রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক ৪ সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৮জনকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া ১৫ শিক্ষার্থীকে অপরাধ বিবেচনায় হলের আবাসিকতা বাতিল, আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হলেও প্রকাশ করা হয়না তাদের নাম। রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাতে শাস্তিপ্রাপ্ত সকলের নাম হাতে এসেছে প্রতিবেদকের হাতে।
স্থায়ী বহিষ্কারপ্রাপ্ত ৬ জন হলেন, রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান বাবু, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-আল-গালিব, সাবেক সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু, গণিত বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের জয়ন্ত কুমার রায়, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগ ২০১৯-২০ সেশনের মো. মিশকাত হাসান। তবে এসব শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব না থাকলে সনদ বাতিল করা হবে।
২ বছরের জন্য বহিস্কার প্রাপ্ত ৫ জন হলেন, সমাজকর্ম বিভাগের মো. শামীম রেজা, মো. আব্দুল্লাহ আত তাসরীফ, মিনহাজুল ইসলাম, মুজাহিদ আল হাসান, আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের আরিফুল ইসলাম। ১ বছরের জন্য বহিস্কার ৪ জন হলেন সমাজকর্ম বিভাগের আলফি শাহরিন আরিয়ানা, জারিফা আহনাফ ইলমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের মো. আহসানুল হক (মিলন) দশর্ন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের কিশোর পাল।
৬ মাসের জন্য বহিস্কার ২ জন হলেন সমাজকর্ম বিভাগের আনিকা আলম উষা মরিয়ম আক্তার শান্তা। ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে মার্কেটিং বিভাগের অন্তর বিশ্বাসকে। শুধু পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে মার্কেটিং মো. নাজমুল হোসেন নাবিল।
আবাসিকতা বাতিল প্রাপ্ত ১৪ জন হলেন,
মুচলেকা প্রদান করতে বলা হয়েছে ৫ জন শিক্ষার্থীকে। তারা হলেন, ফোকলোর বিভাগ শামীমা ইয়াসমীন জীবন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ নাছরিন আক্তার নেহা, ইতিহাস বিভাগ তানজিনা আক্তার, চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগ মোছা. হুমায়রা আক্তার, চারুকলা বিভাগের মোছা. তামান্না তাসনীম অরিত্রা।
৫ জন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রমাণিত অপরাধের জন্য শান্তি প্রদান করা হলেও অধিকতর তদন্ত সাপেক্ষে পুনরায় তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তারা হলেন, সংস্কৃত বিভাগের বাবলী আক্তার, নৃবিজ্ঞান বিভাগ জাফরিন খান প্রিয়া, চারুকলা বিভাগের বাবলী ইসলাম নিঝুম, লোক প্রশাসন বিভাগ রাইতাহ ইসলাম দর্শন বিভাগের কিশোর পাল।
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন সময়ে র্যাগিং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সরাসরি হামলা, ষড়যন্ত্র, ইন্ধনমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকা, ভয়ভীতি, হলে সিট বাণিজ্য এবং গণরুমের ছাত্রীদেরকে জোরপূর্বক শ্লোগান দিতে বাধ্য করা, হলের কক্ষের তালা ভেঙ্গে কক্ষ দখল, গভীর রাতে ছাত্রীদের ঘুম থেকে উঠিয়ে নিয়ে মিটিং করা, শিক্ষার্থীদের ব্লাকমেইল করা, শিক্ষার্থীদের জিনিস চুরি, দূর্ব্যবহার করা, নেশাদ্রব্য সেবন করা, উচ্চস্বরে গান-বাজনা বাজিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটানো, রাতে নিজ কক্ষে নিয়ে গিয়ে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো, মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্রে তল্লাশি চালানো, হত্যার হুমকি প্রদান, শিক্ষার্থীদের নিপীড়ন ও অত্যাচার ইত্যাদি বিভিন্ন অপরাধের ধরণ ও মাত্রাভেদে তাদেরকে এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
যাযাদি/ এস