বৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

অপ্রত্যাশিত কিন্তু দেরিতে আসা এক শুভেচ্ছা চিঠি

জেরিন চৌধুরী শারমিন
  ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:২৪
অপ্রত্যাশিত কিন্তু দেরিতে আসা এক শুভেচ্ছা চিঠি
ছবি সংগৃহিত

প্রিয় তৌফিক সুলতান স্যার,

আপনার চোখ পড়েছে কি? হয়তো পত্রিকার পাতায় চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এই চিঠিটা নজরে এলো। যদি এসে থাকে, তবে একটু অবাক হচ্ছেন, তাই না? আমি জানি, আপনি এই নামটা ভুলে যাননি—জেরিন চৌধুরী শারমিন।

স্যার, একটা ভয়ংকর সত্য স্বীকার করি? আমি ভুলে গিয়েছিলাম! আপনার জন্মদিন ছিলো ৪ ফেব্রুয়ারি, আর আমি তা জানলাম ৫ ফেব্রুয়ারির রাত ১২টার পর, ফেসবুকের কল্যাণে। আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, আমি নিশ্চিত হতে গুগল করতে হয়েছিলো!

রকমারীতে আপনার লেখক প্রোফাইল ঘেঁটে নিশ্চিত হলাম—হ্যাঁ, ১৯৯৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আপনি এই পৃথিবীতে এসেছিলেন, আর আমাদের মতো শিক্ষার্থীদের জীবনে আলো জ্বালিয়েছিলেন।

স্যার, আপনি জানেন, আমি গুগল করতে গিয়ে আরও কিছু মজার তথ্য পেলাম—

১৯৭১ সালের আজকের দিনে অস্ট্রেলিয়া প্রথমবারের মতো একদিনের আন্তর্জাতিক (ODI) ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করেছিলো!

২০০৪ সালের আজকের দিনে ফেসবুক প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো!

আর ১৯৯৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি?

একজন মানুষ জন্মেছিলেন, যিনি শিক্ষক হয়েও বন্ধু, কঠোর হয়েও মমতার প্রতীক, রহস্যময় হয়েও বাস্তবের চেয়ে বেশি জীবন্ত! স্যার,

আপনাকে সবাই ভয় পেতো, আপনি জানতেন তো? সেই চোখের দিকে সোজা তাকিয়ে থাকা, সেই গম্ভীর চাহনি—আমরা ভাবতাম, আপনি হয়তো আমাদের মনের কথাও পড়ে ফেলতে পারেন! কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, যখন আপনি আমাদের মাঝে বসতেন, তখন সেই কঠোরতা কোথায় যেন হারিয়ে যেত। তখন আপনি ঠিক আমাদের মতোই একজন হয়ে যেতেন।

আপনার একটা ব্যাপার ছিল, যা আমি কখনো বুঝতে পারিনি—আপনার সেই রহস্যময় মুচকি হাসি!

কখনো রাগ করেও হাসতেন, কখনো পড়াতে পড়াতে হাসতেন, এমনকি কেউ ভুল করলেও হাসতেন। আপনার সেই হাসির পেছনে কী ছিল, স্যার?

আমরা বহুবার ভেবেছি, হয়তো আমাদের নিয়ে কোনো গোপন পরীক্ষা নিচ্ছেন! নাকি আপনি আমাদের চেয়ে অনেক আগেই সব জেনে যেতেন?

একটা কথা বলি স্যার, যেটা কখনো বলিনি?

আপনি কারও মন খারাপ সহ্য করতে পারতেন না! যদি কোনো শিক্ষার্থী দুশ্চিন্তায় থাকতো, আপনি হয়তো সেটা বুঝতেন একঝলক দেখেই। তারপর কী করতেন? কঠিন একটা প্রশ্ন করে দিতেন, যাতে সে পড়ায় মনোযোগ দেয়! বা হঠাৎ করে ক্লাসে একটা গল্প বলে সবাইকে হাসিয়ে তুলতেন। আপনি কখনো সরাসরি সান্ত্বনা দিতেন না, কিন্তু আপনার প্রতিটি আচরণেই সেই ভালোবাসা ফুটে উঠতো।

স্যার,

তিন বছর হয়ে গেলো, আপনাকে দেখিনি। জানেন, তিন বছর পরেও, আমি এখনও আপনার ক্লাসের প্রতিটি মুহূর্ত মনে করতে পারি। আপনার প্রতিটি কথা, প্রতিটি হাসি, প্রতিটি শাসন!

আজ আমি যদি আপনার সামনে থাকতাম, তাহলে এক মুহূর্ত দেরি না করে বলতাম—

শুভ জন্মদিন, প্রিয় স্যার! (হ্যাঁ, একটু দেরিতে হলেও!)

আপনার প্রতি আমাদের ভালোবাসা কখনো কমবে না। আপনি যেখানেই থাকুন, আল্লাহ আপনাকে সুস্থ ও সুখী রাখুন। একদিন হয়তো আবার দেখা হবে, সেদিন কি আবার সেই রহস্যময় হাসিটা দেখতে পাবো, স্যার?

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে