শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১
বইমেলার তৃতীয় দিনে এলো ৭৪ নতুন বই

আবর্জনা-দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ দর্শনার্থী

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৪
আবর্জনা-দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ দর্শনার্থী

অমর একুশে বইমেলার তৃতীয় দিন ছিল শনিবার। ছুটির দিন হওয়ায় শুক্রবারের মতো এদিনেও মেলার দুয়ার খুলে দেওয়া হয় সকাল ১১টায়। ১৬ বছর পর এ বছর বইমেলার সার্বিক আয়োজনের দায়িত্ব এককভাবে বাংলা একাডেমির। মেলা ঘুরে দেখা যায়, এখনো চলছে মসজিদ, খাবার হোটেল নির্মাণের কাজ। অন্যদিকে, মেলায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য এখনো বসানো হয়নি ডাস্টবিন। এতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ দর্শনার্থী ও পাঠক।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, যত্রতত্র পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। মেলা প্রাঙ্গণের কোথাও বিন পাওয়া যায়নি। উদ্যানের লেকের পাশে পড়ে আছে বিরিয়ানির প্যাকেট, ওয়ান টাইম প্লেট, কপির মগসহ খাবারের বিভিন্ন উচ্ছিষ্ট। ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের এসব প্লেট পড়ে আছে লেকের পানিতেও। এছাড়া কিছু স্টলের পাশেই ব্যাগ ও বস্তায় ভরে ফেলে রাখা হয়েছে আবর্জনা।

জাগৃতি প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী জাহিদ বলেন, ‘অন্যবার তো ডাস্টবিন দেখি। এবার এখনো কোনো ডাস্টবিন বসানো হয়নি। আমাদের স্টলের ভেতরে একটা বালতি আছে, সেখানে ময়লা রাখি। সন্ধ্যায় এসে হয়তো ময়লা কেউ নিয়ে যাবে।’

নওরোজ প্রকাশনীর নাঈমুর রহমান বলেন, ‘কোথাও তো ডাস্টবিন নেই। যে যেখানে পারছেন উচ্ছিষ্ট ফেলছেন। অনেক দর্শনার্থী এসে আমাদের জিজ্ঞেস করছেন, ময়লা ফেলবেন কোথায়? এভাবে মেলার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।’

মেলায় আসা দর্শনার্থী নিহারুণ তামান্না বলেন, ‘কোথাও বিন দেখছি না। চিপসের প্যাকেট পলিথিন, যেখানে সেখানে পড়ে আছে। হাঁটার সময় এসব পায়ের মধ্যে এসে পড়ছে।’

আরেক দর্শনার্থী মো. ইকবাল বলেন, ‘দুপুরে এসে মেলায় কফি খেয়েছি। কিন্তু ওয়ান টাইম কপি মগ কোথায় ফেলব, দুই মিনিট খুঁজেও বিন পায়নি। পরে মঞ্চের পাশে গিয়ে ফেলেছি। বিভিন্ন জায়গায় কাঠ-রঙ পড়ে আছে। এভাবে মেলার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।’

এ বছর বাংলা একাডেমি একাই আয়োজন করছে। কোনো ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টকে দায়িত্ব দেয়নি। তাই মেলা কর্তৃপক্ষ এখনো সবকিছু গুছিয়ে উঠতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রকাশক।

এ ব্যাপারে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব ডক্টর কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক কাজ বাকি আছে। কাল (রোববার) থেকেই ডাস্টবিন থাকবে।

এবার বইমেলা শুরুর পরই পড়েছে সাপ্তাহিক ছুটি। এতে শুরুর দিনের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েনি। শনিবার তৃতীয় দিনেও পাঠক-দর্শনার্থীতে মুখরিত বইমেলা। শিশুপ্রহর ঘিরে মেলায় দিনভর কচিকাঁচাদের ভিড়। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই ছুটির দিনে এসেছেন সব বয়সি মানুষ। সব মিলিয়ে বইমেলায় বেশ ভিড়।

তবে পাঠক-দর্শনার্থীদের এমন আনাগোনার সঙ্গে বিক্রির কোনো মিল নেই বলে জানিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রেতারা। প্রিয়মুখ প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, ‘এবার শুরু থেকে মেলায় মানুষ আসছে, ভালোই লাগছে। তারা বই খুলছেন, দেখছেন, চলে যাচ্ছেন। ভিড় থাকলেও সেই রকম বিক্রি নেই।’

এদিকে বাংলা একাডেমির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শনিবারও বইমেলায় আজ ছিল শিশুপ্রহর। এছাড়া এদিন নতুন বই এসেছে ৭৪টি। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘দ্বিশতজন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : মাইকেল মধুসূদন দত্ত’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকউল্লাহ খান। আলোচনায় অংশ নেন খসরু পারভেজ এবং হোসনে আরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুহম্মদ নূরুল হুদা।

প্রাবন্ধিক বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যে মাইকেল মধুসূদন-বিচার কেবল মননশীল সাহিত্য-সমালোচনার বিষয় নয়, সমগ্র ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্যক্তিসত্তা, সমাজসত্তা ও সৃষ্টিশীলতার জাগরণ এবং সাহিত্যের প্রায় সবগুলো রূপের উন্মেষ ও প্রতিষ্ঠার বহুমুখী পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সাফল্যের ইতিবৃত্ত। নাটক, আখ্যান-কাব্য, গীতিকবিতা, চতুর্দশপদী, পত্র-কাব্য, গ্রিক মহাকাব্যের গদ্যানুবাদ, ইংরেজি রচনা ও চিঠিপত্র মিলিয়ে তার সৃষ্টিশীল প্রতিভার প্রকাশরূপ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়িত হয়েছে। তার কিংবদন্তিতুল্য জীবন ও কর্মের সম্পূর্ণ বাস্তবসম্মত রূপ অঙ্কনের প্রয়াস আজও চলমান।’

আলোচকরা বলেন, ‘মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন তার যুগের থেকেও অগ্রসর। বাংলা সাহিত্য অঙ্গনে তিনি এনেছিলেন আধুনিকতার যুগ। রামায়ণের কাহিনিকে অবলম্বন করে রাবণকে নতুনভাবে আমাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। চিরায়ত সাহিত্যের প্রতি তার বিশেষ অনুরাগ থাকলেও তার সাহিত্যে চিরায়ত ও রোমান্টিকতার সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। মধুসূদনের ব্যক্তিজীবন ও সাহিত্যজীবনের পাশাপাশি তার সাহিত্যকর্ম নিয়েও গভীরভাবে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।’

সভাপতির বক্তব্যে মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের আদি আধুনিক কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। তিনি এমন একজন সৃষ্টিশীল সত্তা, যিনি বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেছিলেন, বিভিন্ন ভাষার মৌলিক সাহিত্য পাঠ করেছিলেন এবং নিজস্ব মৌলিকতা সৃষ্টি করেছিলেন। তার এই মৌলিকতাকেই আমরা বলি আধুনিকতা। দ্বিশততম জন্মবর্ষে তাকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করা অবশ্যই প্রাসঙ্গিক।’

এছাড়া আজ ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক সালেহা চৌধুরী, লালন গবেষক আবু ইসহাক হোসেন এবং কবি ও প্রাবন্ধিক মামুন মুস্তাফা।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি নাসির আহমেদ, তারিক সুজাত, শাহনাজ মুন্নী এবং নাহার মনিকা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মিলন কান্তি দে, শাহাদাৎ হোসেন নিপু এবং আফরোজা কণা। এছাড়া ছিল ঝর্ণা আলমগীর-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং লক্ষ্মীকান্ত হাওলাদার-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শেখ রাসেল ললিতকলা একাডেমি’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সাজেদ আকবর, সালমা আকবর, লাইসা আহমেদ লিসা, অনুরাধা মণ্ডল, মুহা. আব্দুর রশীদ, সঞ্চিতা রাখি এবং পাপড়ি বড়ুয়া। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), দেবা পাল (কী-বোর্ড), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং অসিত বিশ্বাস (এসরাজ)।

আজ বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : কাঙাল হরিনাথ মজুমদার’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তপন মজুমদার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন জাফর ওয়াজেদ এবং আমিনুর রহমান সুলতান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মুনতাসীর মামুন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে