রোববার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২

সিলেটে ফেসবুক কমেন্টের জেরে  কলেজ শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত

এমসি কলেজ প্রতিনিধি
  ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:১৪
সিলেটে ফেসবুক কমেন্টের জেরে  কলেজ শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত
ছবি: যায়যায়দিন

সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের হোস্টেলে দশ-বারোজনের অতর্কিত হামলায় এমসি কলেজ ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরাই মিজানুর রহমান রিয়াদ নামের এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত পক্ষের বক্তব্যে উঠে আসে, হামলাকারীরা ছাত্রশিবিরের কর্মী।

আহত রিয়াদ এমসি কলেজ তালামীযের সহ তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় ছিলেন।

বুধবার দিবাগত (২০ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় রিয়াদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি কলেজ ছাত্রাবাসের ১ম ব্লকের ১১১নং কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী।

আহত রিয়াদের রুমমেট বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জুনেদ আহমদ জানান, মধ্যরাতে হঠাৎ দরজায় প্রচণ্ড আঘাতের শব্দ পান। তাদের জুনিয়র একজন দরজা খুলে দেওয়ার পর রিয়াদকে জিজ্ঞেস করা হয় কুয়েটের ঘটনায় ফেসবুকে কমেন্ট করল কেন। এরপর ১০-১২ জনের একটি গ্রুপ রিয়াদকে লাথি দিয়ে বিছানা থেকে নিচে ফেলেন। হামলাকারীরলরা হলো নাজমুল, ইসমাইল, আদনান, সালমান, সাদনান, মাহবুব প্রমুখ। এক পর্যায়ে পাশের রুম থেকে রড নিয়ে রুমে প্রবেশ করে নাজমুল ও সালমান। জুনেদ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে রুমের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। রুমের বাইরে থাকা জুনেদের আর্তচিৎকারের ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা জড়ো হন। রিয়াদকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য গাড়ি আনতে গেলেও বাধা দেয়া হয়। এরপর হামলাকারীররা চলে গেলে জুনেদ আহত রিয়াদকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান। রিয়াদের মাথা, পিঠ ও ডান পায়ের কয়েক স্থানে জখম হয়েছে।

কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি নিউজের কমেন্টে রিয়াদ লিখেন, কীসের জন্য এত ত্যাগ করলাম। দিনের বেলা পুলিশের টিয়ারশেল আর লাটিচার্জ। রাতে পালিয়ে থাকলাম। সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের স্বপ্নে এত ছাত্র প্রাণ দিল। এখন যদি গুপ্ত সংগঠনের নেতা কর্মীরা ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বসেন তাহলে এই ত্যাগের মূল্য কী।

আহত শিক্ষার্থী রিয়াদ জানান, ফেসবুকের উপরোক্ত কমেন্টের জেরে হামলা করা হয়েছে। হামলাকারীরা এমসি কলেজ শিবির কর্মী।

এমসি কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল আনাম মোঃ রিয়াজ জানান, এ ঘটনায় কোনো শিক্ষার্থী যোগাযোগ করেনি। স্যোসাল মিডিয়ায় তিনি দেখার পর কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আকমল হোসেন, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক প্রফেসর মোহাম্মদ তোফায়েল আহাম্মদ ও হোস্টেল সুপার মোঃ মুসলেহ উদ্দিন খানকে নিয়ে হোস্টেলে যান এবং পরবর্তীতে ওসমানী মেডিকেলে রিয়াদকে দেখতে যান। হোস্টেলে সবাইকে সতর্ক করে এসেছেন ভবিষ্যতে যাতে এরকম কোনো ঘটনা না ঘটে।

এমসি কলেজ হোস্টেল ১ম ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হোস্টেল সুপার, রসায়ন বিভাগর প্রভাষক মোঃ মুসলেহ উদ্দিন খান জানান, এ ঘটনায় আমাদের কেউ কিছু বলেনি। অধ্যক্ষের সাথে গিয়ে আমরা রিয়াদকে দেখে এসেছি।

এমসি কলেজ শিবির সভাপতি ইসমাইল খান বলেন, এ ঘটনায় শিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নাই। জানামতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীর মাঝে ফেসবুক তর্কের জেরে দুজনের মধ্যে এরকম ঘটনা ঘটেছে এবং উভয়ই আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে।

এমসি কলেজ তালামীয সভাপতি আলবাব তালুকদার বলেন, ‘আমরা সবসময় ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাতে হয় আমরা নতুন একটি বিপ্লবের পরও ছাত্রশিবির কর্তৃক এমন ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমার জানামতে ছাত্রশিবিরের সাথে আমাদের কোন দ্বন্ধ নেই। তারা ফেসবুকের নিরপেক্ষ একটি কমেন্টকে কেন্দ্র করে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটালো, এটা আসলে কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা কলেজ প্রশাসনের কাছে ক্যাম্পাসের সকল সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি যারা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।’

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে কলেজ তালামীয সভাপতি জানান মামলার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

যাযাদি/ এমএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে