মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

​ গাংনীতে কয়েন এখন গলার কাঁটা

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী
  ২১ অক্টোবর ২০২১, ১৭:৫০
​  গাংনীতে কয়েন এখন গলার কাঁটা
​ গাংনীতে কয়েন এখন গলার কাঁটা

একসময় ছেলে-বুড়ো সবাই বাজারে প্রচলিত কয়েন সংগ্রহ করে মাটির ব্যাংকে জমা করত। অনেকদিন পর তা ভেঙে কয়েন দিয়ে কিনত নানা ধরনের জিনিসপত্র। সে সময় কয়েনের কদর থাকলেও বর্তমানে মেহেরপুরের গাংনী অঞ্চলে সবার কাছে কয়েন এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

‘আইন অনুযায়ী বিনিময়ের সময় কাগজি নোটের পাশাপাশি বাজারে প্রচলিত সব মূল্যমানের কয়েন নিতে সবাই বাধ্য। কিন্তু বাস্তবে লেনদেনের সময় কয়েন নিতে সবাই অনীহা দেখায়। ফলে ১ ও ২ টাকার কয়েন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। ব্যবসায়ীর কাছে হাজার টাকার কয়েন পড়ে আছে। রিকশা বা বাসভাড়া, মুদি দোকানের কেনাকাটায় কয়েন নিতে অনীহা। এমনকি ভিক্ষুকরাও এক টাকা দুই টাকার কয়েন নিতে নারাজ। তবে এসব কয়েনের বদলে দোকানিরা ক্রেতাদেরকে দিচ্ছেন চকলেট।

১৯৭৩ সালে দেশে সর্বপ্রথম ৫, ১০, ২৫ এবং ৫০ পয়সা মূল্যের ধাতব মুদ্রার প্রচলন হয়। এরপর ১৯৭৪ সালে ১ পয়সা এবং তারওপরে ১৯৭৫ সালে ‘নিকেল কপার’ দিয়ে তৈরি ১ টাকার কয়েন ইস্যু হয়। এরপর ২০০৪ সালে ‘স্টিল’ দুই টাকার কয়েন ইস্যু হয়। পরে প্রচলিত হয় ৫ টাকার কয়েন। দেশে মূল্যস্ফীতির পেটে আগেই চলে গেছে ১, ৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সার কয়েন। তবে লেনদেনে ৫ টাকার কয়েনের ব্যবহার থাকলেও এক টাকা ও দুই টাকার কয়েনের প্রচলন একেবারই নেই। চার টাকা মূল্যের কোনো পণ্য কিনে পাঁচ টাকার কয়েন বা নোট দিলে দোকানিরা ভাংতি নেই বলে এক টাকা ফেরত দেন না। আবার অনেক সময় এক টাকার বদলে ধরিয়ে দেওয়া হয় একটি চকলেট।

কয়েনের ব্যাপারে পাওয়া গেছে বিচিত্র সব তথ্য। অনেকে বলছেন, পকেটে বা টাকা রাখার ব্যাগে কয়েন রাখতে সমস্যা হয় বলে মানুষের মধ্যে কয়েন ব্যবহারের আগ্রহ কমেছে। কেউ আবার দায়ী করছেন ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকগুলো কোনো কারণ ছাড়াই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কয়েন নিতে চায় না। কয়েনের বদলে কাগজের নোট ব্যবহারেই সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেশি। যদিও লেনদেনে ১ ও ২ টাকার কয়েনের গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। তারপরও কয়েন নিতে আগ্রহ দেখায় না কেউ।

চুয়াডাঙ্গার বড়গাংনী থেকে আসা পান ব্যবসায়ী সেন্টু জানান, তিনি মুদি দোকান থেকে পণ্য কিনে এক টাকা ও দুই টাকার কয়েন দিলে দোকানি তা নিতে অস্বীকার করে। দোকানির ভাষ্য, এসব কয়েন গাংনীতে চলে না। হেমায়েতপুরের মুদি ব্যবসায়ী আনিছ উদ্দীন জানান, কয়েনের প্রচলন একেবারই নেই। ফকিররাও ভিক্ষা নিতে চায় না। তাই কয়েনের বদলে এখন দোকানিরা ব্যবহার করে চকলেট।

ব্যবসায়ীরা জানালেন, তাদের কাছে হাজার টাকার কয়েন পড়ে রয়েছে। রিকশা বা বাস ভাড়া, মুদি দোকানের কেনাকাটায় কয়েন নিতে অনীহা। অনেক ব্যবসায়ী আবার দায়ী করছেন ব্যাংকগুলোকে। ব্যাংকগুলো কোনো কারণ ছাড়াই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কয়েন নিতে চায় না। কয়েনের বদলে কাগজের নোট ব্যবহারেই সাধারণ মানুষের আগ্রহ বেশি। যদিও লেনদেনে এক ও দুই টাকার কয়েনের গুরুত্ব কোনো অংশেই কম নয়। এরপরও কয়েন নিতে আগ্রহ দেখান না কেউ।

গাংনী সোনালী ব্যাংক বাজার শাখার ব্যবস্থাপক হাসেম উদ্দীন বাবু জানান, ব্যাংকে কয়েন জমা নেওয়া হয়। মূলত টাকার মান কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা কয়েন নিতে চায় না। এমনকি ভিক্ষুকরাও নেয় না। এক টাকা মানের জিনিসপত্র বাজারে একেবারই কম ফলে এর প্রচলনও কম।

মেহেরপুর ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মামুনার রশিদ জানান, ব্যাংকে এক ও দুই টাকার পর্যাপ্ত কয়েন রয়েছে। জেলায় সরকারের পক্ষ থেকে এক এবং দুই টাকার কয়েন চালুর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ সরকারের অলস টাকা পড়ে রয়েছে ব্যাংক এবং মানুষের বাসাবাড়িতে। কয়েন বাড়িতে পড়ে থাকার কারণে অর্থনৈতিক গতিশীলতা কমেছে।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে