রোববার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নোবিপ্রবি হল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী
  ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০০:০০
নোবিপ্রবি হল থেকে অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই গ্রম্নপের সংঘর্ষের ঘটনার পর সোমবার অভিযান চালিয়ে ছাত্রাবাস থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয় -যাযাদি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের বিবদমান দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার পর ছাত্র হল থেকে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, গাঁজা এবং মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।

সোমবার দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাকারিয়ার নেতৃত্বে শতাধিক পুলিশ ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হলে এই অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হল প্রভোস্ট এবং শিক্ষক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

1

এ ব্যাপারে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ নাছের জনি জানান, প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র, গাঁজা এবং মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে বড় কিরিজ, চাপাতি, দা, বটি, রড, লাঠি ও হাতুড়ি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষকদের ওপর হামলা, ছাত্র হলে সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অস্ত্র এবং মাদক রাখার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোমবার বিকালে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ঘটনার সঙ্গে জড়িদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত পরীক্ষা ও ক্লাসবর্জনের ঘোষণা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ছাত্র হল বন্ধ ঘোষণার পর ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া অযৌক্তিক বলে মনে করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হলে আসন সংখ্যা ৩৪৮টি। এরমধ্যে বৈধভাবে সিট বরাদ্দ নিয়ে থাকছে ১৯ জন। বৈধ, অবৈধ এবং বহিরাগত মিলিয়ে হলটিতে দীর্ঘদিন থেকে পাঁচ শতাধিক ছাত্র অবস্থান করে আসছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য প্রফেসর ড. দিদার-উল-আলম ছাত্র হলে অস্ত্র রাখা এবং সংঘর্ষ ও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সিগারেট খাওয়াকে কেন্দ্র করে গত শনিবার রাতে ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রবিন ও সাধারণ সম্পাদক ধ্রম্নব'র সমর্থকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ নিয়ে রোববার সন্ধ্যায় দুইপক্ষের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বৈঠকে বসে। বৈঠক চলাকালে রাত ৮টার দিকে ছাত্রলীগের দুইপক্ষের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় ক্যাম্পাসে হাতবোমা বিস্ফোরণ ও ভাঙচুর চালানো হয়। এতে দুই শিক্ষকসহ ছাত্রলীগের দুইপক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হলের প্রভোস্ট কাওসার হোসেন জানান, গত শনি ও রোববার ছাত্রলীগের দুইপক্ষের সংঘর্ষের সময় ছাত্র হলে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় হল প্রভোস্টকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি এবং কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান গাজী মো. মহসিনকে প্রধান করে সাত সদস্যের আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি সভা করে ছাত্র হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। সংঘর্ষ এবং ছাত্র হলে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্তে পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় আহত আবদুল মালেক উকিল ও হলের প্রভোস্ট ড. ফিরোজ আহমেদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সোমবার সকালে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর জানান, সংঘর্ষের পর সাধারণ ছাত্রদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ছাত্রাবাস ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। হলটিতে দীর্ঘদিন থেকে সিট বরাদ্দ না পাওয়ার পরও বেশ কিছু ছাত্র অবস্থান করে আসছে জানান তিনি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে