বাংলাদেশে দীর্ঘ ১২ বছর পর জামায়াতে ইসলামীকে আবারও স্বীকৃত রাজনৈতিক দল হিসেবে ফিরিয়ে আনলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে দলটি পুনরায় নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন লাভ করেছে এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের আইনগত সুযোগ ফিরে পেয়েছে।
রবিবার (১ জুন) সুপ্রিম কোর্ট ২০১৩ সালে হাইকোর্টের দেওয়া জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায়টি বাতিল করে দেয়। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় আইনি কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই রায়কে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদলু এজেন্সি এই ঘটনাকে "দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার সমাপ্তি" হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং বলেছে, এতে করে দলটি ২০২৫ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পথ সুগম হয়েছে।
পাকিস্তানের ডন পত্রিকা তাদের প্রতিবেদনে জানায়, হাইকোর্টের পূর্ববর্তী আদেশটি বাতিল হওয়ার পর জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নতুন মোড় নিয়েছে। তারা উল্লেখ করে, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দলটি রিভিউ আবেদন করে এবং আদালত সেই আবেদনের পক্ষে রায় দেয়।
মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ এটিকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী ইসলামী দলের “পুনর্জন্ম” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। তারা জানায়, অতীতে শেখ হাসিনা সরকারের সময় দলটির নিবন্ধন বাতিল করা হয় এবং শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর দমনপীড়ন চালানো হয়েছিল।
এনডিটিভি জানিয়েছে, দীর্ঘ সময় নিষিদ্ধ থাকার পর জামায়াত এখন আবার নির্বাচনী রাজনীতিতে ফিরছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, “এক দশকের বেশি সময় বাইরে থাকার পর, দলটি এখন আবার ব্যালটের মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিতে পারবে।”
ডনের আরেকটি প্রতিবেদনে আলোচিত হয়, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগের ওপরও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম শুনানি ১ জুন বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। অভিযোগে বলা হয়, তিনি সহিংসতা উসকানি, সহায়তা ও প্রতিরোধে ব্যর্থতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ করেছেন। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
দেশের রাজনীতিতে এই রায় নতুন এক গতিপথ তৈরি করেছে। দীর্ঘ নিষ্ক্রিয়তার পর জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যাবর্তন রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং নির্বাচনমুখী প্রস্তুতিকে নতুনভাবে প্রভাবিত করবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।