার!

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে