মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
রাজশাহী-৪

এনামুলেই ভরসা আ'লীগের, নতুন মুখ চায় বিএনপি

বদরুল হাসান লিটন ও ইউসুব আলী
  ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
এনামুলেই ভরসা আ'লীগের, নতুন মুখ চায় বিএনপি
এনামুলেই ভরসা আ'লীগের, নতুন মুখ চায় বিএনপি

২০০৮ সালের নির্বাচনে পুনর্বিন্যাসে বাগমারা উপজেলা নিয়ে গঠিত হয় রাজশাহী-৪ সংসদীয় আসন। জেলার সর্ববৃহৎ উপজেলা বাগমারায় রয়েছে দুটি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়ন। পুনর্বিন্যাসের আগে আসনটি ছিল বাগমারা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে।

১৯৯১ সালে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত রাখাল চন্দ্র দাস। ৯৬ সালে মনোনয়ন পান এক সময়ের বাম সংগঠনের নেতা ও বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন এবং ২০০১ সালে সাবেক প্রতিমন্ত্রী জিনাতুন নেছা তালুকদার।

1

এই আসনে ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা প্রয়াত সরদার আমজাদ হোসেন। ১৯৯৬ সালে মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপির প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন প্রয়াত বিএনপি নেতা আবু হেনা। তিনি বিএনপির মনোনয়নে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জঙ্গি ইসু্য নিয়ে নিজ দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলে দল থেকে বহিষ্কার হন তিনি। ফলে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়েন আবু হেনা। সেখানে মনোনয়ন পান জেলা বিএনপি নেতা অধ্যাপক আব্দুল গফুর। ওই নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন।

আওয়ামী লীগ : এক সময়ের জঙ্গি ও চরমপন্থি অধু্যষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আসে ২০০৮ সালের নির্বাচনে। দলটির মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি দুইবারের এমপি প্রয়াত আবু হেনাকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন।

দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই আসনে বলিষ্ঠ প্রার্থী হিসেবে বর্তমান এমপি এনামুল হকের বিকল্প নেই। মাঠপর্যায়ে রয়েছে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এলাকার হাজার হাজার গরিব-অসহায় মানুষকে নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করে বাগমারার বাসিন্দাদের হৃদয়ে বড় একটি জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ফলে দলমত নির্বিশেষে সাধারণ ভোটারদের কাছে এমপি এনামুল এখন এই অঞ্চলে জনপ্রিয় নেতা বলেই পরিচিত।

আসনটিতে এবার এনামুল হক ছাড়াও আরও তিনজন আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- বাগমারা উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জাকিরুল ইসলাম সান্টু ও তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি প্রফেসর ডক্টর পিএম শফিকুল ইসলাম শফি।

বাগমারার শ্রীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিলস্নুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই আসনে যারা এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের সবার চেয়ে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে স্থান করে নিয়েছেন এনামুল হক। সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের যেভাবে সহযোগিতা করা হয়, তা এর আগে কোনো সংসদ সদস্য করেননি। এ ছাড়াও এনামুল হক সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার নেতৃত্বে বাগমারা আওয়ামী লীগ এখন অনেক শক্তিশালী। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকসহ সাধারণ ভোটারদের আস্থা এখন এনামুল হকের ওপর। এই আসনে জয়ের ধারা ধরে রাখতে এনামুল হক ছাড়া বিকল্প নেই বলেন তিনি।

তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ বলেন, 'স্কুলজীবন থেকে ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের লোকজন বারবার আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমি থেমে থাকিনি। দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ফলে দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। আমি সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে আছি। রাজনীতিতে আমার ত্যাগ ও অবদান বিবেচনা করেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এবার দলীয় মনোনয়ন দেবেন বলে আশাবাদী।'

বিএনপি : রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে এবার দলের মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির অন্তত ডজনখানেক নেতা। যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছেন। বিশেষ করে সমর্থন পেতে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করাসহ কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন তারা। তবে এবার নতুন মুখ ও স্থানীয় নেতাকে চায় দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন অধ্যাপক আবদুল গফুর। এর আগে তিনি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারির নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে ১৫ দিনের মাথায় ওই সংসদ ভেঙে যায়।

এর মাঝে এই আসনে ১৯৯৬-২০০৬ সাল পর্যন্ত এমপি ছিলেন বিএনপি নেতা প্রয়াত আবু হেনা। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন পেয়েছিলেন। ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর কনোনায় মারা যান আবু হেনা। আর বয়সের কারণে বর্তমানে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন সাবেক এমপি অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল গফুর। তবে তিনি এবারও মনোনয়ন চাইবেন। তবে এই আসনে এবার বিএনপি থেকে নতুন মুখ আসছে, তা অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছেন দলের স্থানীয় নেতারা।

এ ছাড়াও এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি সহ-সভাপতি, রাজশাহী বিভাগীয় টিম লিডার ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি জাহান পান্না, নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সিনিয়র সায়েন্টিস্ট, দেওয়ান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জিয়া পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ডা. জাহিদ দেওয়ান শামীম, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও ভবানীগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুর রাজ্জাক প্রামাণিক, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাগমারা উপজেলার সাবেক সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তাহেরপুর পৌরসভার সভাপতি সাবেক মেয়র অ ন ম সামসুর রহমান মিন্টু, জেলা বিএনপির সাবেক ক্রীড়া-বিষয়ক সম্পাদক ও বাগমারা উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক কামাল হোসেন, রাজশাহী জেলা যুবদলের সদস্যসচিব ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম টুটুল, ড্যাব নেতা ডা. আশফাকুর রহমান শেলি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহফুজুর রহমান এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জহুরুল আলম বাবু।

তাদের মধ্যে রাজনীতির মাঠে নেতাকর্মীদের নিয়ে সক্রিয় রয়েছেন ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া, অধ্যাপক কামাল হোসেন ও রেজাউল করিম টুটুল। বিশেষ করে দলীয় সব কর্মসূচিতে তারা নেতাকর্মীদের নিয়ে অংশ নেন। আর এলাকায় দেখা না গেলেও পোস্টার-ব্যানার সাঁটিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন জহুরুল আলম বাবু।

দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী কামাল হোসেন বলেন, 'বাগমারার তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে আছি। তারাও আমার সঙ্গে আছেন। দলীয় সব কর্মসূচিতে তাদের নিয়ে অংশগ্রহণ করে থাকি। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করে সরকার পতনের আন্দোলনে মানুষের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।'

ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, 'বাগমারা বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নতুন মুখ চায়। তাদের প্রত্যাশার কারণে এবারও মনোনয়ন চাইব। জনপ্রিয়তা বিবেচনায় দল মনোনয়ন দিলে এবার আমি মনোনয়ন পাব। আর মনোনয়ন পেলে এই আসনটি আবার বিএনপির কাছে ফিরে আসবে বলে আশা করছি।'

সামসুর রহমান মিন্টু বলেন, 'যারা বাগমারায় অবস্থান করে রাজনীতি করেন এবং দলের কর্মীদের সুখে-দুখে পাশে থাকবে, এবার এ ধরনের নেতাকে চায় বাগমারার তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। আমরা আর বহিরাগত ভাড়াটে নেতাদের চাই না।'

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া এবার নির্বাচনে যাবে না বিএনপি উলেস্নখ করে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু বলেন, 'ভোট হলে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব। বাগমারায় দলের অবস্থান ভালো। এখানে দলের বাইরে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার সুযোগ নেই। দল থেকে যিনি মনোনয়ন পাবেন, তিনিই বিজয়ী হবেন।'

জাতীয় পার্টি

এবারও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেব। এর আগেও তিনি একাধিকবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন। তিনি পৌরসভা, উপজেলা ও সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছেন।

আবু তালেব বলেন, 'এই আসন থেকে দুইবার জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। আগামীতে আমি এই আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাই। এখানে জাতীয় পার্টির অবস্থান আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো। আশা করছি, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আগামীতে লাঙ্গলের পক্ষেই থাকবে বাগমারাবাসী।'

আগামীকাল :রাজশাহী-৫ আসনের বিস্তারিত

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে