শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

একুশ আমাদের অহংকার

আলী ফজল মোহাম্মদ কাওছার সিলেট
  ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০০:০০
একুশ আমাদের অহংকার
একুশ আমাদের অহংকার

একুশ বাঙালি জাতির এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের নাম। একুশ বাঙালি জাতির চেতনার প্রেরণা নাম। একুশ বাঙালির দামাল ছেলেদের ভাষার জন্য রক্ত দেয়ার ইতিহাসের নাম। একুশে ফেব্রæয়ারি কিংবা ৮ ফাল্গুন যেই তারিখই বলুন সেই দিন মাতৃভাষা বাংলার জন্য বাংলা মায়ের দামাল ছেলেদের তাজা রক্তে ঢাকার পিচঢালা পথ রঞ্জিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা। একুশে ফেব্রæয়ারি এখন শুধু আর আমাদের নয়। আন্তজাির্তক মাতৃভাষা দিবস এখন। একুশে ফেব্রæয়ারি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আমাদের পিছনের দিকে যেতে হবে। ১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতিতত্তে¡র ভিত্তিতে জন্ম হলো দুটি রাষ্ট্রের পাকিস্তান-ভারত। পাকিস্তান আবার দুটি অংশে বিভক্ত ছিল পূবর্ পাকিস্তান (আজকের বাংলাদেশ) ও পশ্চিম পাকিস্তান। এই দুই অংশের ভিতর দূরত্ব ছিল প্রায় ১৮০০ কিঃ মিঃ। আর তাদের ভাষা, কৃষ্টি, কালচারেও ছিল যোজন যোজন দূরত্ব। বহু জাতিসত্তা নিয়ে গঠিত পাকিস্তানের ৬ শতাংশ মানুষের ভাষা ছিল উদুর্, আর ৫৪ শতাংশ মানুষের ভাষা ছিল বাংলা। কিন্তু পাকিস্তানিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষাকে পাশ কাঠিয়ে সংখ্যালঘুদের মুখের ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করতে চেয়েছিল। ১৯৪৮ সালে ঢাকার রেসকোসর্ ময়দানে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা করেন ‘উদুর্ই হবেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। এই অন্যায় সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করে ক্ষোভে ফেটে পড়ে পূবর্ পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তুমুল আন্দোলন গড়ে তোলে বাংলার সাধারণ জনগণসহ ছাত্র-জনতা। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রæয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটে। আন্দোলনকে দমিয়ে রাখতে ১৪৪ ধারা জারি হয়। নিষিদ্ধ করা হয় সব ধরনের সভা-সমাবেশ। ২১ ফেব্রæয়ারি সকাল থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল শুরু হয়, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ¯েøাগান শুরু হয়। পুলিশ নিবির্চারে সেই মিছিলে গুলি ছোড়ে। এতে বরকত, জব্বার, রফিক ঘটনাস্থলে শহীদ হন। মারাত্মক আহত হওয়া সালাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেড় মাস পর মৃত্যুবরণ করেন। ২২ ফেব্রæয়ারি ছাত্রদের পাশাপাশি হাজারো জনতা রাস্তায় নেমে আসে। সাধারণ জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শফিউর। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রæয়ারি ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রæয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। ১৯৫৪ সালের ৯ মে গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার মযার্দা দেয়া হয়। ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রæয়ারি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবতর্ন আনা হয়। কানাডার ভ্যানকুভার শহরে বসবাসরত দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম প্রাথমিক উদ্যোক্তা হিসেবে একুশে ফেব্রæয়ারিকে আন্তজাির্তক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ১৯৯৮ সালে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রæয়ারিকে আন্তজাির্তক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশসমূহে যথাযথ মযার্দায় পালিত হচ্ছে। যা বাঙালি জাতির জন্য গবর্ ও অহংকারের বিষয়। একুশে ফেব্রæয়ারিকে প্রেরণা হিসেবে নিয়ে পরবতিের্ত পাকিস্তানিদের শোষণের বিরুদ্ধে দুবার্র আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। যেমন : ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, সবোর্পরি ১৯৭১ সালের আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধ যার প্রেরণা পেয়েছিল বাঙালিরা একুশে ফেব্রæয়ারি থেকে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা পূবর্বতীর্ কিংবা পরবতীর্ সময়ে যতটি সোনালী অজর্ন তার মূলে কাজ করছে একুশে ফেব্রæয়ারি থেকে। ভাষা আন্দোলন থেকে বাঙালিরা তাদের দাবি আদায়ের প্রেরণা পেয়েছিল। সেই প্রেরণা থেকে অনুপ্রাণিত পরবতীর্ সময়ে সফল হয়েছি। একুশে ফেব্রæয়ারির ত্যাগের জন্য সমগ্র বিশ্বে এখন বাংলাকে আন্তজাির্তক ভাষা হিসেবে পালিত হচ্ছে। তাই তো একুশে ফেব্রæয়ারি কিংবা একুশ আমাদের অহংকারের নাম।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে