সোমবার, ০২ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঢাবির নিরাপত্তা: ‘ব্যর্থ’ উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি ছাত্রদলের

সংবাদ সম্মেলন
যাযাদি রিপোর্ট
  ৩১ মে ২০২৫, ১৫:২৪
ঢাবির নিরাপত্তা: ‘ব্যর্থ’ উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি ছাত্রদলের
ঢাবি ছাত্রদলের সংবাদ সম্মেলন। ছবি: সংগৃহীত

নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়ার প্রশ্নে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল।

আজ শনিবার (৩১ মে) ক্যাম্পাসের মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়। ‘ছাত্রদল নেতা সাম্য হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার এবং সাম্প্রতিক রাজনীতি’ শিরোনামে এ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

1

ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস লিখিত বক্তব্যে বলেন, “সাম্য হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে পুলিশ প্রশাসনের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত হতাশাজনক। ক্রাইম সিনের জায়গাটি ভোর পর্যন্ত অরক্ষিত রাখা, রমনা কালী মন্দির, বাংলা একাডেমি ও তার আশেপাশে কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ার মতন অস্বাভাবিক বিষয়াবলি ঘটনাটিকে আরো সন্দেহজনক করে তোলে।’

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীকালে অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তির ভাষ্যমতে, শহীদ সাম্যকে যখন ছুরিকাঘাত করা হয়, সেসময় ঘটনাস্থলে কতিপয় পুলিশ সদস্যের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু শহীদ সাম্যকে ছুরিকাঘাতের পরে ঘটনাস্থলে জড়ো হওয়া বিক্ষুব্ধ জনতা খুনিদেরকে আটকে রেখে উক্ত পুলিশ সদস্যদের কাছে সাহায্য চাইতে গেলে তারা তা না করে বরং খুনিদেরকে ছেড়ে দিতে উৎসাহিত করেন। এখন পর্যন্ত সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা কেন বা কাদের অনুরোধে আসামিদের ছেড়ে দিয়েছিল- তার কোনো সদুত্তর প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।’

প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে রাত ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় পরদিন সকালে সাম্যের বড় ভাই শরীফুল আলম শাহবাগ থানায় ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে গত ২৭ মে ডিএমপির তরফে সংবাদ সম্মেলন করে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা ‘অত্যন্ত অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর’ বলে মন্তব্য করেন ছাত্রদল নেতা সাহস।

ছাত্রদল নেতা বলেন, ‘সাম্য হত্যার প্রায় ১৩ দিন পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয় তাও ছিল অত্যন্ত অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর। সেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, শহীদ সাম্যকে হত্যা করা হয় হত্যাকারীদের হাতে থাকা একটি ছোট্ট ট্রেজার গান (যেটিতে ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হয়) দিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘অথচ কর্তব্যরত ডাক্তারের ভাষ্য মতে, শহীদ সাম্যের উরুতে ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে অত্যন্ত সুচারুভাবে তার ‘ফেমোরাল আর্টারি’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ ধমনী কেটে দেওয়া হয়, যার ফলে মাত্র ২-৩ মিনিটের মধ্যেই অত্যধিক রক্তক্ষরণে মৃত্যুমুখে পতিত হয় সে।’

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম সাম্য হত্যার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মাদক ব্যবসার একটা চক্রের ‘নেতা’ মেহেদীর গ্রুপকে দায় দেন।

তিনি বলেছিলেন, ‘ঘটনার দিন একটি মোটরসাইকেলে করে সাম্য ও তার দুই বন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান। মেহেদীর গ্রুপের একজন রাব্বী, যার হাতে একটা ট্রেজার গান (যেটিতে ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হয়) ছিল। সেটা কী, তা জানতে চান সাম্য। জানতে চাওয়ার একটা পর্যায়ে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একটা পর্যায়ে ওই মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে অন্য যারা আছে, তারা ঘটনাস্থলে আসে এবং তাদের ভেতরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। একটা পর্যায়ে হত্যাকাণ্ডটা ঘটে।’

ছাত্রদল নেতা গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ‘পরিচয় দেওয়ার পরেও একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সুপরিচিত ছাত্রদল নেতাকে এমন একটি তুচ্ছ বিষয়ে আক্রমণ করে অতি পেশাদার উপায়ে হত্যা করার পেছনে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র আছে নাকি নেই- সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কোনো তথ্য জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন ডিএমপি কর্তৃপক্ষ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় শাখা ছাত্রদল সভাপতি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে নানা উপায়ে লুকিয়ে থাকা ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে অনীহা ও গাফিলতি প্রদর্শন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।’

তার ভাষ্য, ‘তাই শহীদ সাম্যর মতন একনিষ্ঠ সহযোদ্ধাকে হারানোর পরে বিদারিত হৃদয় নিয়ে আজ আমাদের লক্ষ্য করতে হচ্ছে যে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোর পাশাপাশি আবাসিক হলসমূহেও নানান উপায়ে ছলে-বলে-কৌশলে পতিত আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসর শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদেরকে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে, চিহ্নিত করে বেকায়দায় ফেলা হচ্ছে বিগত সময়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের সাথে বিভিন্নভাবে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করে সাহস বলেন, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং ন্যাক্কারজনক নানান ঘটনা ঘটে যাবার পরেও তাদের গা-ছাড়া মনোভাবের মাধ্যমে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাবিধানে তাদের অযোগ্যতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।’

সাহস বলেন, ‘নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মাণের যে অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়ে এই প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল, সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারার ব্যর্থতা এই প্রশাসন কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বিশেষ করে এই শিক্ষাঙ্গনের নিরাপত্তার বিষয়ে দায়িত্বশীল উপাচার্য এবং প্রক্টর অবিলম্বে পদত্যাগ করে যোগ্যতর ব্যক্তিদেরকে এই গুরুদায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দেওয়ার এবং নতুন প্রশাসনের হাত ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে একটি নিরাপদ ও সুন্দর শিক্ষাঙ্গন হিসেবে গড়ে তোলার যৌক্তিক দাবি আবারও আপনাদের সামনে আমরা তুলে ধরছি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এর চেয়ে বেশি নিরাপদ ছিল না। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিরাগত নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছি; যা বর্তমানে বন্ধ আছে। বাইরের কোনো যানবাহন ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছে না। ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য প্রক্টরিয়াল টিম, আনসার ও ভলেনটিয়ার টিম ২৪ ঘণ্টা কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সাথে আমাদের সব যাতায়াতও একদম বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘তাই আমি মনে করি, আমাদের সব কাজ দৃশ্যমান। তবে শিক্ষার্থীদের এক্সপেক্টেশন অনেক বেশি। তবে আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি মাসুম বিল্লাহ, সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক, জ্যেষ্ঠ সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন শাওন, সাংগঠনিক সম্পাদক নূর আলম ভুঁইয়া ইমন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে