বিশ্ববাজারে সাধারণ কফির দাম গত এক বছরে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। এছাড়াও বিশেষ জাতের কফি বরাবরই উচ্চমূল্যে বিক্রি হয় যা স্বাদ ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। সিয়াটল থেকে সিউল পর্যন্ত একে উৎকৃষ্ট ওয়াইনের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবুও উৎপাদকরা এর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। ক্রমাগত উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট, চাষের ব্যবহৃত সারের উচ্চ মূল্যসহ জলবায়ু পরিবর্তনকে এর কারণ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, কফির উচ্চমূল্যের কারণে ক্রেতারা তুলনামূলক সস্তা পানীয়, যেমনু সোডা বা এনার্জি ড্রিংকের দিকে ঝুঁকতে পারেন। ফলে কমে যেতে পারে কফির চাহিদা। তবে কফির দাম বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তন যা বিশ্বব্যাপী কফির উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ দুই কফি উৎপাদক দেশ ব্রাজিল ও ভিয়েতনামে তাপমাত্রা বৃদ্ধি, খরা ও অতিবৃষ্টি কফি চাষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ-পশ্চিম হন্ডুরাসে ডিসেম্বরে ও জানুয়ারিতে অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে ফসল নষ্ট হয়েছে। এরপর বৃষ্টি দেরিতে হওয়ায় শ্রমিকরা সময়মতো কফি তুলতে পারেননি। ফলে রেকর্ড মূল্যে কফি বিক্রির সুযোগ থাকলেও তা তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে ওঠার বদলে নতুন সমস্যার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে অনেকে কফির দাম বৃদ্ধিকে দীর্ঘদিনের বৈষম্য ও পরিবেশগত ক্ষতির বিরুদ্ধে ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে কফি উৎপাদকরা ন্যায্য মূল্য পাননি, এখন সেই পরিস্থিতি বদলাতে পারে।
্তুফেয়ারট্রেড আমেরিকা্থর নির্বাহী পরিচালক আমান্ডা আর্কিলা বলেন, ুপুরনো উৎপাদন পদ্ধতিগুলো মাটির উর্বরতা নষ্ট করেছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে ব্যর্থ হয়েছে। কফি শিল্পে ভবিষ্যতে বিনিয়োগ করতে চাইলে আমাদের অবশ্যই উচ্চমূল্যের দিকে যেতে হবে।চ্
বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ কফি উৎপাদিত হয় ১ কোটি ২৫ লাখ ক্ষুদ্র খামারে, যেগুলোর অধিকাংশের আয়তন ৫০ একরেরও কম। বিশ্ব কফি গবেষণা সংস্থার তথ্যানুসারে, এসব ক্ষুদ্র উৎপাদকের প্রায় ৪৪ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।
মহামারি যেমন বিশ্ব সরবরাহব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে দিয়েছিল এবং ওষুধ থেকে চিপস পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সরবরাহ নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছিল, তেমনি কফির মূল্যবৃদ্ধিও এর উৎপাদন পরিস্থিতির প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নতুন বাস্তবতা কফি উৎপাদকদের ভাগ্যে পরিবর্তন আনতে পারবে কি না।
কফির ইতিহাস এক অর্থে শোষণেরই ইতিহাস। সরবরাহ বাড়িয়ে দাম কমানোর লক্ষ্যে এই শোষণ যুগ যুগ ধরে ঘটেছে। ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায় কফির বাগান তৈরি করেছিল ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার চাহিদা মেটাতে। তারা আফ্রিকান শ্রমিকদের দাস বানিয়ে খাটিয়েছে, স্থানীয়দের জমি কেড়ে নিয়েছে, এবং বন-জঙ্গল নির্বিচারে কেটে কফির গাছ লাগিয়েছে।