মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের সংঘবদ্ধ হয়ে ওঠার অনুপ্রেরণা। নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, আটানব্বইর প্রলয়ংকরী বন্যা, আইলা, সিডরে আমরা এর প্রমাণ পেয়েছি। বিভিন্ন দুযোের্গর সময় দেখেছি, প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী ব্যক্তিরা দেশমাতৃকাকে কতটা ভালোবাসেন। যারা নিজের জন্য নয়, বিনা স্বাথের্ দেশের জন্য নিজের জীবনের ঝুঁকি নেয়, নিজের জীবন বিলিয়ে দিতেও কাপর্ণ্য করেন না, প্রকৃতপক্ষে তারাই খঁাটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী। আমি বা আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুসারী এটা বলার কোনো বিষয় নয়, এটা হৃদয়ে লালন করার বিষয়, মনে-প্রাণে ধারণ করার বিষয়। তাই আমি মনে করি, যারা প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অধিকারী তারা কখনো মুখে এ কথা বলে না, তারা তাদের কমের্র মাধ্যমে এটা জানান দেন।
ত্রিশ লাখ শহীদ এবং দুই লাখ মা-বোনের অসামান্য আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, পেয়েছি একটি নিজস্ব পুাকা, একটি জাতীয় সংগীত ঠিকই তবে এ কথা বলতে আজ কোনো দ্বিধা নেই যে, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে গেছে। কেননা রণাঙ্গনের সংগ্রামের মাধ্যমে হয়তো পাকিস্তানি শাসকদের যাবুীয় অন্যায়, অবিচার, শোষণ থেকে মুক্ত হয়েছি ঠিকই কিন্তু কাক্সিক্ষত মুক্তি আজও মেলেনি। দুনীির্ত আজও আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে, আমাদের সমাজব্যবস্থা এখনো দুনীির্ত, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, দলবাজি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে পারেনি, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী।
আমি মনে করি, সমগ্র বাংলাদেশই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বাংলাদেশের দুঃখে দুঃখী হওয়া, বাংলাদেশের সুখে সুখী হওয়াই আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ১৯৭১ সালে যারা দেশ মাতৃকার বিরুদ্ধে কাজ করেছে, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি, তাদের প্রত্যাখ্যান করা, ঘৃণা করাই হলো মুক্তিযুদ্ধের আসল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো লাল-সবুজের পুাকা বুকে ধারণ করে, পুাকাকে ভালোবেসে এর মান-সমুন্নত রাখার শপথের নাম। চেতনা কাযর্ত একটি অদৃশ্যমান অনুভ‚তি কিন্তু এটার দৃশ্যমান প্রতিফলন হয় বাস্তব জগতে কমের্র মাধ্যমে। ব্যক্তির কমর্ বুঝতে পারলে খুব সহজেই চেতনাটাকে বোঝা যায়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে সেই কমির্ট যার ফলে বাঙালির স্বশাসিু একটি সাবের্ভৗম রাষ্ট্র অজির্ত হয়েছে। বৈষম্যমুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসম্প্রদায়িক, শোষণমুক্ত সামাজিক ন্যায়বিচারভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করার নামই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিনিয়তই আমাদের জাতিসত্তাকে নতুুন নতুন আশা ও আকাক্সক্ষার বাণী শোনায়। বাংলাদেশের বতর্মান তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করুক ও লালন করুক এটা আমাদের সবারই কামনা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের একটি কলাম থেকে জানা যায়, তিনি লিখছেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবিধান অনুসারে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো স্বাধীনভাবে আমাদের বেঁচে থাকা; ব্যক্তিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে অথৈর্নতিক মুক্তি, সব মৌলিক অধিকার সমানভাবে নিশ্চিত করা; অথার্ৎ বৈষম্যহীন, মুক্ত এবং ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন, রাষ্ট্রে বলিষ্ঠ জাতি হিসাবে আমাদের বিকাশের সুযোগ থাকা এবং রাষ্ট্রে বেড়ে ওঠা আমাদের মানবসত্তা বিশ্বে মযার্দা পাওয়া-সব মিলে একটি পূণার্ঙ্গ জীবনের কথা বলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। তার মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষাথীের্দর অনুপ্রাণিত করে তুলতে হবে এবং তাদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে ন্যায়বোধ, কতর্ব্যবোধ, মানবাধিকার সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চচার্, শৃঙ্খলা, অধ্যাবসায়সহ বিভিন্ন সুনাগরিকের গুণাবলির বিকাশ ঘটাতে হবে। আমরা তরুণ প্রজন্ম তার কথা পুরোপুরি সমথর্ন করি।