বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫, ৫ আষাঢ় ১৪৩২
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের ঘণ্টা

ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : ব্লুমবার্গের চাঞ্চল্যকর দাবি

বিশেষ প্রতিনিধি
  ১৯ জুন ২০২৫, ০৯:১৩
ইরানে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : ব্লুমবার্গের চাঞ্চল্যকর দাবি
সংগৃহীত

মধ্যপ্রাচ্য যখন ইসরায়েল ও ইরানের সরাসরি সামরিক সংঘাতে রক্তাক্ত, তখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রস্তুতির খবরে গোটা বিশ্বের রাজনীতি ও কূটনীতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ নিউজ এক বিশেষ প্রতিবেদনে দাবি করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা “ইরানের ওপর একটি সম্ভাব্য সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন”, যা খুব শিগগিরই, এমনকি এই সপ্তাহান্তেই (উইকেন্ডে) বাস্তবায়ন হতে পারে।

কী বলছে ব্লুমবার্গের রিপোর্ট?

ব্লুমবার্গ জানিয়েছে: "একাধিক ফেডারেল সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা" ইতোমধ্যে একটি সম্ভাব্য সামরিক হামলার বাস্তবতা ধরে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন।

এই উদ্যোগটি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে তেহরানের সঙ্গে সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়ানোর একটি সুস্পষ্ট ইঙ্গিত।

একাধিক গোপন সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, “প্রস্তুতি দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে”, যদিও এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

কয়েকটি সূত্রের মতে, "সপ্তাহান্তে হামলার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি"।

ট্রাম্প কি সিদ্ধান্তহীনতা দেখাচ্ছেন, নাকি পরিকল্পিত চুপ? যদিও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়ানো নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি, তার চারপাশের রাজনৈতিক ও সামরিক মহলে চাপ বাড়ছে।

একদিকে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা ইসরায়েলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আসছেন, অন্যদিকে মার্কিন কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট ও কিছু রিপাবলিকান সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার বিরোধিতা করছেন।

কেন এই পরিস্থিতি? ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ চলছে টানা ৬ দিন ধরে। ইরান এরইমধ্যে ইসরায়েলের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলও পাল্টা হামলায় ইরানের তেল শোধনাগার, ড্রোন ঘাঁটি ও সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করেছে। ইরান দাবি করেছে, তারা একটি ইসরায়েলি F-35 যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানে সরাসরি হামলা চালায়, তাহলে তা কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, বরং পুরো বিশ্বের নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও রাশিয়া ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে “সতর্ক ও দায়িত্বশীল আচরণ” করার আহ্বান জানিয়েছে।

অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সামরিক অভিযানের অর্থ হবে একটি পূর্ণমাত্রার আঞ্চলিক যুদ্ধ — এমনকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকিও অস্বীকার করা যাচ্ছে না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রস্তুতি কি কূটনৈতিক চাপ, নাকি যুদ্ধের পূর্বাভাস তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, এটা হতে পারে দুই দিক থেকে একটি বার্তা:

ইরানকে চাপ দেওয়ার কৌশল, যাতে তারা হামলা বন্ধ করে।

অথবা আসন্ন হামলার বাস্তব প্রস্তুতি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সংঘাতে প্রবেশ করতে প্রস্তুত।

সংশ্লিষ্টদের অভিমত, পরাশক্তি যখন উত্তেজনার চূড়ায়, তখন একটি ভুল হিসাবই হয়ে উঠতে পারে মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অধ্যায়ের সূচনা।

যুক্তরাষ্ট্র যদি সত্যিই ইরানে হামলা করে, তাহলে সেটি হবে শুধু একটি দেশের বিরুদ্ধে অভিযান নয়— একটি সমগ্র অঞ্চলের বিপর্যয়ের সূত্রপাত।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে