চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন শিপিং কোম্পানির তথ্য বলছে, গতকাল (রোববার) পর্যন্ত বন্দরের জেটিতে ভেড়ানো ছিল ১০টি কনটেইনার জাহাজ। অন্যদিকে অপেক্ষায় ছিল আরো ২১টি কনটেইনার জাহাজ। অথচ এনবিআরের শাটডাউন কর্মসূচির আগে এ সংখ্যা ছিল ১৩টি। ফলে পণ্য হাতে পেতে ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত সময় যেমন লাগছে, তেমনি ক্ষতির মুখে পড়েছে আন্তর্জাতিক সরবরাহ ব্যবস্থাও।
‘এএস সিসিলিয়া’ নামের একটি কনটেইনার জাহাজ গতকাল (রোববার) সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বুকিং থাকা ২৪৩ টিইইউ রফতানি কনটেইনার না পাওয়ায় জেটিতেই অলস বসে রয়েছে। একই কারণে বন্দরে আটকে পড়েছে আরো কয়েকটি জাহাজ।
শিপিং কোম্পানিগুলো বলছে, চট্টগ্রামের ডিপোগুলো থেকে কাভার্ড ভ্যান বন্দরে প্রবেশ করতে না পারায় বুকিং অনুযায়ী কনটেইনার বোঝাই সম্ভব হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ে জাহাজগুলো ছাড়তে পারেনি। এসব জাহাজের রফতানি পণ্য ট্রানজিট বন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে, যেখান থেকে মাদার ভেসেলে চালান তুলে দেয়া হবে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক জাহাজ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানির হেড অব অপারেশন অ্যান্ড লজিস্টিকস আজমীর হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বুকিং অনুযায়ী রফতানির চালান না পাওয়ায় জাহাজ ছাড়িনি। তবে সোমবার (আজ) আর অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। রফতানি কনটেইনার আসুক বা না আসুক জাহাজ ছাড়তেই হবে। সোমবার (আজ) আমাদের আরো দুটি নতুন জাহাজ বন্দরে বার্থ পাবে। এ অবস্থায় পূর্বনির্ধারিত রফতানি কনটেইনার জাহাজগুলোয় তুলতে না পারলে পরবর্তী সময়ে সেগুলো পাঠানোর কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ তখন জাহাজগুলোয় প্রয়োজনীয় স্থান রাখা সম্ভব হবে না।’
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, এনবিআরের কর্মসূচি প্রত্যাহার হলেও বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানকাল বেড়ে যাওয়ায় খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের গড় আনলোডিং টাইম বেড়ে গিয়ে বার্থের দক্ষতা কমেছে। বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে চার হাজারের বেশি কনটেইনার খালাস হয়। কিন্তু গতকালও (রোববার) খালাস কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনারের স্তূপ ৪১ হাজার ছাড়িয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর খুবই ভালো পারফর্ম করছিল, কিন্তু এখন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। এনবিআরের অধীনে থাকা কাস্টমস কর্মকর্তারা সক্রিয় না থাকার প্রভাব পড়েছে বন্দরের ওপর।’
ঢাকাসহ দেশের সব জেলার রফতানি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরের ১৯টি ডিপোতে আনা হয়। এখানে কাস্টমস শুল্কায়নের পর কনটেইনারে ভরে বন্দরের জেটিতে নিয়ে জাহাজে তুলে দেয়া হয়। কিন্তু এনবিআরের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে গত দুইদিন বন্দরে কোনো ধরনের কনটেইনারবাহী গাড়ি ঢুকতে ও বের হতে পারেনি। এর ফলে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোয় তৈরি হয়েছে পণ্যজট।
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘এরই মধ্যে রফতানি পণ্যের স্তূপ জমে গেছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা অ্যাসেসমেন্ট না করায় নতুন করে শুল্কায়ন কার্যক্রমও সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। আবার যেসব রফতানি পণ্যের শুল্কায়ন আগেই সম্পূর্ণ হয়েছিল, সেসব চালানও বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি গেট যাচাইয়ে কাস্টমস কার্যক্রম বন্ধ থাকার কারণে।’
প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, ‘বিদেশের বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে আমাদের যেখানে লজিস্টিক ব্যয় কমানো দরকার ছিল, এখন সেটা উল্টো বেড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে কোনো পণ্য খালাস করতে পারেননি। কাঁচামাল হাতে পেতে আগের তুলনায় আরো বেশি সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে।’