বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
walton

নিজেকে ছাপিয়ে যেতে চান সুনেরাহ

মাতিয়ার রাফায়েল
  ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০
সুনেরাহ বিনতে কামাল

সুনেরাহ বিনতে কামাল- ঢাকাই চলচ্চিত্রে আবির্ভাবেই চমকে দেওয়া এক অভিনয় শিল্পীর নাম। যে শিল্পী বাংলাদেশের সিনেমায় পা রাখার শুরুতেই দর্শককে চমকে দিয়েছিলেন। এমন অভিনয় শিল্পী তো গোটা ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতেই হাতেগোনা। সুনেরাহ সেই সৌভাগ্যবান অভিনয় শিল্পীর অন্যতম। প্রথম চলচ্চিত্র 'ন ডরাই'য়ের একজন সাহসী অভিনেত্রী। ছবিটিতে অভিনয়ের সুবাদে ২০১৯ সালে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেছেন। অভিষেকেই এমন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার খুব কম শিল্পীর ভাগেই জোটে। অনেকে তো জীবনভর শত শত সিনেমায় অভিনয় করে একটিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন না। তবে এমন পুরস্কার পাওয়ার জন্য ভালো অভিনয় জানলেও হয় না। সেজন্য তার গল্পটিও হওয়া দরকার অনবদ্য, অনিন্দ্য সুন্দর। সুনেরাহ বিনতে কামালের 'ন ডরাই' নামের সেই সিনেমার গল্পটিও ছিল তাই। শুধু তাই নয়, এই সিনেমাটির পোস্টারও করা হয়েছিল এ যাবৎকালের ঢাকাই বাংলা সিনেমার যত পোস্টার হয়েছে তারমধ্যে অন্যতম সেরা পোস্টার। একটি নারীর বিয়ের শাড়ির রং ও তার সঙ্গে ফুলশয্যার চাদরের গিঁট থেকে নারীর স্বপ্নের যে কণ্ট্রাস্টরূপটি ফুটে ওঠে তা এককথায় ঢাকাই চলচ্চিত্রের পোস্টারের ইতিহাসেই অভিনব। এবার সুনেরাহর সেই সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার চার বছর পর 'অন্তর্জাল' মুক্তি পেয়েছে চলতি সপ্তাহে। দীপংকর দীপন পরিচালিত বাংলাদেশের প্রথম সাইবার থ্রিলার চলচ্চিত্র এটি। সিনেমাটির অন্যতম একটি চরিত্রের অভিনেত্রী সুনেরাহ বিনতে কামাল। ছবিটি সম্পর্কে উচ্চ আশাবাদ ব্যক্ত করে সুনেরাহ বলেন, 'এই ছবিটির মধ্যদিয়ে দর্শক আমাকে নতুন সুনেরাহকে খুঁজে পাবেন। ছবিটি মূলত টেকনোলজিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করা তরুণ মেধাবী প্রজন্ম নিয়ে। দেশের প্রথম সাইবার থ্রিলার এটি। ছবিটিতে তিনটি ট্রেন্ড রয়েছে। এতে দর্শক দেখবেন আমি পারফর্ম করেছি প্রিয়ম নামের একটি রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ার চরিত্রে। 'ন ডরাই'তে একটা র' ক্যারেক্টার ছিল, সেখানে আমার একটা পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল, মেকাপেরও ব্যাপার ছিল না। এখানে আমাকে পারফর্ম করতে হয়েছে কিছু রীতিনীতি মেনে। এখানে ট্যাকনিক্যালিই একটা নিয়ন্ত্রণে থাকতে হয়। ছবিটি এতো টেকনোলজিক্যাল, যা দর্শক আগের কোনো সিনেমাতেই পাবেন না। সব মিলিয়ে এই ছবিটি ছিল আমার জন্য একটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং। অনেক পরিশ্রমসাধ্য কাছ ছিল এটা। আমার দ্বিতীয় সিনেমা অন্তর্জালে অভিনয় করে অনেক কিছুই শিখেছি। এখন আমার পারফর্মিং যদি দর্শকের ভালো লাগে তাহলেই আমার এই পরিশ্রমকে স্বার্থক মনে করবো।' 'ন ডরাই'তে অভিনয়ের পর দীর্ঘদিন অপেক্ষা শেষে 'অন্তর্জাল' 'আসলে আমি চ্যালেঞ্জিং একটি চরিত্রের সুযোগ খুঁজছিলাম, যেখানে থ্রিলার ও অ্যাডভেঞ্চার থাকবে আর থাকবে গল্প। নিজেকে ছাপিয়ে যেতেই থ্রিলারধর্মী গল্পের এই সিনেমাটিতে অভিনয় করি। পস্নটটি একেবারেই আলাদা। সেই সঙ্গে স্টোরি টেলিং খুব ইন্টারেস্টিং। এ জন্য রোবোটিক্স নিয়ে পড়াশোনাও করতে হয়েছে আমাকে।' একজন অভিনেত্রী হিসেবে কোন ধরনের সিনেমা বেশি টানে- এমন প্রশ্নের জবাবে সুনেরাহ বলেন, 'আমি প্রচুর সিনেমা দেখি। আমার কাছে থ্রিলার সিনেমা বেশি ভালো লাগে। রোমান্টিক সিনেমাও দেখি। কারণ, আমি প্রচন্ড ইমোশনাল একটা মানুষ। অনেক সময় আমি মুভি দেখে-দেখে কাঁদিও। আমার মনে হয়, ইমোশনাল প্র্যাকটিসটাও ইমপোর্টেন্ট। মানুষের রাগ, অভিমান. ভালোবাসা, দু:খ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনা নানা ধরনের আবেগ থাকে। এর সবকিছু প্রত্যেকের থাকা উচিতও। সিনেমায় সঠিকভাবে তুলে ধরতে এগুলোর প্র্যাকটিসও ইমপোর্টেন্ট।' সুনেরাহ ছিলেন নৃত্যশিল্পী, বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে শিখেছিলেন নাচ, হয়েছেন বিটিভির তালিকাভুক্ত নৃত্যশিল্পী- এখন হয়ে গেছেন পুরাদস্তুর অভিনেত্রী। অভিনয় করছেন ওটিটি ও চলচ্চিত্রেই মূলত। ওয়েব সিরিজ হিসেবে মুক্তি পেয়েছে ভিকি জাহেদের 'শুক্লপক্ষ', মাহমুদ দিদারের 'পঁচিশ'। এছাড়া একটি শর্টফিল্ম 'মশারি', যেটির নির্মাতা নন্দিত কথা সাহিত্যিক ও চিত্র পরিচালক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদের ছেলে নুহাশ হুমায়ূন। এটা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বেশ সাড়া ফেলেছে। যে বছর 'ন ডরাই'তে অভিনয় করেছিলেন সে বছরেই এই 'মশারি'তে যুক্ত হয়েছিলেন সুনেরাহ বিনতে কামাল। এই শর্টফিল্মটিতেও নিজ অভিনয়ের জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নজর কেড়েছেন সুনেরাহ। সিনেমার পাশাপাশি ওয়েবফিল্ম বা ওয়েব সিরিজেও ব্যস্ত হওয়া প্রসঙ্গে সুনেরাহ বিনতে কামাল বলেন, 'সাম্প্রতিক সময়ে যেসব ওয়েব সিরিজ হচ্ছে সেগুলো সিনেমার আদলে নির্মিত হচ্ছে। এখন ওয়েব সিরিজ ও ওয়েব ছবির প্রতি দর্শকেরও আগ্রহ বাড়ছে। সে কারণে আমি সিনেমার পাশাপাশি ওয়েব সিরিজেও ব্যস্ত হচ্ছি। তবে আমার কাজের মূল জায়গাটিই ফিচারফিল্ম। ফিচারফিল্মের প্রতিই আমার আগ্রহ বেশি। পাশাপাশি সময় ও সুযোগ থাকলে এবং শিডিউল মেলাতে পারলেই ওটিটির হয়ে কাজ করি। তবে সেটা ওটিটির প্রজেক্টের স্ট্যান্ডার্ড বা ভিন্ন মাত্রার বিশেষ চরিত্রের উপরও নির্ভর করে।' খুব বেশি সিনেমায় অভিনয় করেননি সুনেরাহ। মাত্রই তো আলো ছড়ানো শুরু করেছেন সিনেমায়। এরমধ্যে যা অভিনয় করেছেন সবই জীবনঘনিষ্ঠ সংগ্রামী চরিত্রের। কিন্তু এখন তো ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে কমার্শিয়াল অ্যাকশনধর্মী সিনেমায়ও পরিবর্তন আসছে। এ ধরনের ছবিতে এ অভিনেত্রীকে দেখা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে সুনেরাহ বলেন, 'আমাদের প্রতিটি সিনেমাতেই পরিবর্তন আসছে। খুবই ভালো পরিবর্তন এসেছে। কমার্শিয়াল সিনেমাতেও। আমার কোনো কাজ করতে সমস্যা নেই। তবে গল্পটা লজিক্যাল হলে কমার্শিয়াল সিনেমাতেও অভিনয় করতে আগ্রহী। আমি যদি কমার্শিয়াল সিনেমা করি তাতে গ্রাফিক্স, অ্যাকটিং থেকে শুরু করে প্রতিটি শুটই লজিক্যাল হতে হবে। এ ব্যাপারে অবশ্য অবাস্তব সিনেমার কথা বলছি না। কারণ, অবাস্তব সিনেমা হতেই পারে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
shwapno

উপরে