মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৯ জুলাই বুধবার শেষ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির মেয়াদ। তবে বিষয়টি নিয়ে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা খুব একটা উদ্বিগ্ন নন। বরং তারা ধরেই নিচ্ছেন শুল্ক নিয়ে নানা দোদুল্যমান অবস্থার কারণে বড় কোনো অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন এখনই আসবে না। ফলে বিশ্ববাজারে এর প্রভাব তুলনামূলকভাবে খুবই সীমিত দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। খবর: রয়টার্স।
গত ২ এপ্রিল ‘লিবারেশন ডে’ উপলক্ষে ট্রাম্প যে নতুন শুল্ক পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, তার অংশ হিসেবে আজ ১২টি দেশের কাছে শুল্কহারসংক্রান্ত প্রথম চিঠি পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে এত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ সামনে থাকলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধরনের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না।
দেশটির বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান নিউবার্গার বারম্যানের সহপ্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা জেফ ব্লেজেক বলেন, ‘বিশ্ববাজার এখন শুল্কসংক্রান্ত খবর নিয়ে আর তেমন উদ্বিগ্ন নয়। বরং বাজার অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী ও স্থির অবস্থায় রয়েছে। ট্রাম্পের সময়সীমা নিয়ে অবস্থান খুব একটা কঠোর নয়। তাই বড় কোনো চমক না এলে বাজার ব্যবস্থায় অস্থিরতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা কম।’
সম্প্রতি ট্রাম্প জানিয়েছেন, শুল্কহার ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা আগের ঘোষিত ১০-৫০ শতাংশের সীমার তুলনায় অনেক বেশি। এ শুল্ক কার্যকর হতে পারে আগামী ১ আগস্ট থেকে। তবে এমন ঘোষণাও বিশ্ববাজারে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলেনি।
শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এ পর্যন্ত কেবল যুক্তরাজ্যের সঙ্গে একটি সীমিত বাণিজ্য চুক্তি করতে পেরেছে এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে একটি প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছে। তবে ভারতের সঙ্গে যে চুক্তির আশা করা হচ্ছিল, তা এখনো হয়নি। জাপানের সঙ্গেও আলোচনা খুব একটা এগোয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে চলমান আলোচনা নানা কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে।
তবু বৈশ্বিক শেয়ারবাজার চাঙ্গা রয়েছে। ২ এপ্রিলের পর থেকে বিশ্ব শেয়ারবাজারে ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। শুরুর দিকে তিন কার্যদিবসে বাজার ১৪ শতাংশ পড়ে গেলেও পরবর্তী সময়ে ২৪ শতাংশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ও ন্যাসডাক সূচক রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। ইউরোপের শেয়ারবাজার সূচক স্টক্স ৬০০ গত তিন মাসে ৯ শতাংশ বেড়েছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক ইস্টস্প্রিং ইনভেস্টমেন্টসের পোর্টফোলিও ম্যানেজার রঙ রেন গো বলেন, ‘লিবারেশন ডে যদি হয় ভূমিকম্প, তাহলে শুল্ক চিঠিগুলো হবে আফটারশক। তবে এগুলোর প্রভাব আগের মতো তীব্র হবে না।’
বিশ্লেষকদের মতে, বাজারে এত বেশি তারল্য রয়েছে যে অনেক বিনিয়োগকারী শুরুতে ঝুঁকি এড়াতে শেয়ার বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু শেয়ারবাজার দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোয় এখন তারা আবার বিনিয়োগে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন, যাতে বাজারের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন।
এদিকে ট্রাম্পের নতুন কর ও ব্যয়সংক্রান্ত বিলটি মার্কিন কংগ্রেসে দীর্ঘ বিতর্কের পর গত সপ্তাহে পাস হয়েছে। এতে ২০১৭ সালের করছাড় স্থায়ী করা হয়েছে, যা শেয়ারবাজার ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে। তবে বন্ডবাজার কিছুটা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। কারণ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিলটি বাস্তবায়নে সরকারের ঋণ ৩ লাখ কোটি বা ৩ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এ কারণে ডলার সূচক ও মার্কিন ট্রেজারি বন্ড কিছুটা চাপের মুখে পড়েছে। বছরের প্রথমার্ধে ডলার সূচক ১১ শতাংশ কমেছে, যা ১৯৭৩ সালের পর সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স। শুধু ২ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত সূচকটি কমেছে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
শুল্কের সময়সীমা শেষ হতে গেলেও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা পরিস্থিতিকে ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবিলা করছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।