ডিম আমদানি করলে সিন্ডিকেট ভাঙবে না। করপোরেট সিন্ডিকেট ভাঙতে মুরগির বাচ্চা এবং পোলট্রি ফিডের দাম কমানোর ব্যবস্থা করতে পারলে ডিম ও মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি সুমন হাওলাদার এমন দাবি করেন।
ডিম আমদানি নয় রপ্তানি করুন, প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনে ধরে রাখুন- এমন মন্তব্য করে সুমন হাওলাদার বলেন, ডিম আমদানি নয় রপ্তানি করুন। প্রান্তিক খামারিদের ধরে রাখুন। কারণ বাজারের ৮০ শতাংশের চাহিদা প্রান্তিক খামারিরা পূরণ করে থাকে। ডিম আমদানি করলে সিন্ডিকেট ভাঙবে না। বাজার তদারকিতে ডিমের সিন্ডিকেট মুরগির বাচ্চার ওপর ভর করেছে। ডিম আমদানি না করে, ডিম রপ্তানি করতে পারি। আমাদের সেই পরিমাণ উৎপাদন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ডিম ও মুরগি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস বিপরীতে উৎপাদন রয়েছে ৫ কোটি। পোলট্রি শিল্পে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িত আছে ৫০ থেকে ৬০ লাখ উদ্যোক্তার কর্মসংস্থান। কর্মসংস্থান রক্ষার তাগিদে ডিম আমদানি বন্ধ করতে হবে এবং প্রান্তিক খামারিদের লোকসানের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। পোলট্রি ফিড এবং মুরগির বাচ্চার দাম কমিয়ে, উৎপাদন খরচ কমিয়ে মূল্য কমানো সম্ভব।
ভারতে মুরগি ও ডিমের দাম কম থাকার বিষয়ে বিপিএ বলছে, ভারতের বাজাবে ডিম মুরগির দাম কম। কারণ ভারতে ৫০ কেজির এক বস্তা ব্রয়লার ফিডের মূল্য বাংলা টাকায় ২ হাজার ৭০০ টাকা, এক বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য ১ হাজার ৮৭৫ টাকা, একটি ব্রয়লার মুরগির বাচ্চার মূল্য ২৮ টাকা, একটি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ২৫ থেকে ৩০ টাকা। তাই একটি ডিমের উৎপাদন খরচ বাংলা টাকায় ৫ থেকে ৬ টাকা। তাদের বাজারে একটি ডিম বিক্রয় হয় ৭ টাকা থেকে সাড়ে ৭ টাকা। আর এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রয় করে। ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় তাদের উৎপাদন খরচ কম, তাই তারা কম দামে বিক্রয় করেও লাভ করতে পারে।
কিন্তু বাংলাদেশের বাজারে এক বস্তা ব্রয়লার ফিডের দাম ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৫০ কেজি এক বস্তা লেয়ার ফিডের মূল্য ২ হাজার ৯০০ টাকা একটি ব্রয়লার বাচ্চার মূল্য ৫০ থেকে ৬০ টাকা একটি লেয়ার বাচ্চার মূল্য ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। বাংলাদেশে একটি ডিমের উৎপাদন খরচ সাড়ে ১০ থেকে ১১ টাকা। বাচ্চার দাম ৩৫ টাকা ধরে এক কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬৭ টাকা। বাচ্চার দাম বেড়ে গেলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। তাই ভারতের তুলনায় বাংলাদেশের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ ডাবল। সরকারকে তদারকি করে সমস্যা সমাধান ও ব্যবস্থা নিতে হবে।
পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম কমানো না গেলে কখনোই ডিম-মুরগির দাম কমবে না এমন দাবি করে সুমন বলছেন, আমদানি করে ডিম ও মুরগির দাম কমাতে চাইলে দেশীয় শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমদানি নির্ভর হলে পরবর্তী সময়ে ঠিক বেশি দামে কিনে খেতে হবে। টাকা থাকলেও ডিম ও মুরগি পাওয়া যাবে না। তাই দেশীয় উৎপাদনকে কীভাবে ধরে রাখা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। প্রান্তিক খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে উৎপাদনে ফিরিয়ে আনতে হবে, তাদের বাজার প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে হবে।
করপোরেট সিন্ডিকেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, করপোরেট গ্রæপগুলো ২০১০ সাল থেকে মুরগির বাচ্চায় সিন্ডিকেট করে ১৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়িয়ে ছিল। এরপর প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করে দিয়ে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২২ টাকা ধরে লাভ সহকারে ৩২ টাকা দাম বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু করপোরেট অ্যাসোসিয়েশন হাইকোর্টে রিট করে তাদের খেয়াল খুশিমতো পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দিয়ে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে। যার প্রভাব বাজারে এসে পড়ছে। এর সঙ্গে যোগ হয় ২০২০ সালের করোনা মহামারি। অতএব, ডিম আমদানি না করে করপোরেট সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে প্রান্তিক খামারিদের জন্য পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা আমদানি করার ব্যবস্থা করতে করতে পারলে ডিম ও মুরগির বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট হচ্ছে বড় পুঁজিবাদী। সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের আখের গুছিয়েছে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হলে সরকারকে মুরগির বাচ্চা আমদানি করবে। সরকার ঘোষণা দিক মুরগির বাচ্চা ও ডিম আমদানি করবে। তাহলেই সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে। সরকার কেন কাজ করতে পারছে না। তার প্রমাণ তুলে ধরছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার ও জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্ত খামারি জাকির হোসেন প্রমুখ।
যাযাদি/ এস