সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২
হোয়াইট হাউসে প্রেস ব্রিফিং

চলতি সপ্তাহে অবসান হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত

দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তি চায় মস্কো
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চলতি সপ্তাহে অবসান হতে পারে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট

২০২২ সালের ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ইউক্রেনে সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরু করে রাশিয়া। সোমবার রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের তিন বছর পূর্ণ হয়েছে। এর মাসখানেক আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই এই সংঘাত বন্ধের বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন তিনি। সম্প্রতি এ বিষয়ে তিনি জোরালো তৎপরতা শুরু করেছেন এবং হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেনের সংঘাতের অবসান 'এই সপ্তাহেই' হতে পারে। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। শনিবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেন সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য রাশিয়ার সাথে একটি চুক্তি আলোচনার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ এই সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। কনজারভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্স (সিপিএসি) থেকে ফিরে সাউথ লনে সাংবাদিকদের লেভিট বলেন, "প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার দল এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে এই যুদ্ধের উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ওপর খুব বেশি মনোযোগী এবং প্রেসিডেন্ট নিজেও খুব আত্মবিশ্বাসী য্তে আমরা এই সপ্তাহে এটি সম্পন্ন করতে পারব।"

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির আর "কোনও অপশন নেই" এবং আন্তর্জাতিক নেতাদের সাথে ভবিষ্যতে শান্তি আলোচনা থেকে তাকে বাদ দেওয়া উচিত বলে ট্রাম্প দাবি করার পরে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কাছ থেকে এই মন্তব্য এসেছে। লেভিট বলেছেন, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ম্যাট ওয়াল্টজ এই সপ্তাহান্তে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য 'দিন-রাত' কাজ করবেন এবং উলেস্নখ করেছেন, অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট নিজেও খনিজ ব্যবহার সংক্রান্ত ইউক্রেনের সাথে একটি প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট আরও বলেন, "ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ এসব খনিজ পদার্থ প্রেসিডেন্টের (ট্রাম্প) জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি আমেরিকান ট্যাক্স ডলার ফিরিয়ে আনবে।"

এদিকে ইউক্রেন শিগগিরই খনিজ চুক্তি মেনে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন খুব দ্রম্নতই তাদের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ করার বিষয়ে একটি প্রস্তাবিত চুক্তি গ্রহণ করবে বলে তিনি আশা করেন। এমনকি এই বিনিয়োগ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা তহবিলের কিছু ক্ষতি পুষিয়ে তুলতে পারবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। গত শনিবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সম্ভাব্য চুক্তি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, "আমরা আশা করছি পরবর্তী স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করব, এর ফলে আমরা ৪০ বা ৫০ হাজার কোটি ডলার ফিরে পাবো বলে আমাদের নিশ্চিত করবে।" তিনি আরও বলেন, "এটি একটি বড় চুক্তি, তবে তারা (ইউক্রেনীয়রা) এটি চায় এবং এই চুক্তি আমাদের সেই দেশে উপস্থিত রাখবে। আমরা আমাদের অর্থ ফেরত পাবো। এটি আমাদের প্রস্তাব করার অনেক আগেই স্বাক্ষরিত হওয়া উচিত ছিল।" সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেনে যুদ্ধের অবসানের লক্ষ্যে বৃহত্তর আলোচনার অংশ হিসেবে রেয়ার আর্থ খনিজ সম্পদের চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। মূলত ইউক্রেনের প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। যেগুলো অস্ত্র, বৈদু্যতিক গাড়িসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। এসব সম্পদ বিশ্বের সব জায়গায় পাওয়া যায় না এবং এগুলো আহরণ করাও সহজ নয়। তাই এই সম্পদগুলো বেশমূল্যবান। ইউক্রেনে যেসব প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, সেগুলো চীনেও রয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমারা চীনকে টেক্কা দিতে ইউক্রেনের সম্পদের দিকে নজর দিয়েছে। টানা তিন বছর ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এই আগ্রাসনের শুরু থেকেই ইউক্রেনকে বিপুল পরিমাণে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। গত মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর এরপরই ইউক্রেনে দেওয়া মার্কিন সহায়তার প্রকৃতি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে টানাপোড়েন। এমন অবস্থায় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনকে দেওয়ার মার্কিন সহায়তা ছিল অনুদান। তার দাবি, ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তা অনুদান হিসাবে দেওয়া হয়েছে, ঋণ নয়। রোববার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। বার্তাসংস্থাটি বলছে, ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সহায়তা অনুদান হিসাবে প্রদান করা হয়েছিল, ঋণ নয় বলে প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রোববার বলেছেন। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ৫০০ বিলিয়ন ডলার সহায়তাকে ঋণ হিসাবে বিবেচনা করা উচিত এমন দাবিও প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি। তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধের সময় ওয়াশিংটন কিয়েভকে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা দিয়েছে বলে জেলেনস্কি একটি সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেছেন। তিনি আরও বলেন, তাদের এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে যা যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেন উভয়ের জন্যই "লাভজনক" এবং উভয় পক্ষের জন্য "সুখকর" হবে।

ইউক্রেন যুদ্ধের মূল কারণগুলো সামাল দেবে এমন একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তি চুক্তি চায় বলে জানিয়েছে রাশিয়া। তারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত তড়িঘড়ি কোনো যুদ্ধবিরতি চায় না যা শেষ হওয়ার পরপরই আবার দ্রম্নত লড়াই শুরু হয়ে যাবে। এমনটি জানিয়েছেন রাশিয়ার এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক। সোমবার ইউক্রেন যুদ্ধের তিন বছর পূর্তিতে বার্তা সংস্থা আরআইএ-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানান, মস্কো ইউক্রেন নিয়ে এমন একটি চুক্তি চাইছে যা সময়ের পরীক্ষায় টিকে থাকবে। আরআইএ-র দেওয়া উদ্ধৃতিতে রিয়াবকভ বলেছেন, "আমরা আমেরিকান পক্ষের দ্রম্নত যুদ্ধবিরতির দিকে এগিয়ে যাওয়া যথেষ্ট আস্থার সঙ্গে শনাক্ত করতে পারি। "কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদি নিষ্পত্তি ছাড়া একটি যুদ্ধবিরতি হচ্ছে দ্রম্নত আবার লড়াইয়ে পথে ফিরে যাওয়া। আর সংঘাত আবার শুরু হলে তা আরও গুরুতর পরিণতি বয়ে আনবে, রাশিয়া-আমেরিকার সম্পর্কও এই পরিণতি এড়াতে পারবে না। আমরা এটি চাই না। "আমাদের একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান দরকার। পর্যায়ক্রমে ইউক্রেনে ও একে ঘিরে যা হচ্ছে তার মূল কারণগুলো সফলভাবে মোকাবেলা করার একটি উপাদান যা আবশ্যিকভাবে যুক্ত করবে।" গত সপ্তাহে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়। মস্কো জানিয়েছে, ওই আলোচনায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আবার শুরু করা ও ইউক্রেইনের জন্য আলোচনার প্রস্তুতি নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। রিয়াবকভ জানান, ওই আলোচনায় ইউক্রেনের জন্য প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রস্তাব করা হয়নি। তিনি মস্কোর অবস্থান আবার জানান দিয়ে বলেন, "ইউক্রেইনে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরু করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না।" পূর্ব মুখে নেটো জোটের 'অনিয়ন্ত্রিত' সম্প্রসারণের কারণেই মস্কো এ অভিযান চালাতে বাধ্য হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। ইউক্রেইনে রুশ ভাষাভাষী জনগণের অধিকার পদদলিত করা হচ্ছিল বলে অভিযোগও করেছেন তিনি। রয়টার্স লিখেছে, এসব অভিযোগ রাশিয়া আগে থেকেই জানিয়ে আসছে যা কিয়েভ অস্বীকার করেছে। রাশিয়া ইউক্রেন দখল করার জন্য ঔপনিবেশিক ধরনের নৃশংস যুদ্ধ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ কিয়েভ ও পশ্চিমা দেশগুলোর।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে