ঢাকাই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ইমেজের নায়ক বলে খ্যাত মামনুন হাসান ইমন। ব্যক্তি হিসেবে যেমন পরিচ্ছন্ন ইমেজের আবার যেসব সিনেমায় অভিনয় করেন সেগুলোও বেশ পরিচ্ছন্ন। শুরুতে মডেল, এরপর টিভিতে অভিনয় এবং বর্তমানে চিত্রনায়ক হিসেবেই ব্যস্ত এই অভিনেতা। চলচ্চিত্রের শুরুটাও হয় বেশ জাঁকজমকভাবেই। নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বহুল আলোচিত উপন্যাস 'দারুচিনি দ্বীপ' অবলম্বনে চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন আলোচিত অভিনেতা তৌকীর আহমেদ। ২০০৭ সালে এই সিনেমা দিয়ে তৌকীর আহমেদ যেমন প্রথম সিনেমা পরিচালনায় আসেন, তেমনি চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ করেন বাংলা লিঙ্ক মডেল খ্যাত ইমন। তবে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন তার তিন বছর পর ২০১০ সালে 'গহীনে শব্দ' নামের ছবিতে অভিনয় করে। এভাবে যারা ছোটপর্দা থেকে বড়পর্দার নায়ক বনে গেছেন তাদের মধ্যে এখন মামনুন হাসান ইমনও একজন আলোচিত অভিনেতা। প্রায় পনেরো বছরের অভিনয় জীবনে প্রথম দিকে খুব বেশি সিনেমায় অভিনয় না করতে পারলেও হালে তার কাজের পরিমাণ বেড়ে গেছে। চাহিদাও বাড়ছে নির্মাতাদের কাছে। ইতোমধ্যেই হাতে থাকা ও মুক্তির অপেক্ষায় থাকাসহ সবমিলিয়ে প্রায় ৫০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। অভিনয়ে ইমন পারিবারিক ড্রামার রোমান্টিক সিনেমায় অভিনয় করে যেমন পরিচিতি পেয়েছেন তেমনি অ্যাকশনধর্মী সিনেমাতেও তার ভালো বিচরণ রয়েছে। ইমন জানালেন, বর্তমানে বেশ কয়টি সিনেমায় কাজ করছেন তিনি। এর মধ্যে নতুন কয়েকটি সিনেমা ইতোমধ্যেই শেষ করেছেন বলে জানালেন ইমন। এ ছাড়া মুক্তিও পেয়েছে গত বছর তার তিনটি সিনেমা। অঞ্জন আইচ পরিচালিত 'আগামীকাল', জুলফিকার জাহেদীর 'কাগজ', সাইদুল ইসলাম রানার 'বীরত্ব'। এছাড়া অঞ্জন আইচের আরো দুটো সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানালেন ইমন। এই সিনেমার একটি রোমান্টিক প্রেমের ভৌতিক গল্পের ওপর করা সিনেমা। সিনেমাটির নাম 'আবার'। এটির গল্প ও চিত্রনাট্যও অঞ্জন আইচের। সিনেমাটিতে আমার বিপরীতে আছেন সূচনা আজাদ। আরো আছেন জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সাবেরি আলম ও খল চরিত্র হিসেবে আছেন সাঈদ বাবু। এ সম্পর্কে ইমন আরো বলেন- 'কৌতুক ও ভৌতিকতায় মেশানো এই সিনেমাটিতে একটা চমৎকার বিনোদনের খোরাক পাবেন দর্শক। অঞ্জন আইচ আমার খুব প্রিয় একজন নির্মাতা। চমৎকার গুছিয়ে কাজ করেছেন। সম্প্রতি জুন মাসে এটার শুটিং শেষ করা হয়েছে।' আরেকটি সিনেমা অঞ্জন আইচের 'কানামাছি' সম্পর্কে বলেন, এটিও চমৎকার সব লোকেশনে চিত্রায়িত একেবারেই ভিন্ন স্বাদের ইন্টারেস্টিং গল্প। ছবিটিতে আমার বিপরীতে আছেন সূচনা আজাদ। আরও অভিনয় করছেন ফারুক আহমেদ, ফারজানা ছবি, তারিক স্বপন প্রমুখ। তারপরে আবদলস্নাহ জহির বাবুর চিত্রনাট্যে কমেডিধারার একটি সিনেমা- রফিকুল আলম রকিব পরিচালিত 'বিয়ে আমি করব না'- এই ছবিটির কাজও শেষ। ছবিটিতে আমার বিপরীতে আছেন তানহা তাসনিয়া। 'সাহসী যোদ্ধা' নামে সাদেক সিদ্দিকীর সিনেমার কাজও শেষ। এই ছবিটিতে আমার বিপরীতে আছেন নায়িকা পপি। এরই মধ্যে এটার সেন্সরও সম্পন্ন হয়েছে। তবে সেন্সরে যাওয়ার আগে ছবিটির নাম বদলিয়ে 'ডাইরেক্ট অ্যাটাক' রাখা হয়। ছবিটিতে আমি একজন কাস্টম কমিশনার এবং পপি একজন ডিবি ইন্সপেক্টরের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে আছেন আমিন খান এবং শিরিন শিলা। অন্যদিকে, সৈকত নাসিরের পরিচালনায় 'আকবর' এবং ওয়াজেদ আলী সুমনের 'বস্নাড', শাহরিয়ার নাজিম জয় পরিচালিত 'পাপ কাহিনী' মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। অন্যদিকে, ওটিটিতে অভিনয় করা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ইমন জানালেন, 'আমি আসলে ওটিটিতে কাজ করার জন্য কাজ করতে চাই না। আমি দেশের এমন একজন ভালো ডিরেক্টরের সঙ্গে কাজ করতে চাই যিনি ভালো বানান, যার কাজের সুনাম আছে, যিনি আমাকে ভালো একটা চরিত্র দেবে এবং যার কাজের পস্ন্যানিং ভালো এমন কারো সঙ্গেই কাজ করতে চাই। ওটিটিতে বেশির ভাগই নাটক জাতীয় কাজ প্রকাশ পাচ্ছে। তবে কাজ ভালো হলে ওটিটি মাধ্যমেও নিয়মিত কাজ করতে চাই আমি। এরই মধ্যে এক্সপেরিমেন্টালি কয়েকটি ওয়েব সিরিজেও কাজ করা হয়ে গেছে আমার। এগুলোর মধ্যে আছে প্রথমে মাহিয়া মাহীর 'এইডা কপাল', এরপরে অনিমেষ আইচের 'বিউটি অ্যান্ড দ্য বুলেট', শাহীন সুমনের ১৫০ পর্বের দীর্ঘ ওয়েব সিরিজ 'মাফিয়া' প্রভৃতি। এ প্রসঙ্গে ইমন আরো বলেন, 'ওয়েব সিরিজ এখন সময়ের দাবি। বলিউডেও এখন এই ধারার কনটেন্ট নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। শাহরুখ থেকে সাইফ আলি- সবাই জড়িত এসব প্রজেক্টে। আমাদের দেশেও ওয়েব সিরিজের কাজ বেশ আশার সঞ্চার করেছে। কাজ করছেন এখন বেশির ভাগই তারকা শিল্পী। এসব বিবেচনায় নিয়ে আমিও অবশেষে ওয়েব সিরিজে যুক্ত হই।' অনুদানের কোনো ছবিতে কাজ করছেন কিনা জানতে চাইলে ইমন বলেন- অনুদানের ছবি বলতে 'নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়' নামে একটি শিশুতোষ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। ছবিটি এখন মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে অনুদানের সিনেমাগুলোর প্রেক্ষাগৃহ না পাওয়া কিংবা দর্শক না পাওয়া প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মামনুন হাসান ইমন বলেন, 'আসলে হয়েছে কি- অনেকেই আছেন যারা অনুদানের টাকা গ্রহণ করেন কিন্তু নামে মাত্র সিনেমা বানান। আবার অনেকে আছেন অনুদানের টাকার সঙ্গে আরও কিছু টাকা ভরে সুন্দর করে সিনেমা বানাতে চেষ্টা করেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যারা সরকারি অনুদান নিচ্ছে, তারা যা বানায় তাতে যত্নআত্তি থাকে না- নামে মাত্র সিনেমা বানায়। আমার মনে হয় সেজন্য অনুদানের সিনেমায় এমন একটা ব্যাড ইমেজ হয়ে যাওয়ায় দর্শকের মাঝেও তার প্রভাব পড়ে। সে কারণে এ ধরনের সিনেমায় দর্শক হয় না। তাই প্রেক্ষাগৃহগুলোও এ সিনেমার বুকিং দিতে আগ্রহী হয় না।