বলিউডের অন্যতম সেরা সুন্দরী নায়িকা শিল্পা শেঠি। ফ্যাশন আইকন হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তার। চলতি বছর ৪৯ বছরে পা দিয়েছেন এই 'ধারকান' খ্যাত এই নায়িকা। কিন্তু পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই বয়সে এসেও তার দৈহিক কিংবা রূপের ঝলক যেন বিন্দুমাত্র কমেনি। শিল্পা শেঠির ফিটনেস সম্পর্কে কারও অজানা নয়। ফিট থাকার জন্য নিয়ম মেনে তিনি নিজে যেমন শরীরচর্চা করেন, তেমন অনুরাগীদেরও শরীরচর্চা করার প্রেরণা জোগান। নায়িকার যোগা ও বিভিন্ন শরীরচর্চার ভিডিও এবং ছবি প্রায় সামাজিক মাধ্যমে দেখা যায়। ৫ ফুট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার দীর্ঘদেহী এই নায়িকা একাধিক ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছেন। তবে শুধু অভিনয়ই নয়, একাধিক ভাষা দুর্দান্তভাবে বলতেও পারেন এই অভিনেত্রী। হিন্দি, ইংরেজি ছাড়াও তামিল, তেলেগু, মারাঠি, গুজরাটি, কন্নড় ভাষায়ও তুখোড় তিনি। অভিনয়ের সঙ্গে নাচেও পারদর্শী শিল্পা শেঠি। হেমা মালিনী, মাধুরী দীক্ষিত, রানী মুখার্জির মতো ক্লাসিক্যাল ডান্সে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। মডেলিংকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেয়ার কারণে পড়াশোনা বেশিদূর করা হয়নি শিল্পার। জানা যায়, ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়ার পর তিনি মডেলিং শুরু করেন। এরপরের গল্পটাও হয়ত সবারই জানা আছে কম বেশি।
এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের তিন দশক পার হয়ে গেল শিল্পার। ৩০ বছরের এই দীর্ঘ চলচ্চিত্র ভ্রমণে তিনি নানা কারণে আলোচনায় ছিলেন। তবে অভিনেত্রী হিসেবে হিন্দি সিনেমার শীর্ষ কেউই হয়ে উঠতে পারেননি। ১৯৯৩ সালে 'বাজিগর' দিয়ে অভিষেক হওয়া এই তারকা বিয়ের আগে থেকেই অভিনয় কমিয়ে দিয়েছেন। হিন্দি সিনেমায় শিল্পা এখন অনিয়মিত অভিনয়শিল্পী। তবে ছোট পর্দায় তাকে নিয়ে ঠিকই চর্চা হয়। মূলত টেলিভিশনের বিভিন্ন রিয়েলিটি শোর বিচারক হিসেবে তাকে দেখা যায়। শিল্পা বলেন, 'আমি কখনোই নিজেকে হিন্দি সিনেমার শীর্ষ ১০ অভিনয় শিল্পীর একজন মনে করি না। যদিও আমি দর্শকের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। আমাদের প্রত্যেকের পথচলা আলাদা। এখন আমি সিনেমা কম করি। কিন্তু টিভি শো, পণ্যের প্রচারসহ নানা কাজে যুক্ত আছি।' এই অভিনেত্রী আরও বলেন, তিনি অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চান না। 'আগের শিক্ষা বর্তমানে কাজে লাগানো- অতীত নিয়ে এটাই আমার দর্শন। আগে কী হয়েছে না হয়েছে, সেসব ফিরে দেখতে চাই না। আমি এমন একজন, যে কিনা বর্তমানে বাস করে।'
যাই হোক, স্বামী, সংসার, সন্তান ও টিভি শো নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে অভিনয়ে অনিয়িমত শিল্পা শেঠি অনেক দিন পর আবার দর্শকের সামনে আসছেন নিজস্ব ঝলক দেখাতে। আগামীকাল শুক্রবার মুক্তি পাচ্ছে এই তারকার নতুন ছবি 'সুখী'। কমেডি ঘরানার পারিবারিক গল্পের এই সিনেমাটিতে শিল্পা শেঠি অভিনয় করেছেন একজন মধ্যবিত্ত গৃহবধূর ভূমিকায়। ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রটিই শিল্পার। যদিও এ ধরনের কেন্দ্রীয় সিনেমায় অভিনয় করতে এখন মনের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিল্পা শেঠি বলেছেন, 'সত্যিই আমি এমন প্রকল্পগুলো নিতে খুব ভয় পাই- যেখানে আমি প্রধান নায়িকা, দায়িত্ব তখন নিজের কাঁধে থাকে এবং এটি খুব বেশি চাপের। এখন একজন নায়ক কিংবা নায়িকার মূল্য নির্ধারণ করা হয় বক্স অফিস নম্বরের ভিত্তিতে। একজন অভিনয় শিল্পীর দায়িত্ব হচ্ছে তাদের কাজ এবং চরিত্রটি যথাসাধ্য ফুটিয়ে তোলা। বক্স অফিস আমাদের কতটা কমান্ড করা উচিত তার সিদ্ধান্তকারী ফ্যাক্টর হতে পারে না।'
তারপরও সিনেমাটি নিয়ে দারুণ প্রত্যাশা শিল্পার। নবাগতা পরিচালক শিখা শর্মা পরিচালিত সুখী ছবিটির এরই মধ্যে ট্রেইলারও প্রকাশ পেয়েছে। ট্রেইলারেই শিল্পা শেঠি তার অত্যাশ্চর্য অভিনয় দক্ষতা দিয়ে নেটিজেনদের মুগ্ধ করেছেন। ২ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ট্রেইলারটি একেবারে টানটান উত্তেজনায় ভরপুর। শুরুতেই কানে বাজে অভিনেত্রীর সংলাপ, 'আমার জীবন সকালের চা আর রাতের দুধে আটকে রয়েছে।' সিনেমায় শিল্পার চরিত্রটির নাম সুখী। স্বামী-সন্তান নিয়ে তার সংসার। হঠাৎ করেই একদিন ছোটবেলার বন্ধুদের ফোন আসে। দিলিস্নতে রিইউনিয়নের পরিকল্পনা করা হয়। সুখী যেতে চাইলে স্বামীর থেকে শুনতে হয় তিনি স্বার্থপর। সুখীর প্রশ্ন, 'একঘেয়ে জীবন থেকে নিজের জন্য কি একটু সময় চেয়েছি আমি স্বার্থপর হয়ে গেছি?'
শিল্পার শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি 'নিকম্মা' বক্স অফিসে সাড়া ফেলতে পারেনি। তবে 'সুখী' নিয়ে অনেক আশাবাদী এই তারকা। ভারতের অধিকাংশ মানুষের মনোভাব, বিয়ে করলেই যে কোনো মহিলার জীবন বদলে যায়। স্বামী-সন্তান-সংসার ছাড়া তার আর কোনো অস্তিত্ব থাকে না। এই বস্তাপচা ধারণা ভাঙতেই শিল্পার এই নতুন সিনেমা। শিল্পা জানান, শুরুতে ছবিটি করতে রাজি ছিলেন না। তিনি বলেন, 'এই ছবির জন্য শিখা শর্মা ও বিক্রম মালহোত্রা আমার সঙ্গে যখন প্রথমবার যোগাযোগ করেছিলেন, তখনই অন্য কাউকে নেওয়ার জন্য তাদের পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমি নিজেই তাদের চার-পাঁচজন অভিনেত্রীর নাম দিয়েছিলাম; কিন্তু শিখা ও বিক্রম নাছোড়বান্দা, আমাকে নিয়েই এ ছবি নির্মাণ করতে চান। তখন আমার মনের মধ্যে অন্য কিছু চলছিল। আমি এই ছবির জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিলাম না।'
প্রস্তাব পাওয়ার আট মাস পর 'সুখী' ছবিটি করতে রাজি হয়েছিলেন শিল্পা। তিনি বলেন, 'আমি কোথাও এক জায়গায় গিয়েছিলাম, তখন আমার স্বামীর ফোন এসেছিল। সে ফোনে বলে, 'পাগল নাকি, এই ছবি ছেড়ে দিচ্ছ।' আসলে এই ছবির চিত্রনাট্য দীর্ঘদিন ধরে টেবিলে পড়েছিল। আমি যখন বাড়ির বাইরে ছিলাম, তখন রাজ চিত্রনাট্যটা পড়েছিল। তার এই ছবির কাহিনী দারুণ পছন্দ হয়েছিল। রাজের পরামর্শে ছবিটি করতে রাজি হয়েছিলাম। 'এই ছবির চরিত্রটা এমনই- যা আমি আমার ৩০ বছরের অভিনয় জীবনে করিনি। চরিত্রটি আমার হৃদয়ের অনেক কাছের, বাস্তবঘেঁষা। আমার বিশ্বাস ছবিটি দর্শক দারুণ উপভোগ করেবন।'