রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নৌকার মাঝি হলেন তিন তারকা

শোবিজ তারকাদের অনেকেই রাজনীতিতে পা রেখে সফল হয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র কেনেন একঝাঁক চলচ্চিত্র শিল্পী। এর মধ্যে ছিলেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, শমী কায়সার, চিত্রনায়ক রুবেল, শাকিল খান, গায়ক এস ডি রুবেল, অভিনেতা সিদ্দিকুর রহমান, চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী ও সিমলা। তবে সর্বশেষ মনোনয়ন পেয়েছেন নন্দিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম এবং দুই বাংলার আলোচিত তারকা ফেরদৌস আহমেদ। আসাদুজ্জামান নূর ও মমতাজ দুজনেই পুরনো সংসদ সদস্য হলেও এবার তাদের সঙ্গে নতুন তারকা হিসেবে নায়ক ফেরদৌসেরও সংসদে বসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই তিন তারকাকে নিয়ে প্রতিবেদনটি লিখেছেন সাজু আহমেদ
সাজু আহমেদ
  ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের দেশের কিংবদন্তি অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর নীলফামারী-২ আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। একই আসন থেকে ২০০১, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন খ্যাতিমান এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর মন্ত্রিসভায় সংস্কৃতি বিষযয়কমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। সবশেষ, ২০১৮ সালের একাদশ নির্বাচনে তিনি একই আসন থেকে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আসাদুজ্জামান নূর গণমাধ্যমকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা যে, তিনি আবারও আমার প্রতি আস্থা রেখেছেন। আমি সব সময় জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আমার নীলফামারীর জনগণ আমাকে ভালোবাসেন। আমি এলাকার মানুষের ভালোবাসার প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করেছি, আগামীতেও করব। বিগত সময়ের আওয়ামী লীগ সরকার সারাদেশেই ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আমার এলাকাতেও সর্বত্র উন্নয়ন হয়েছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এলাকার উন্নয়নমূলক অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে চাই। দেশের সঙ্গীতাঙ্গনের তুমুল জনপ্রিয় ও ফোক সম্রাজ্ঞী হিসেবে খ্যাত মমতাজ বেগম তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। এর আগে ২০০৯ সালে সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্য দিয়ে সংসদে যাওয়ার সুযোগ পান মমতাজ বেগম। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় মমতাজ বেগম বলেন, গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছি, এবার তা চাই না। এবার জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমেই নির্বাচিত হতে চাই। বিগত দুই টার্মে আমি সব সময় জনগণে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের সুফল পেয়েছে আমার এলাকার মানুষ। সেই সূত্রে তারা আবার আমাকে নির্বাচিত করবেন। আমি আশা করি, আবার নির্বাচিত হয়ে জনগণের কাছাকাছিই থাকব। আজীবন তাদের পাশে থেকেই কাজ করতে চাই। সাধারণ মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ঢাকা-১০ আসনে নৌকা প্রতীক পেয়েছেন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতা শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। মনোনয়ন পেয়ে সহর্কর্মী ও ভক্ত-অনুরাগী ও কাছের মানুষদের শুভেচ্ছায় ভাসছেন এই অভিনেতা। মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় ফেরদৌস বলেন, 'আল্‌হামদুলিলস্নাহ, প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দিয়েছেন। তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা। অনেক ভালো লাগছে, নৌকা প্রতীকের দায়িত্ব পাওয়া অনেক গৌরবের। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনায় কাজ করতে চাই। তবে আমার নিজেরও বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। বিজয়ী হলে সেগুলো বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। পাশাপাশি চলচ্চিত্র শিল্প নিয়েও আমার বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, রুটিন কাজের বাইরে শিক্ষা নিয়েও কাজ করতে চাই। আস্তে আস্তে ভোটের কার্যক্রম শুরু করব। চেষ্টা করব সবার কাছে যাওয়ার। সবার সহযোগিতা চাই।' জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর মাঝেই কলকাতার একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ফেরদৌস। যেখানে তিনি জানিয়েছেন, নির্বাচনের খবরে টলিউডের অনেক তারকাই তাকে শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। ফেরদৌস বলেন, 'টলিউডে আমার অনেক বন্ধু রয়েছে। ঋতুপর্ণা (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) আমার খুব ভালো বন্ধু। ও তো বলেছে প্রয়োজনে ঢাকায় এসে আমার জন ভোটের প্রচারও করবে। কলকাতায় যে কান্ড ঘটিয়েছিলাম, সেটা আমি ওকে মনে করিয়ে দিই।' ২০১৯ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন; সে কথাই ঋতুপর্ণাকে স্মরণ করিয়ে দেন ফেরদৌস। এ বিষয়ে ফেরদৌস বলেন, 'কলকাতাকে সব সময়ই দেশের বাইরে আমার দেশ হিসেবে দেখেছি। সেখান থেকে প্রায় দু'বছর আমি দূরে ছিলাম। একাধিক সিনেমার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল। ওই একটা ভুলের জন্য আমাকে প্রচুর ভুগতে হয়েছে। আমি এখনো ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করি। কারণ আমি তখন নিয়মকানুন জানতাম না। কলকাতায় দীর্ঘদিন কাজের ফলে আমি দুই বাংলারই কাছের মানুষ। যারা আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন, তারাও হয়তো আবেগের বশবর্তী হয়ে বিষয়টা খেয়াল করেননি।' এবার নির্বাচন উপলক্ষে ৩ হাজার ৩৫৯ জন মনোনয়ন নিয়েছেন। সেই হিসাবে একটা আসনে ১১ থেকে ১২ জন করে আছেন। প্রত্যেকেই যোগ্য, আমার চেয়ে অনেক বেশি যোগ্য। আমার চেয়ে ত্যাগী নেতাও আছেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্বাচন করেছেন, সারা জীবনের অন্যতম একটা শ্রেষ্ঠ পাওয়া। গত সোমবার বিকাল ৪টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পাঞ্জলির মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন অভিনেতা রিয়াজ, অভিনেত্রী অজনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অভিনয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত জনপ্রিয় এ নায়ক। দলীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে থাকার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের ৭৩তম অধিবেশনেও যোগ দিয়েছিলেন এ চিত্রনায়ক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন ফেরদৌস। তবে তিনি অভিনয়কে পেশা হিসেবে বেছে নেন। 'বুকের ভেতর আগুন' সিনেমার জন্য প্রথমবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। ১৯৯৭ সালে সিনেমাটি পরিচালনা করেন ছটকু আহমেদ। এরপর ১৯৯৮ সালে অঞ্জন চৌধুরী পরিচালিত পৃথিবী 'আমারে চায় না' সিনেমার মধ্য দিয়ে এককভাবে নায়ক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। একই বছর ফেরদৌস ব্যাপকভাবে আলোচিত ও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন ভারতের চলচ্চিত্রকার বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত যৌথ প্রযোজনার সিনেমা 'হঠাৎ বৃষ্টি'র মাধ্যমে। এই সিনেমাতে অভিনয় করে তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এরপর থেকে তিনি একাধারে বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করছেন। এছাড়া 'মিট্টি' নামে একটি বলিউড সিনেমাতেও তাকে দেখা গেছে। ফেরদৌস তার ক্যারিয়ারে চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছেন। এখানেই শেষ নয়, প্রযোজনাতেও নাম লিখিয়েছেন এই নায়ক। ২০১২ সালে 'হঠাৎ সেদিন' এবং ২০১৪ সালে 'এক কাপ চা' সিনেমা দুটি তিনি প্রযোজনা করেন। সিনেমার সফল এই অভিনেতা এবার রাজনীতির মাঠেও সফল হতে চান। সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন তিনি। বাকিটা সময়ই বলে দেবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে