সোমবার রাজধানীর মালিবাগ, মোহাম্মদপুর ও কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে মিনিকেট চালের বস্তাপ্রতি দাম বেড়েছে অন্তত ৩০০ টাকা। ৭০-৭২ টাকা কেজি থাকলেও এখন ৭৮-৮০ টাকা। ৫৪-৫৫ টাকার ব্রি-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকায়। আর নাজিরশাইল কেজিতে বেড়েছে ৫-৬ টাকা।
বেশি দামে বিক্রি করলেও যৌক্তিক কারণ জানেন না ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মিল মালিক ধান সংগ্রহ করে কৃত্রিমভাবে চাল মজুত করছেন। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে।
বিক্রেতারা জানান, সরু চালের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটা ও মাঝারি দানার চালের দামও বাড়ছে। দাম আরও বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
এদিকে দেশজুড়ে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। বাজারে প্রতিদিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এমনিতেই নাগালের বাইরে, তার ওপর চালের বাজারে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি জনমনে ক্ষোভ এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের দামের এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। চলতি মৌসুমে খরার কারণে ধানের উৎপাদন অনেক এলাকায় কম হয়েছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় পানির স্বল্পতা ও আবহাওয়ার প্রতিকূলতা ফসল উৎপাদনে প্রভাব ফেলেছে। কিছু অসাধু মিলার ও আড়তদার চাল মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বাড়ছে। নানা অযুহাতে পরিবহন খরচ বেড়েছে, যার প্রভাব সরাসরি পণ্যমূল্যে পড়ছে। অন্যদিকে দেশীয় উৎপাদনের ঘাটতি মেটাতে কিছু চাল আমদানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে, কিন্তু বৈশ্বিক বাজারেও দাম বেড়েছে এবং ডলার সংকটের কারণে আমদানিও ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দিনমজুর, রিকশাচালক, গার্মেন্টসকর্মী, স্বল্প আয়ের চাকরিজীবীরা প্রতিদিনের খাবারে চালের পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছেন বা কম মানের চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
সাবিনা আক্তার, এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, ‘আগে ১০ কেজি মিনিকেট কিনতাম ৭৫০ টাকায়, এখন সেটা ৯০০ টাকা। বাচ্চাদের খাবারেই টান পড়ছে। মাংস তো এখন স্বপ্ন।’
বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে- সরকারকে বৃহৎ পরিসরে চাল আমদানি ও ওএমএস কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। মজুতদার ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালাতে হবে। কৃষকদের উৎসাহিত করতে সহায়তা ও ভর্তুকি বৃদ্ধি করা প্রয়োজন, যেন উৎপাদন বাড়ে। চাল সংরক্ষণের গুদাম ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়ন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্টদের শঙ্কা, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের সমন্বিত পদক্ষেপ না থাকলে ভবিষ্যতে এই সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।