সাবিনারা প্রায়ই খবরের শিরোনাম হন বকেয়া বেতনের ইসু্যতে। সাবিনারা সাফ শিরোপা মিশনে মধ্য অক্টোবরে রওনা হয়েছিলেন সেপ্টেম্বর মাসের বেতন ও বিগত চার ম্যাচ ফি বকেয়া রেখে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাফুফে বকেয়া নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশে নারী ফুটবল দল দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন।
শুধু বাংলাদেশই নয় দক্ষিণ এশিয়ায় আরও অনেক দেশেই নারী ফুটবলাররা সম্মানী পেয়ে থাকেন। মাসিক বেতনের অঙ্কে সাবিনারা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর চেয়ে সম্মানী বেশি পেয়ে থাকেন। নেপাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন আনফার চুক্তিতে থাকা প্রত্যেক নারী ফুটবলার মাসে ৩০ হাজার রুপি সম্মানী দিয়ে থাকে যা আনফার নিজস্ব ফান্ড থেকেই দেওয়া হয়। নেপালে ফুটবল অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রতি ম্যাচেই অনেক দর্শকের আগমন ঘটে। টিকিট বিক্রি থেকে ভালো আয় হয় নেপাল ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের। সেই আয় থেকেও নারী ফুটবলাররা লাভবান হন। টিকিট বিক্রির ২০ শতাংশ নারী ফুটবলাররা পেয়ে থাকেন। যেমন এবার নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার রুপি নারী ফুটবলারদের মধ্যে সমবণ্টন করা হচ্ছে। চলতি বছর আনফা মেয়েদের মাসিক বেতন ১৮ হাজার রুপি থেকে ৩০ হাজার রুপিতে উন্নীত করে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই ১৮ হাজার রুপি মাসিক সম্মানী পেয়ে এসেছেন নারী ফুটবলাররা। নেপালের অধিকাংশ ফুটবলার বিভিন্ন সার্ভিস সংস্থার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। সেই সংস্থা থেকেও সম্মানী পেয়ে থাকেন তারা।
দক্ষিণ এশিয়ার নারী ফুটবলে এক সময় ছিল ভারতের আধিপত্য। ২০১০-১৯ পর্যন্ত সাফের সব আসরের চ্যাম্পিয়ন। তবে গত দুই আসরে ফাইনালেই খেলতে পারছে না। ভারতের নারী ফুটবলারদের অবশ্য মাসিক কোনো সম্মানী নেই। ক্লাব থেকেই তারা আয় করে থাকে। এছাড়া জাতীয় দলের ক্যাম্প হলে প্রতিদিন দৈনিক ভাতা রয়েছে আর ম্যাচ খেললে একটি ফি আছে।
নেপাল-ভারতের ফুটবলাররা ক্লাব, সার্ভিসেস সংস্থার মাধ্যমে ভালো অঙ্ক আয় করে। পুরুষ ফুটবলাররা বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত থাকলেও নারী ফুটবলাররা নেই। ফলে আয়ের একটি খাত থাকে ক্লাব ফুটবল। সেটাও অনিয়মিত এবং বসুন্ধরা কিংস না খেলায় বাংলাদেশের মেয়েরা আর্থিকভাবে তেমন লাভবান হন না। দক্ষিণ এশিয়ায় ফুটবলে সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশটির নাম ভুটান। সেই ভুটানেও রয়েছে মাসিক বেতন পদ্ধতি। ২০২১ সালের মাঝামাঝি থেকে ফেডারেশনের মাধ্যমে মাসিক বেতন পেয়ে আসছেন ভুটানের ফুটবলাররা। এই অর্থ মূলত সরকার থেকে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক ম্যাচে যারা খেলে শুধু তারা ম্যাচ ফি, বোনাস পেয়ে থাকে। জাতীয় দলের ক্যাম্পে থাকা ফুটবলারদের কেউ ইনজুরিতে পড়লে চিকিৎসা ব্যয় ফেডারেশনই প্রদান করে। ২০২২ সালে প্রথম সাফ জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন কৃষ্ণা রাণী সরকার। তার জোড়া গোলে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়। সেই কৃষ্ণা এক বছর ইনজুরিতে ভুগছিলেন। সেই সময় তার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে নারী উইংয়ের প্রধান উল্টো কৃষ্ণাকে চাপে রেখে বলেছিলেন আনফিট খেলোয়াড় ক্যাম্পে রেখে সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। এই মন্তব্যের পর তীব্র সমালোচনার মুখে বাফুফে কৃষ্ণাকে ভারতে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের মূল পর্ব নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। এর পর থেকেই মূলত দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প শুরু হয়। প্রথম দিকে নারী ফুটবলারদের মাসিক কোনো সম্মানী ছিল না। বছর খানেক পর থেকে অধিনায়ক সাবিনা খাতুন ২০ হাজার এবং বাকিরা পেতেন ১০ হাজার করে। ২০২২ সালের সাফ জেতা আগ পর্যন্ত সম্মানীর অঙ্ক এ রকমই ছিল। ২০২৩ সালের আগস্টে বাফুফে আনুষ্ঠানিকভাবে নারী ফুটবলারদের সঙ্গে চুক্তি করে। সেই চুক্তিতে সাবিনা, সানজিদা, কৃষ্ণা, মারিয়ার মতো সিনিয়র ফুটবলাররা ৫০ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেয়ে থাকেন। ১৪ জন ৩০ হাজার আর দুই জন ১৫ হাজার টাকা সম্মানী নির্ধারিত হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ছয় মাসের জন্য প্রাথমিক চুক্তি হয়। সেই চুক্তির পরও মেয়েদের বেতন অনিয়মত থাকে। ২০২৪ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে পুনরায় ৬ মাসের চুক্তির সময় বাফুফে সাধারণ সম্পাদক বেতন বিলম্বিত না হওয়ার কথা জানান কারণ ফিফা ফান্ড থেকে প্রদান করা হবে। এখন বেতন বিলম্বের কারণ সম্পর্কে ফেডারেশনের ব্যাখ্যা ফিফার সঙ্গে প্রক্রিয়ায় বিলম্ব হয়।