রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

নব্বই একর থেকে পবিপ্রবিয়ানদের বিসিএস সাফল্য কথা

পবিপ্রবি প্রতিনিধি
  ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৪৪
নব্বই একর থেকে পবিপ্রবিয়ানদের বিসিএস সাফল্য কথা
নব্বই একর থেকে পবিপ্রবিয়ানদের বিসিএস সাফল্য কথা

শৈশব থেকে কৈশোর, কৈশোর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠের অবসান্ন হয় ক্যারিয়ার দিয়ে। চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকা লক্ষাধিক তরুণ-তরুণীদের কাছে একবিংশ শতাব্দীর বাংলায় চাকরি যেন এক সোনায় মোড়ানো হরিণ। আর সে চাকরিই যদি হয় স্বপ্নের 'বিসিএস' তবে তা যেন সৃষ্টি করে দেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালনের এক অপার সম্ভাবনার। প্রতিবারের ন্যায় এবারও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) থেকে বিভিন্ন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। ফার্স্ট গেট থেকে সেকেন্ড গেট, নীল কমল থেকে লাল কমল কিংবা বকুল তলা থেকে বিচ্ছেদ মোড়, কেমন ছিলো পবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের বিসিএস যাত্রা? সেটাই জানার চেষ্টা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি মারসিফুল আলম রিমন।

"ছোট ক্যাম্পাস থেকে বড় স্বপ্ন পূরণ"

আমি ২০১৮ সালে অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করি। এরপরই আমি ৪১তম বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাই।

আমি যখন অনার্সে অধ্যয়নরত ছিলাম তখন আমরা ব্যাচমেটরা মিলে একটা গ্রুপ করি সেখান থেকেই মূলত এই জার্নি শুরু। এরপর অনার্সের শেষের দিকে আমরা কয়েকটা ফ্রেন্ড মিলে কোচিং এ ভর্তি হই। ক্যাম্পাস থেকে কোচিং এ যেতে ১ঘন্টার বেশি লাগতো। অনার্স শেষ করে বরিশাল থেকে পড়াশোনা শুরু করি। প্রথম দিকের চাকরির পরীক্ষাগুলোতে নাকানিচুবানি খেতাম। একসময় খুব হতাশায় ছিলাম। বাবা এতো কষ্ট করে টাকা পাঠায় কিন্তু তার সঠিক ব্যবহার করতে পারছিনা। সংকল্প নিয়েছিলাম যে একসময় এমন একটা প্রিপারেশন নিবো যাতে প্রিলির কাট মার্ক নিয়ে টেনশন করতে না হয়। তারপর করোনার ধাক্কা আসে। তখন আসে জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। তখনও যতদিন পেরেছি বরিশাল ছিলাম। কিন্তু এক পর্যায়ে বাসায় চলে যেতে বাধ্য হই। কিন্তু বাসায়ে গেলে আমার পড়া হতো না। তখন আমি রাত ৮টায় পড়তে বসতাম আর বেশিরভাগ দিনেই ভোরে ঘুমাতে যেতাম। এভাবে একসময় প্রিলিমিনারিতে এমন একটা প্রিপারেশন হয়ে যায়, যার ফলে প্রতিটা জবের পরীক্ষায় টিকতে থাকি। এ পর্যন্ত আমি মোট ৮টা ভাইভা দেয়ার সুযোগ পাই যার মধ্যে ৬ টায় ভাইভা দেই ও ৫ টা জব পাই। পঞ্চম বারে এসে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাই।

আজকের এই সফলতার পেছনে বাবা মার পাশাপাশি আমার সহধর্মিণীর অবদানও রয়েছে। সে আমাকে সবসময়ই সাপোর্ট দিতো।

সবার উদ্দেশ্যে এটাই বলবো, কখনো হাল ছাড়বেন না, কখনো পিছিয়ে আসবেন না। কেউ পারেনি, আমিও পারবোনা, এটা ভাববেন না। আমিই উদাহরণ হবো, এটা মনে করবেন। চেষ্টা করবেন আর সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই আপনাকে নিরাশ করবেন না।

নিশ্চয়ই দেখা হবে আবার কোনো বিজয়ে, হয়তো আপনার বা আমার। ধন্যবাদ, সকলের দোয়া প্রার্থী।

-অপু মন্ডল

সহকারী পুলিশ সুপার (সুপারিশপ্রাপ্ত)

৪১তম বিসিএস (পুলিশ)

‘’প্রয়োজন ধৈর্য, পরিশ্রম, কৌশল ও মেধার সমন্বয়’’

অনার্সে থাকাকালীন আমি চাকুরির জন্য আলাদাভাবে কোনো প্রস্তুতি নিইনি, একাডেমিক পড়াশোনায় গুরুত্ব দিয়েছিলাম যা পরবর্তীতে টেকনিক্যাল ক্যাডারের লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভাতে অনেক কাজে লেগেছিল । এ সময়ে আমি নিয়মিত পত্রিকা পড়েছি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস-ইতিহাস গ্রন্থ, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই পড়েছি, নিজের সীমিত জ্ঞানকে বাড়ানোর চেষ্টা করেছি । এছাড়া লেখালেখি, বক্তৃতা, বিতর্কসহ বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলাম যা চাকুরির পরীক্ষায় পরবর্তীতে আমার আত্নবিশ্বাস বৃদ্ধি করেছিল । সঠিক সময়ে সঠিক কাজ- এটাই আমার মূলমন্ত্র ছিল । তাই স্নাতক সম্পন্নের পর চাকুরির প্রস্তুতি শুরু করেও কাঙ্খিত সাফল্য পেয়েছি ।

আমি মনে করি বিসিএস পরীক্ষা হলো ধৈর্য, পরিশ্রম, কৌশল ও মেধার সমন্বয় । বিসিএসের প্রিলিমিনারি ধাপকে আমার সবথেকে কঠিন মনে হয় । প্রিলিমিনারি যে যত সময় নিয়ে ধৈর্য ধরে বিস্তারিত ও বুঝে বুঝে পড়ে তার সফলতার হার তত বেশি । এমনকি বিস্তারিত পড়া থাকলে লিখিত পরীক্ষার বিরাট সিলেবাসও অর্ধেক হয়ে আসে । লিখিত পরীক্ষায় ভালো মার্কস ক্যাডার নির্ধারনে বড় ভূমিকা রাখে । সম্পূর্ন উত্তর করা ও সময়ের মধ্যে শেষ করাই বিরাট চ্যালেঞ্জ । সাধারণ জ্ঞানের উপর ভালো দক্ষতা ও নিয়মিত গণিত-ইংরেজি প্রাকটিস আপনাকে আর দশজনের চেয়ে এগিয়ে রাখবে ।

অনেকেই মনে করেন ভাইভার জন্য হয়ত কিছু পড়া লাগে না । এটা ঠিক নয় । ভাইভা হলো প্রিলিমিনারি, লিখিত ও জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতার পরিপূর্ন সমন্বয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষা । লিখিত পরীক্ষা সম্পন্নের পর এক বছর ধরে ভাইভার প্রস্তুতি নিয়েছি । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবকে পড়াশোনার কাজে লাগিয়েছি, মক ভাইভা দিয়েছি ও ইংলিশ স্পিকিং প্রাকটিস করেছি । ভাইভার জন্য পূর্নাঙ্গ প্রস্তুতিই হয়ত আমার প্রথম বিসিএসেই ক্যাডার প্রাপ্তিতে সহায়তা করেছে ।

আমার এই সাফল্য প্রাপ্তিতে মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । এছাড়া আমার যোগ্যতার উপর বিশ্বাস রাখার জন্য আমার শ্রদ্ধেয় পিতা- আইনজীবী শেখ হারুন অর রশিদ, মাতা- সহকারি অধ্যাপিকা শাহানা পারভীন, বোন- সানিয়া তাসমিন লিয়া, বোন জামাই মোস্তাফিজুর রহমান, প্রিয় বন্ধু ও সার্বক্ষণিক সঙ্গী আপন, আত্নীয়স্বজন, শিক্ষকবৃন্দ, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্খীসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।

প্রজাতন্ত্রের একজন ক্ষুদ্র কর্মচারি হিসাবে যেন সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারি সেই দোয়াপ্রার্থী ।

-শেখ নাইমুর রশিদ লিখন

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (সুপারিশপ্রাপ্ত)

৪১তম বিসিএস (কৃষি)

’গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞানে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি’’

ধৈর্য্য ও সুপরিকল্পিত পরিশ্রম আমার বিসিএসে সফলতার মূলমন্ত্র ।আমি প্রস্তুতির শুরুতে বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত প্রশ্ন বিশ্লেষণে সময় দেই। এই দীর্ঘ পথে নিজেকে সবকিছু থেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়মিত পড়ার টেবিলের সাথে বন্ধুত্ব করেছি।এক সপ্তাহ বা পনের দিনের টার্গেট করে পড়া শেষ করতাম।যেহেতু লিখিত পরীক্ষা ক্যাডার হওয়ার পিছনে মূখ্য ভূমিকা পালন করে তাই প্রিলির সময় থেকেই গণিত,ইংরেজি ভোকাবুলারি ও পত্রিকার সম্পাদকীয় অনুবাদ নিয়মিত করতাম।ইউটিউব এ সমসাময়িক বিষয়ের খবর ও টকশো দেখার অভ্যাস গড়ে তুলি। মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও বিশ্ব ভূ-রাজনীতির জ্ঞানকে বিসিএস লিখিত এর অন্যতম স্তম্ভ মনে করে আয়ত্তস্থ করি। যেখানে নম্বর ভাল তোলা যায়(গণিত,ইংরেজি ও বিজ্ঞান) সেখানে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। প্রিলিমিনারিতে ভুল উত্তরের ফাঁদে না পড়ে লিখিততে সুন্দরভাবে উপস্থাপন ও ভাইভাতে আত্মবিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশে আমি সফল হয়েছি।সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া, আমার বাবা-মা ও সহধর্মিণীর প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই সেইসাথে সকল শিক্ষক,বন্ধু -বান্ধবী, ভাই -বোন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ধন্যবাদ জানাই যারা আমাকে সবসময় সাহস ও সমর্থন দিয়েছে।

-মোঃ সাব্বির হোসেন

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা

৪১তম বিসিএস (মৎস্য)

‘’বাবার মনের ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছি’’

আমার জন্মস্থান বরগুনা জেলার সদর উপজেলায় ৭নং ঢলুয়া ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামে। ছাত্র জীবনে কখনোই খুব বেশি ভালো ছাত্র ছিলাম না, যদিও হাইস্কুলে এক বনের এক রাজা হিসেবেই ছিলাম। গ্রামের স্কুল থেকেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করি। এরপর বরগুনা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১২-১৩ সেশনে কৃষিতে ভর্তি হই। পরবর্তীতে অনার্স শেষ হলে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উদ্যানত্ত্বে মাস্টার্স সম্পন্ন করি।

এবার আসি বিসিএস জার্নি নিয়ে, অনার্সের শেষ দিকে মাঝে মধ্যে অল্প অল্প সাধারন জ্ঞান পড়তাম, তবে সেটা নিয়মিত কিংবা সিরিয়াস ছিল না। পরবর্তীতে ব্যর্থতা দিয়ে জার্নিটা শুরু হয়। পরপর দুটি বিসিএসে প্রিলিমিনারি ফেল, আর এই ব্যর্থতার জন্য নিজেই অনেকটা দায়ী ছিলাম। মাস্টার্সে থাকা অবস্থায় বিসিএস এর থেকে বিদেশি উচ্চ শিক্ষা,গবেষণা ও পাবলিকেশনের (Research paper) প্রতি খুব বেশি আগ্রহ ছিল। যদিও আমার পরিবার কখনোই চাইতো না আমি বিদেশে যাই, সর্বদা চাইতো দেশে থেকে কিছু একটা করি। অনেক ব্যর্থতার পরে হলেও আল্লাহ নিরাশ করেন নি। পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও সিনিয়র কিছু বড় ভাই পেয়েছি যাদের কারনে বিসিএস জার্নিটা কিছুটা হলেও সহজ হয়েছে। কিছু মানুষের কথা উল্লেখ না করে পারছিনা প্রথমে আমার বাবা যে কিনা আমার জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ছায়ার মতো ছিল, বাবা খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিল আমি পারবো। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ বাবাকে হতাশ করেন নি। এরপরে যদি বলি দুইজন সিনিয়র ভাই পেয়েছি যাদের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। এক জন হলেন মানস কীর্তিনীয়া নয়ন দা (বর্তমানে ৪০তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে আছেন), নয়ন দা'র একটি কথা খুব বেশি মনে পরে, "রাসেল হতাশ হইও না"। দাদার প্রতি কৃতজ্ঞ। আর একজন হলো সমর বিশ্বাস ভাই, অনেক কাছের একজন মানুষ (বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে কর্মরত)। ভাইয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা। সর্বশেষ অন্য একজন মানুষের প্রতি রইলো ভালোবাসা, তিনি হলেন আমার প্রিয়তমা সহধর্মিণী, যার বিশ্বাস ও ভালোবাসা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।

আমি আমার সকল শুভাকাঙ্ক্ষী,গুরুজন ও মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

নতুন যারা প্রিলিমিনারি দিবে তাদের উদ্দেশ্য বলবো প্রতিটি বিষয়ের জন্য অন্তত একটি বই ভালোভাবে শেষ করেন। সাথে নবম-দশম শ্রেণির সাবজেক্ট রিলেটেড বই এবং পরীক্ষার আগে বার বার রিভিশন দেয়াটা খুব বেশি জরুরি।

যারা রিটেন দিবে তাদের উদ্দেশ্য বলবো, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকবে যদি আপনি লিখিত পরীক্ষায় ভালো করেন। লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার জন্য ম্যাপ, চার্ট, গ্রাফ, কোটেশন, চিত্র দিলে ভালো মার্কস তোলা সম্ভব। এছাড়া গনিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজির প্রতি একটু গুরুত্ব দিয়ে পড়লে এখানেও খুব সহজেই ভালো নম্বর তুলতে পারবে। লিখিত পরীক্ষায় টাইম ম্যানেজমেন্ট ও দ্রুত লেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে আগে থেকেই।

ভাইভা প্রার্থীদের উদ্দেশ্য বলবো নিয়মিত পত্রিকা পড়া, মুক্তিযুদ্ধ- বঙ্গবন্ধু, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন দিক, সাম্প্রতিক আলোচিত ঘটনা, নিজ জেলা, নিজের সম্পর্কে, অনার্স- মাস্টার্সে পঠিত বিষয় ইত্যাদি সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবেন। ভাইভা বোর্ডে বিনয়ী হওয়াটা খুব জরুরি। সব কোশ্চেনের উত্তর পারবেন এমন মানসিকতা ত্যাগ উত্তম। ভাইভা বোর্ডে কোন কোশ্চেনের উত্তর না পারলে বিনয়ের সাথে সরি বলুন। সকলের জন্য শুভ কামনা। সর্বোপরি একটা কথা বলবো যখন যে কাজই করো না কেন নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে করো। পরিশ্রম করো সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ, আল্লাহর উপর ভরসা রেখ। আল্লাহ কোন পরিশ্রমীকে নিরাশ করেন না।

-মোঃ রাসেল মনির

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (সুপারিশপ্রাপ্ত)

৪১তম বিসিএস (কৃষি) ।

‘’ভালো প্রিলির প্রস্তুতিই আমাকে এগিয়ে রেখেছিল’’

বিসিএস একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া যার শুরুটা হয়েছিল আমার ২০১৮ এর প্রথম দিকে। ক্যাম্পাস লাইফে এইগুলো নিয়ে ২-১ জন বড় ভাই কথা বললেও গুরুত্বটা বুঝতে সময় লেগেছিলো। প্রিলির প্রস্তুতিটা ভালো হলে লিখিত আর ভাইভাতে কাজে লাগে যার উপকার আমি পেয়েছিলাম।আমার পড়াটা ছিলো রুটিন মাফিক তাই পরীক্ষার আগে প্রেসারটা কম ছিলো। তবে চাকরি করে ভাইভা কিংবা লিখিত দিয়ে ভালো ফলাফল করাটা কঠিন। তবে একটা সরকারি ব্যাংকে কর্মরত থেকেও আমার সহকর্মীদের সহযোগিতায় সব কিছুই ভালো ভাবে সম্পন্ন করেছি। নতুনরা যদি প্রিলি আর লিখিততে বেশি গুরুত্ব দেয় তাহলে ভাইভাতে এগিয়ে থাকবে ।

-মোঃ সাইদুর রহমান

পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা

বিসিএস (পরিবার পরিকল্পনা)

‘’খুশিতে কান্না করেছি’’

আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে ও সকলের দোয়ায় ৪১তম বিসিএস এ কৃষি ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি। গত ৩ আগস্ট সন্ধ্যার কিছুক্ষণ পরে রেজাল্ট হল, রেজাল্ট শীটে নিজের রোল নম্বর টা দেখতে পেয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয়েছে, সে অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না, চোখ থেকে অঝোরে পানি পড়তেছিল, বাড়ি তে মাকে ফোন দিয়ে কান্না করতে লাগলাম, এত দিনের স্বপ্ন, সৃষ্টিকর্তা যে আমাকে ঐ ২৫২০ জনের মধ্যে কবুল করেছেন এজন্য তাঁর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞ। জীবনে স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো নতুবা বিসিএস ক্যাডার হবো, প্রথমটা হয়ত নানান কারনে হয়নি, ২য় টা আজ অর্জন হলো!! অনার্স শেষ হল ২০১৬ সালের মার্চে, তখন ৩৭তম বিসিএস এর কেবল সার্কুলার দিয়েছে, খুব তোড়জোড় করে আবেদন করলাম, ওদিকে মাস্টার্স এ ও ভর্তি হলাম, এর মধ্যে ২০১৬ সালের ৭ মে একটা মারাত্মক দুর্ঘটনায় জীবনে নেমে আসে এক করুণ ট্রাজেডি, প্রায় দেড় থেকে দুই বছর স্টাডি গ্যাপ, এর মধ্যে অনেক কষ্ট করে শুধু মাস্টার্স টা শেষ করলাম ২০১৭ সালে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি তে ঢাকায় এসে পড়াশুনা শুরু করলাম, জীবনের প্রথম প্রিলি ৪০তম বিসিএস, কিন্তু ফেল করলাম, ২০১৯ সালে ৪১ তম বিসিএস এর সার্কুলার হলো, আবেদন করে পড়াশুনা ভালই করতে লাগলাম, এর মধ্যে আসলো করোনা, চলে গেলো ২০২০ সাল পুরোটা,ধৈর্যকে স্থির রেখে ২০২১ এ মার্চের ১৯ তারিখ প্রিলি দিয়ে ৪১ এর যাত্রা শুরু করে সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুনে ভাইভা দিলাম, আল্লাহ খালি হাতে ফেরান নি, বিজ্ঞ সদস্য কে এম আলী আজম স্যারের বোর্ডে ভাইভা দিলাম, ভাইভা মোটামুটি ভালোই হয়েছিল। ৩ আগস্ট দীর্ঘ ৪ বছররের জার্নি শেষে আল্লাহর রহমতে মা-বাবার মুখে হাসি ফুটিয়েছি, এর পর আর পিছনে ফিরতে হয়নি। ৪৩, ৪৪, ৪৫ সবগুলোতই আছি ইনশাল্লাহ। সবচেয়ে বড় কথা হলো এটাই আমার জীবনের প্রথম চাকরীর ভাইভা ছিল!!! সুতরাং চেষ্টা করলে যে সম্ভব তার প্রমাণ আমি নিজে! বিসিএস এর জন্য যারা চেষ্টা করছে তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, যদি আপনারা ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে পারেন অবশ্যই আপনি জয় করতে পারবেন, তবে বর্তমানে চাকরীর বাজারে শুধু বিসিএস নিয়ে বসে থাকলে (যেহেতু এটা একটু লং জার্নি) হবে না অন্যান্য জবের এক্সাম গুলোও দিবেন।

ধন্যবাদ জানাই আমার বাবা-মা, বোন-বোন জামাই, আঙ্কেল যারা সবসময় মানসিক এবং অর্থনৈতিক সাপোর্ট দিয়ে আমার পাশে ছিল। কাছের কিছু বন্ধু-বান্ধব ও বড় ভাইদের প্রতি বিশেষ করে সনন ভাই এবং বোরহান ভাই যাদের অনেক অনুপ্রেরণা পেয়েছি তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। সুস্থ জীবন কামনায় সকলের কাছে দোয়াপ্রার্থী।

-সাজেদুল ইসলাম সাজিদ

কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (সুপারিশপ্রাপ্ত)

৪১তম বিসিএস (কৃষি)

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে