জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে ভর্তির সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে অদম্য মেধাবী ছাত্র মো. মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চলের।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ক- ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ২০২তম স্থান অর্জন করেছে মোস্তাফিজুর রহমান চঞ্চল।
আগামী ৫মে ভর্তির শেষ দিন। চঞ্চল গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ইদিলপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ চকদাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর আব্দুস ছালামের ছেলে। ৩ ভাইয়ের মধ্যে চঞ্চল দ্বিতীয়। বড় ভাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চঞ্চলের বাবা আব্দুস ছালাম একজন দিনমজুর ও পান ব্যবসায়ী ছিল। বর্তমানে ঢাকার একটি গার্মেন্টস ফাক্টরিতে চাকরী করেন তিনি। বসতভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই তাদের পরিবারের। খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করলেও কখনও হাত পাতেননি অন্যের কাছে। অবশেষে ছোট ছেলের উচ্চ শিক্ষার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করেন তার বাবা।
মোস্তাফিজুর রহমান (চঞ্চল) ২০২২ সালে উপজেলার খোর্দ্দকোমরপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ এবং ২০২৪ সালে ভাতগ্রাম স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছেন। এরপর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ক-ইউনিটে মেধা তালিকায় ২০২ তম স্থান অর্জন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পেয়েও আর্থিক সংকটে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার উচ্চ শিক্ষা।
মোস্তাফিজুর রহমান (চঞ্চল)জানান, ভবিষ্যতে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে বিসিএস ক্যাডার হতে চান। কিন্তু জীবনের শুরুতেই বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থনৈতিক দুর্বলতা। স্বপ্ন থাকলেও হয়তো টাকার অভাবে আমাকে থমকে যেতে হতে পারে।
চঞ্চলের মা বলেন, অভাবের সংসার ছেলের পড়ালেখার খরচ চালাতে পারিনা বলে, ছোট থেকেই বাবার বাড়ীতে রেখে ছিলাম, ওখানেই ওরা বড় হয় এবং এসএসসি ও এইচএসসি পাস করে।
মামা আব্দুল লতিফ ওদের দুই ভাইয়ের পড়াশুনার খরচ বহন করে আসছেন , বড় ছেলে মশিউর রহমান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে পড়ে, ছোট ছেলেও গণিতে চান্স পেয়েছে।কিন্তু আজ টাকার অভাবে ছেলেটারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অভাব অনাটনের সংসারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করার মতো কোন সামর্থ নেই। অসহায় মা আবেগপ্লুত আরো জানান,ছেলে ফোন দিয়ে বলে মা টাকা ম্যানেজ হয়েছে সময় তো আর নেই। এখন কি করবো বল। শুধু শান্তনা দিয়ে বলেছি একটু অপেক্ষা কর বাবা চেষ্টা করছি। বাবা আব্দুস ছালাম বলেন, অভাবের সংসার ওরা দুই ভাই নানা বাড়িতেই বড় হয়েছে। মামা পড়াশুনা খরচ দিয়ে এইচএসসি পাস করাইয়াছে। কতই আর সহযোগিতা করবে, ছেলে উচ্চ শিক্ষার জন্য চান্স পেলেও পড়াশুনা করানোর সামর্থ নেই আমার ।
এনিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছি। ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালাতে যখন টাকা চায় তখন বুক ফেটে কান্না চলে আসে। ছেলে জন্ম দিয়ে তার পড়াশুনার খরচ চালাতে পারছি না। এক হতভাগা বাবা আমি এই কথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে সমাজের বিত্তবানরা সহায়তা করলে স্বপ্ন পূরণ হবে চঞ্চলের। এজন্য তিনি সমাজের বিত্তবানদের কাছে ছেলের স্বপ্ন পূরনে আর্থিক সহায়তায় এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।