শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বইমেলায় বিদায়ের সুর   

বীরেন মুখার্জী
  ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৭
ছবি-যাযাদি

আগামীকাল পর্দা নামছে মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার। শেষ সময়ে বইমেলায় বেজে উঠেছে বিদায়ের সুর। মঙ্গলবার কর্মদিবস থাকায় মেলা প্রাঙ্গণে আগের দিনের তুলনায় পাঠকের ভিড় কিছুটা কম ছিল। তবে কবি-লেখকের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন যেসব বইপ্রেমী-দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন, তাদের বেশিরভাগকেই বই কিনতে দেখা গেছে। এ বছর শুরু থেকেই বইমেলা ছিল দর্শনার্থী ঠাসা। এরপরও মেলার বেচাকেনা নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কোনো কোনো প্রকাশকের মুখে মেলা নিয়ে ছিল সন্তুষ্টির আভাস, আবার কোনো কোনো প্রকাশক বলছেন প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হয়নি।

প্রতি বছরই বইমেলাকে ঘিরে প্রকাশিত হয় কয়েক হাজার নতুন বই। কিন্তু এর মধ্যে ‘মানসম্পন্ন’ বই খুঁজে পাওয়ার প্রক্রিয়াটি সহজ নয়। সাধারণত মেলা পরিচালনা কমিটি থেকে ‘মানসম্পন্ন’ বই খোঁজার জন্য একটি উপকমিটি করে দেওয়া হয়। মেলার সমাপনী দিন তাদের তথ্য থেকে মেলা কমিটি জানায়, কতটি বই ‘মানসম্পন্ন’। তবে ২০২৩ সালে মানসম্পন্ন বইয়ের তালিকা প্রকাশ্যে আনেনি মেলা পরিচালনা কমিটি। এবার সেই তালিকা প্রকাশ করা হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম জানান, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়। মেলার সমাপনী আয়োজনে এ বিষয়ে জানানো হবে।

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত মেলার তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়েছে ৩ হাজার ৮১টি নতুন বই। বিভিন্ন স্টলে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এর বাইরেও আরও অনেক নতুন বই রয়েছে, যেগুলো তথ্যকেন্দ্রে জমা পড়েনি।

বিভিন্ন প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী, লেখক, প্রকাশক এবং বই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার মেলায় অন্তত ৫ শতাধিক নতুন বই নানাভাবে পাঠকের মাঝে আলোচিত হচ্ছে। বইপ্রেমীরা বিভিন্ন প্রকাশনী বা লেখকদের ফেসবুকে দেওয়া বিজ্ঞাপন এবং নানা উৎস থেকে নতুন বইয়ের তথ্য জানছেন এবং সেখান থেকে নিজেরা তালিকা তৈরি করে পছন্দের বই কিনছেন। এসব বইয়ের মধ্যে ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষণাধর্মী বই যেমন আছে, তেমনি অনুবাদ, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ, কবিতা, সিনেমা, নাটকের বইও আছে।

কয়েকটি স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, বেশি বিক্রি হচ্ছে উপন্যাস, থ্রিলার, অনুবাদ ও গল্পগ্রন্থ। কবি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সজল আহমেদ জানান, রাজনৈতিক বইয়ের চাহিদার বাইরে বেশি বিক্রি হচ্ছে উপন্যাস। গল্প, কবিতার বইয়ের বিক্রি একটু কম। তবে প্রবন্ধ ও অনুবাদগ্রন্থের চাহিদা ভালো।

তথ্য অনুযায়ী, সংখ্যার দিক থেকে এবারও বেশি এসেছে কবিতার বই। মঙ্গলবার পর্যন্ত কবিতার বই এসেছে ১০৩৫টি। এছাড়া এদিন পর্যন্ত গবেষণাগ্রন্থ ৬৬টি, ছড়া ৯৪টি, শিশুতোষ ৬০টি, জীবনীগ্রন্থ ১১৭টি, রচনাবলি ২৯টি, মুক্তিযুদ্ধ ৬৪টি, নাটক ২৮টি, বিজ্ঞান ৪০টি, ভ্রমণ ৬০টি, ইতিহাস ৫০টি, রাজনীতি ২৪টি, স্বাস্থ্য ২৫টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ২৫টি, রম্য/ধাঁধা ২৭টি, ধর্মীয় ৫৪টি, অনুবাদ ৫১টি, অভিধান ১৯টি, সায়েন্স ফিকশন ৩৩টি এবং অন্যান্য ১৮৫টি।

এবছর বাংলা একাডেমি এনেছে ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন’। গবেষণাধর্মী এ বইয়ে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। ড. এম আবদুল আলীমের গবেষণাধর্মী বই ‘ভাষা আন্দোলনে কংগ্রেস’ প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার লেখা ‘প্রাণের মিনার শহীদ মিনার’ বই প্রকাশ করেছে এডুসেন্ট্রিক। মঙ্গলবার কবি বিনয় মজুমদারের ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’ ও আবদুল মান্নান সৈয়দ সম্পাদিত ‘শ্রেষ্ঠ গল্প জীবনানন্দ’ প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য।

আবুল আহসান চৌধুরী সম্পাদিত ‘অবিদ্যার অন্তঃপুরে নিষিদ্ধ পল্লীর অন্তরঙ্গ কথকতা’ বইটি প্রকাশ করেছে বাতিঘর। দিব্যপ্রকাশ এনেছে ‘ঢাকার বাঈজি-শিশির সমতটী’ এবং পাঠক সমাবেশ প্রকাশ করেছে আহমাদ মোস্তফা কামালের উপন্যাস ‘জলের অক্ষরে লেখা’।

জার্নিম্যান বুকস এনেছে উর্দু, হিন্দি, সিন্ধি, তামিল, ইংরেজি, পাঞ্জাবি, মারাঠি, কানাড়ি ও মালয়ালাম ভাষায় লেখা দেশভাগের গল্পের চারটি আলাদা অনুবাদ বই। গল্পগুলো অনুবাদ করেছেন জাভেদ ইকবাল ও মোস্তফা আজিজ জয়। পাঠক সমাবেশ এনেছে আর্জেন্টিনার কথাসাহিত্যিক আদলফো কাসারেসের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি ‘মোরেলের উদ্ভাবন’। স্প্যানিশ থেকে বইটি অনুবাদ করেছেন আনিসুজ জামান।

এবছর ঐতিহ্য সর্বোচ্চসংখ্যক অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। শুধু এ মেলায়ই তারা এনেছে ২৯টি অনূদিত বই। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের দুটি বই- ‘মৃত্যুর কড়া নাড়া’ আর ‘গোত্রপিতার হেমন্ত’। অনুবাদ করেছেন যথাক্রমে বেলাল চৌধুরী ও অদিতি ফাল্গুনী।

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ জানায়, মঙ্গলবার মেলায় ৯৫টি নতুন বই এসেছে। এছাড়া এদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : সেলিম আল দীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লুৎফর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন রশীদ হারুন এবং জাহিদ রিপন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন নাসিরউদ্দিন ইউসুফ।

বইমেলায় হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ :বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় হুমায়ুন আজাদ দিবস পালন উপলক্ষে লেখক-পাঠক ফোরামের উদ্যোগে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার তথ্যকেন্দ্রের সামনে এক স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। বিশিষ্ট প্রকাশক ওসমান গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। বক্তব্য রাখেন কবি মোহন রায়হান, কবি আসলাম সানী, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক রেজানুর রহমান, শিশুসাহিত্যিক মানজুর মুহাম্মদ, কবি রণক মুহম্মদ রফিক এবং গবেষক অমল গাইন।

বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন : বাংলা একাডেমি লেখক পর্ষদের উদ্যোগে সাহিত্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রওশন ঝুনু, হাসনাইন সাজ্জাদী, মাহী ফ্লোরা এবং মোস্তাফিজুর রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী পারভেজ চৌধুরী, কুমার লাভলু, নাজমুল আহসান এবং মুজাহিদুল ইসলাম। এছাড়া ছিল সালাউদ্দিন বাদলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী’, মোশাররফ হোসেনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘দৃষ্টি’, মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ভাওয়াইয়া অঙ্গন’ এবং মৈত্রী সরকারের পরিচালনায় নৃত্যসংগঠন ‘স্বপ্নবিকাশ কলা কেন্দ্র’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী লিলি ইসলাম, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, চঞ্চল খান, অণিমা রায়, কামাল আহমেদ, আশরাফ মাহমুদ, সালমা চৌধুরী, মীরা মণ্ডল, ঝুমা খন্দকার, শেলী চন্দ, ইরাবতী মণ্ডল এবং সেলিনা আলম। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার (তবলা), রবিন্স চৌধুরী (কী-বোর্ড), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং রিচার্ড (গিটার)।

আজকের অনুষ্ঠান : বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্মরণ : মুনীর চৌধুরী এবং স্মরণ : হুমায়ুন আজাদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন যথাক্রমে ফিরোজা ইয়াসমীন এবং হাকিম আরিফ। আলোচনায় অংশ নেবেন আবদুস সেলিম, ইউসুফ হাসান অর্ক, ওসমান গনি এবং মৌলি আজাদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে