বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

কালো পতাকা মিছিলেও ক্র্যাকডাউন চালাবে সরকার :মঈন খান

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৮তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন ড. আবদুল মঈন খান -ফোকাস বাংলা

বিএনপির ২৬ এবং ২৭ জানুয়ারি কালো পতাকা মিছিল করলে সরকার ২৮ অক্টোবরের মতো আবারও ক্র্যাকডাউন চালাবে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে 'মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা ও আধুনিক রাষ্ট্রের রূপকার এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নব্য বাকশালের মূলোৎপাটনে শহীদ জিয়ার রাষ্ট্রদর্শন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আলোচনা সভাটির আয়োজন করে ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)।

মঈন খান বলেন, 'সরকার বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সব সময় বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। আমরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে লিফলেট বিতরণ এবং গণসংযোগ করেছি সেখানেও এসে সরকার বিভিন্নভাবে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এমনকি আমরা রোববার একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছি, যেখানে আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে কালো পতাকা প্রদর্শন করব। এর বাইরে তো কিছু না। তবে দেখুন আজকেই আমাদের ওপর হুমকি এসেছে। তারা এমনটা বলছে যে, আমরা যদি রাজপথে কালো পতাকা মিছিল করি তাহলে আবারও ২৮ অক্টোবরের মতো আমাদের ওপর হামলা করা হবে। আমরা কোন দেশে অবস্থান করছি।'

তিনি বলেন, 'আমি খোলা মনে সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা সঠিক পথে ফিরে আসুন। যদি আপনারা নিজেদের জনগণের দল হিসেবে মনে করেন।'

আন্তর্জাতিক বিশ্ব সরকারের অপপ্রচারের কারণে বিএনপিকে এক সময় সন্ত্রাসী সংগঠন ভাবত এমন মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, সরকার সব সময় বলে আসছে বিএনপি নাকি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। বিএনপি নাকি তালেবান হয়ে গেছে, বিএনপি নাকি ফান্ডামেন্টালিস্ট দল হয়ে গেছে। এমন সব কথা সরকার বহুবার বলেছে। আমার বলতে দ্বিধা নেই, একটা সময় আন্তর্জাতিক বিশ্ব বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন ভাবত, কারণ সরকারের এমন সব কথা তাদের কাছে বিক্রি করত। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপটে 'আন্তর্জাতিক বিশ্ব সরকারের এমন কথা আর কিনছে না।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্ব যদি এসব কথা কিনেই নিত, তাহলে কিন্তু আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ৭ জানুয়ারির পর্যন্ত সরকারের বিপক্ষে কোনো রিপোর্ট করত না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জাতিসংঘসহ প্রতিটা দেশ ২৮ অক্টোবরের ক্র্যাকডাউনের পর থেকে নির্বাচনের পর পর্যন্ত তারা যে বিবৃতিগুলো দিয়েছে সেখানে কোথাও বিরোধী দলকে দায়ী করে কোনো কিছু বলেনি। উল্টো তারা বলছে বাংলাদেশ এক দলীয় শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে উত্তর কোরিয়াতে পরিণত হচ্ছে।'

বিএনপি বিভেদের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না উলেস্নখ করে মঈন খান বলেন, 'আগামী প্রজন্ম যদি আপনাদের কাছে প্রশ্ন করে লক্ষ প্রাণের বিনিমিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছিল যে জন্য, সে বাংলাদেশ এখন কেন নেই। এর জবাব আপনারা কি দেবেন। জনগণের এখন সরকারকে প্রশ্ন করতে হবে কেন এ সরকার দেশ থেকে গণতন্ত্রকে হত্যা করে বিদায় করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ কি এ বাংলাদেশ চেয়েছিল, এ প্রশ্ন এখন জনগণের করতে হবে। আমরা বিভেদের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আমরা চাই সবাই মিলে বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাব।'

সরকার ক্ষমতা ও অর্থলোভের মোহে আছে, এভাবে দেশ চালানো যায় না- এমন মন্তব্য করে মঈন খান বলেন, 'এ সরকারের আজকে চাওয়া বেগমপাড়া, গুলশান ২-৩ এবং সেকেন্ড হোম। সরকার যা চাইছে সবই তো পেয়েছে। আর কি চায়। সরকারের এমন আচরণে বলতে হয়, তারা কি চায় এ দেশের সব মানুষের কণ্ঠরোধ করে রাখবে। এ দেশে মানুষের কথা বলার কোনো অধিকার নেই, এ দেশে তারা থাকতে পারবে না। এটাই কি সরকার চায়। তবে আমরা একটা কথাই বলব, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে হবে। এটাই শেষ কথা। আমরা আন্দোলনে আছি এবং থাকব। আমরা মানুষের মাঝে বিভাজন চাই না।'

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন পেশাজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরীসহ ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের অন্যান্য সদস্যারা।

উন্নয়ন হলে দেশে কেন গ্যাস-সংকট : রিজভী

উন্নয়ন হলে দেশে কেন গ্যাস-সংকট, বিদু্যৎ-সংকট- সরকারের উদ্দেশে এই প্রশ্ন রেখেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

সোমবার অনলাইনে করা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন হলে কী কারণে একটি উন্নয়নশীল দেশকে পরনির্ভরশীল, আমদানিনির্ভর দেশে পরিণত করা হয়েছে?

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তারা ধোঁকাবাজির নির্বাচন করতে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মীকে তিন থেকে চার মাস ধরে গ্রেপ্তার করেছে। শারীরিক নির্যাতনে নেতাকর্মীদের কেউ কেউ কারাগারে মারা গেছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। কারা হেফাজতে ও রিমান্ডে নিয়ে নেতাকর্মীদের নির্যাতনের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আদালত থেকে জামিন পেলেও কারামুক্তি মিলছে না। জামিনের কাগজ নিয়ে কারাফটক থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী দলগুলোর নেতাকর্মীদের জীবন নিয়ে খেলছে পুলিশ ও প্রশাসন।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আরও বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার নিজেদের টিকিয়ে রাখতে রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা জামিন পেলেও জেলগেটে থাকা গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের টাকা না দিলে তাদের মুক্তি মিলছে না। এ কারণে কারাগারেই ধুঁকে ধুঁকে জীবন কাটছে তাদের।

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন রিজভী। খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কারাবন্দি নেতাদের তালিকা তুলে ধরেন রিজভী। তিনি দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা 'মিথ্যা-বানোয়াট' মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

রিজভী বলেন, জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে, ভোটের অধিকার আদায়ে বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে সক্রিয় আছে।

রিজভী আরও বলেন, দুই দিন আগে পত্রিকায় দেখেছেন, 'ডামি সরকারের' পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ উগান্ডায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে নাকি তার দেশের সম্পর্ক গভীর থেকে আরও গভীর হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা আংশিক সত্য। সম্পর্ক গভীর হয়েছে, তবে তা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়, আওয়ামী লীগের সঙ্গে। ভারতের অযাচিত হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের জনগণ গণতন্ত্র, বাক স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার হারিয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে