মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা

যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ জুন ২০২৫, ১৯:০৯
বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশঙ্কা
সার ও জ্বালানি তেলের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে এর প্রভাব পড়বে খাদ্যপণ্যের দামে

মধ্যপ্রাচ্যে চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে বৈশ্বিক খাদ্যপণ্যের দাম নতুন করে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সার ও জ্বালানি তেলের সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হলে এর প্রভাব পড়বে ফসল উৎপাদন ও খাদ্যপণ্যের বাজারে। তাছাড়া হরমুজ প্রণালি ঘিরে বাড়তে থাকা উত্তেজনা, গ্যাসক্ষেত্র বন্ধ হওয়া এবং ইউরিয়া সার উৎপাদন কমার কারণে বিশ্বজুড়ে সারেরবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এতে খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা আরো ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস।

নরওয়ের সার কোম্পানি ইয়ারা ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী সভেইন তোরে হোলসেথার বলেন, হরমুজ প্রণালি দিয়ে বিশ্বের প্রায় ৪০ শতাংশ ইউরিয়া ও ২০ শতাংশ এলএনজি পরিবাহিত হয়। সেখানে কোনো ধরনের বিঘ্ন দেখা দিলে সার ও খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

তিনি আরো বলেন, গত কয়েক সপ্তাহে সারেরবাজারে বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা গেছে, যা থেকে বোঝা যায়, বিশ্ববাজার কতটা একে অন্যের সঙ্গে জড়িত।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনার কারণে ইসরায়েলের গ্যাসক্ষেত্র বন্ধ হয়ে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে মিসরের সার উৎপাদনে। এতে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের ওপরে উঠে যায়। যদিও পরে তা কমে আসে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর।

শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, সংঘাত ও জ্বালানি তেল সরবরাহে বিঘ্নের কারণে বিশ্বে ২০ শতাংশের বেশি ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ইরান নিরাপত্তাজনিত কারণে সব অ্যামোনিয়া কারখানা বন্ধ রেখেছে। মিসরেও ইসরায়েলি গ্যাস বন্ধ থাকায় সার উৎপাদন থেমে আছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিআরইউ জানিয়েছে, হরমুজ প্রণালির পশ্চিমের দেশগুলো থেকে বিশ্ববাজারে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া, ৪৪ শতাংশ সালফার ও ২০ শতাংশ অ্যামোনিয়া রফতানি হয়। এসব উপাদান বিশ্বব্যাপী ফসল উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সরবরাহে দীর্ঘ সময় সমস্যা থাকলে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থায় নতুন সংকট দেখা দিতে পারে।

হোলসেথার বলেন, ‘খাদ্যব্যবস্থা এখন খুবই নাজুক। জ্বালানির দাম যদি অনেক দিন ধরে বেশি থাকে, তাহলে এর প্রভাব সরাসরি খাদ্যপণ্যের সরবরাহ ও দামে পড়বে, যেমনটা আমরা ইউক্রেন যুদ্ধের পর ২০২১ ও ২০২২ সালে দেখেছি।’

২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা করার পর প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়। এতে সারের দাম বেড়ে যায় এবং এর প্রভাব পড়ে খাদ্যপণ্যের দামে। পরে গ্যাসের দাম কমলে সারের দামও কিছুটা স্থিতিশীল হয়। তবে ইউরোপের সার শিল্প এখনো রাশিয়ার বাড়তি রফতানির কারণে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে রয়েছে।

হোলসেথার অভিযোগ করেন, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে সার ও খাদ্যপণ্যকে রাজনৈতিক চাপের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে এবং ইউক্রেনের কৃষি খাতকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এখন ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ কৃষিজমি মাইন, দখল বা যুদ্ধের কারণে চাষের জন্য অযোগ্য হয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ান সার আমদানিতে শুল্ক বসানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা ভালো পদক্ষেপ হলেও অনেক দেরিতে এসেছে। তিনি আহ্বান জানান, ইউরোপ যেন জ্বালানির ক্ষেত্রে যেভাবে ভুল করেছে, তেমনি ভুল যেন খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও না করে।

দাম বৃদ্ধি ইরান ইযরাইল যুদ্ধ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে