সংবিধান সংস্কার বিষয়ে সাধারণ নাগরিকরা যেন মতামত ও প্রস্তাব দিতে পারে, সে জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করতে যাচ্ছে এ বিষয়ে গঠন করা কমিশন। মঙ্গলবার থেকে এই ওয়েবসাইট কার্যকর হবে।
রোববার বিকালে জাতীয় সংসদের এলডি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান আলী রীয়াজ।
সংস্কারের সুপারিশ প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশন সরাসরি আলোচনা করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের সনির্বন্ধ অনুরোধ করব লিখিত মতামত এবং সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানোর জন্য।'
কেন কমিশন দলগুলোর সঙ্গে বসবে না, সে কারণ ব্যাখ্যা করে আলী রিয়াজ বলেন, 'সরকার বিভিন্ন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। ফলে কমিশনগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করবে না। কিন্তু তাদের দেওয়া প্রতিটি লিখিত প্রস্তাব ও মতামত কমিশন নিবিড়ভাবে পর্যালোচনা করবে এবং কমিশনের সুপারিশে তার যথাসাধ্য প্রতিফলন ঘটাতে সচেষ্ট থাকবে।'
সংবিধান বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, আইনজীবী, সিভিল সোসাইটি ও তাদের সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, তরুণ চিন্তাবিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কমিশন আলোচনা করবে এবং তাদের কাছ থেকে লিখিত প্রস্তাব আহ্বান করবে।
তিনি আরও বলেন, 'বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রতিনিধিদের সঙ্গেও আলোচনা করা হবে। আমরা আশা করছি যে আগামী সপ্তাহ থেকেই অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে সক্ষম হবো।'
ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীদের কোনো পরামর্শ কমিশন নেবে না জানিয়ে আলী রিয়াজ বলেন, ''যেসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান বা দল জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যথানের সময় 'সক্রিয়ভাবে' হত্যাকান্ডে যুক্ত থেকেছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে হত্যাকান্ড ও নিপীড়নকে সমর্থন করেছে, 'ফ্যাসিবাদী' কার্যক্রমকে বৈধতা প্রদানে সাহায্য করেছে, কমিশন সেইসব ব্যক্তি, সংগঠন, সংস্থা, প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার প্রস্তাবের সুপারিশ তৈরিতে যুক্ত না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।''
তীব্র গণ-আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনারের পতনের প্রেক্ষাপটে অন্তর্র্বর্তী সরকার বেশ কিছু বিষয়ে সংস্কারে কমিশন গঠন করেছে। এর একটি সংবিধান সংস্কার কমিশন।
শুরুতে খ্যাতনামা আইনজীবী শাহদীন মালিককে এই কমিশনের প্রধান করা হলেও পরে তিনি সরে দাঁড়ান। পরে দায়িত্ব দেওয়া হয় আলী রিয়াজকে, যিনি এর আগে সংবিধান নতুন করে লেখার কথা বলেছিলেন।
এই কমিশনকে 'জনপ্রতিনিধিত্বশীল' ও 'কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জনগণের ক্ষমতায়ন' নিশ্চিত করতে দেশের বিরাজমান সংবিধান পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে।
সংস্কারের পরিধি কী সে প্রসঙ্গে আলী রীয়াজ 'বর্তমান সংবিধান পর্যালোচনাসহ জন আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনের লক্ষ্যে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিমার্জন, পুনর্বিন্যাস এবং পুনর্লিখন' এর কথা বলেন।
সংবিধান সংস্কারের পর বাস্তবায়ন এই সরকার করবে কি না এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, 'এটা একেবারেই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। শুধু ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে আমাদেরকে আমাকে কমিশনে রাখা হয়েছে। সেই হিসেবে আমি বলতে পারি, অবশ্যই এই সরকার করবে। কেন করবে না! এই সরকার ছাড়া কেউ এটা করবে না।'
সংবাদ সম্মেলনে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, মোহাম্মদ ইকরামুল হক, শরীফ ভূঁইয়া, আইনজীবী ইমরান সিদ্দিক, এম মঈন আলম ফিরোজী ও মো. মুসতাইন বিলস্নাহ উপস্থিত ছিলেন।