বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

কয়েদির হাতুড়িপেটায় মাথা ফাটল সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টরের

বিশেষ প্রতিনিধি
  ৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
কয়েদির হাতুড়িপেটায় মাথা ফাটল সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টরের

গাজীপুর জেলা কারাগারের ভেতরে নিয়মিত 'বিচার বৈঠকে' সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি প্রকাশ্যে ফয়েজ উদ্দিন (৫৮) নামের এক সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টরকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে বুধবার সকালে ওমর ফারুক (৩৩) নামের এক কয়েদি এ ঘটনা ঘটায়।

জানা গেছে, দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি ও কাপাসিয়া উপজেলার বিল জরাইল গ্রামের আলমগীর হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক প্রকাশ্যে লোহার ঘণ্টি পেটানোর হাতুড়ি দিয়ে বিচার বৈঠকে সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টর ফয়েজ উদ্দিনের পেছন দিক থেকে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে ফয়েজ উদ্দিনের মাথা ফেটে রক্ত বের হতে থাকে। পরে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

কারা সূত্র বলছে, সেখান থেকে দ্রম্নত তাকে কারাগারের হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার উন্নতি না হওয়া শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ফয়েজ উদ্দিনের অবস্থার অবনতি হলে বিকেলে তাকে রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

কারাগারের একাধিক সূত্র বলছে, বিচার বৈঠকে কেস টেবিলে বসে কাজ করছিলেন ফয়েজ উদ্দিন। এ সময় তার সামনে এসে ওমর ফারুক বলতে থাকে 'আমাকে ছেড়ে দেন। বারবার কেন আমাকে এখানে এনে বন্দি করে রাখা হচ্ছে।' ওমর ফারুক পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে। এ সময় ফয়েজ উদ্দিন তার সঙ্গে পরে কথা বলবেন বলে ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেন। এর ঠিক ৩০ মিনিট পর লোহার ঘণ্টি বাজানোর হাতুড়ি নিয়ে এসে ফয়েজ উদ্দিনের পেছনে গিয়ে আঘাত করতে থাকে।

গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, 'ফয়েজ উদ্দিন একজন পরহেজগার মানুষ। তার মতো এতো ভালো অফিসার খুব কমই পাওয়া যায়। তার সঙ্গে কোনো কয়েদির বিরোধ থাকার কথা নয়। তারপরও তদন্তের পর বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে বলা যাবে।'

বিচার বৈঠকে সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টরের দায়িত্ব পালন করার কথা নয়। সেখানে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করার কথা। তবুও কেন সার্জেন্ট ইনস্ট্রাক্টরকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল এমন প্রশ্নে উত্তরে জেল সুপার বলেন, '৩০০ জনের ধারণ ক্ষমতার কারাগারে বন্দী রয়েছে ১ হাজার ৬০০ জন। লোকবলও পর্যাপ্ত নেই। তাছাড়া ফয়েজ উদ্দিন একজন অভিজ্ঞ মানুষ। এ কারণে তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি নিজেও আনন্দের সঙ্গে সে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।'

কারা সূত্র বলছে, এর আগেও কয়েকবার গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে ওমর ফারুককে জেলা কারাগারে রাখা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অন্তত অর্ধডজন মামলা আদালতে বিচারাধীন।

সর্বশেষ গত ২৫ জানুয়ারি তাকে এ কারাগারে আনা হয়। জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, 'বিষয়টি কারা মহাপরিদর্শককে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। গাজীপুর মহানগরের সদর থানায় একটি মামলাও দায়ের করেছেন।'

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বলেন, 'বিষয়টি আমরা গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছি। কয়েদি ওমর ফারুক বারবার এ কারাগারে বন্দি থেকেছে। বন্দী থাকা অবস্থায় ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে নাকি অন্য কোনো বিষয় আছে সেই বিষয়টিও মাথায় নিয়ে আমরা তদন্ত করছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে