শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১
মাহে রমজান

অহংকারীর স্থান নিশ্চিত জাহান্নাম

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৩ মার্চ ২০২৪, ১০:১৬
প্রতীকি ছবি

আল্লাহর রহমতের অমিয় ধারা বর্ষণের দ্বিতীয় দিবস আজ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি ঐকান্তিক বিশ্বাস ও তার বিধানের কাছে মাথানত করে দেওয়ার মানসিকতা প্রমাণের মাধ্যমে এই মাস মূলত আত্মশুদ্ধি ও প্রশিক্ষণের। গোনাহ মাফের ও জাহান্নামের আগুন থেকে নিষ্কৃতি লাভের।

রোজা একজন মানুষকে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিকভাবে পবিত্র করে। মানুষের আত্মশুদ্ধির জন্য সিয়াম অন্যতম হাতিয়ার। ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদত হচ্ছে এই সিয়াম সাধনা। মুসলিম মিল্লাতের তাকওয়া অর্জনের জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন রোজাকে ফরজ করে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনুুল করিমের সুরা বাকারার ১৮৩ থেকে ১৮৭ পর্যন্ত চারটি আয়াতে রোজা সম্পর্কে সরাসরি উল্লেখ পাওয়া যায়। তাছাড়া পবিত্র কোরআনের আরও কিছু আয়াতে সিয়াম সম্পর্কে পরোক্ষ নির্দেশনা রয়েছে।

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত যা কিছু নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলো নিছক আখিরাতের জীবনের জন্য নয়। বরং প্রতিটি নির্দেশের পেছনে মানুষের পার্থিব জীবনের বহুমুখী উপকারিতা নিহিত। একজন দ্বীনদার ব্যক্তিই শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রহমত অনুভব করে এবং সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ দুনিয়াবি বিভিন্ন কল্যাণও বুঝতে পারে। আর মানুষের সীমিত জ্ঞানের ভান্ডার প্রসারিত করার একমাত্র পথই হচ্ছে কোরআন পাঠ। যার বিধিনিষেধ অনুকরণ করে একজন মানুষ সামাজিক গুণাবলিতেও গুণান্বিত হতে পারেন। যেমন কোরআনে ‘অহংকার’ ত্যাগ করার সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে। আর একজন নিরাহংকারী ব্যক্তিই শুধু সমাজের সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্য হতে পারেন।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের অনেক আয়াতে তাকাব্বুর অর্থাৎ ‘অহংকার’ এর নিন্দাবাদ করা হয়েছে। এই অহংকারের কারণেই ইবলিশ বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়েছে। অহংকারের কারণেই আবু জাহাল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য জেনেও অস্বীকার করেছে।

অহংকারের দু’টি আলামত হলো- প্রথমত, সত্যকে অস্বীকার করা এবং দ্বিতীয়ত, মানুষকে ছোট (নিচ) মনে করা। (মুসলিম, মিশকাত, পৃ.-৪২৩)

রাসুল সা. বলেছেন, ওই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে জাররা পরিমাণ অহংকার আছে। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত প্রিয় মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ‘যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ অহংকারীদের সম্পর্কে আল-কোরআনে প্রদত্ত মহান আল্লাহতায়ালার সাবধান বাণী- ‘আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরিক করো না তার সঙ্গে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সঙ্গে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্মীয়, এতিম-মিসকিন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।

কোরআনের অপর এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর যারা ইমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তিনি তাদের পরিপূর্ণ সওয়াব দান করবেন, বরং স্বীয় অনুগ্রহে আরও বেশি দেবেন। পক্ষান্তরে যারা লজ্জাবোধ করেছে এবং অহঙ্কার করেছে তিনি তাদের দেবেন বেদনাদায়ক আজাব। আল্লাহকে ছাড়া তারা কোনো সাহায্যকারী ও সমর্থক পাবে না।

সূরা আল আ’রাফ-এ বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং এগুলো থেকে অহংকার করেছে, তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। আমি এমনিভাবে পাপীদের শাস্তি প্রদান করি। অহংকার সম্পর্কে সূরা আন নাহল- এ বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের গোপন ও প্রকাশ্য যাবতীয় বিষয়ে অবগত। নিশ্চিতই তিনি অহংকারীদের পছন্দ করেন না।’

সূরা বনী ইসরাঈলে অহংকারীদের হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, ‘পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। নিশ্চয় তুমি তো ভূপৃষ্ঠকে কখনই বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না।’

মক্কায় অবতীর্ণ সূরা লোকমান-এ বলা আছে, ‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না এবং পৃথিবীতে গর্বভরে পদচারণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ সূরা আল-যুমার-এ এসেছে, ‘বলা হবে, তোমরা জাহান্নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ কর, সেখানে চিরকাল অবস্থানের জন্য। কত নিকৃষ্ট অহংকারীদের আবাসস্থল।’ সূরা হা-মীম সেজদাহ (মক্কায় অবতীর্ণ) বলা হয়েছে, ‘মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করলে সে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অহংকারে দূরে সরে যায়, আর যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সুদীর্ঘ দোয়া করতে থাকে।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে