বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

​ হত্যাচষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী সায়নী ঘোষ

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ নভেম্বর ২০২১, ০৯:২৩
আপডেট  : ২২ নভেম্বর ২০২১, ১০:২৮

ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস। ২৫ নভেম্বর সেখানে পৌরসভা নির্বাচন হবে। এ উপলক্ষে প্রতিদিনই আগরতলায় যাচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা। আজ সোমবার আগরতলায় অভিষেক ব্যানার্জির পদযাত্রা কর্মসুচি রয়েছে। এ উপলক্ষে প্রচারে গিয়েছিলেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের নেত্রী সায়নী ঘোষ। অভিযোগ, গতকাল রবিবার সায়নীকে থানায় ডেকে খুনের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।

আগরতলা পুলিশের অভিযোগ, সায়নীর গাড়ি আগরতলায় আশ্রম চৌমহনি এলাকায় স্থানীয় মানুষকে চাপা দিতে গিয়েছিল। এ খবর পেয়েই আগরতলা যেতে চেয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও এমপি অভিষেক ব্যানার্জি। কিন্তু ‘টেকনিক্যাল কারণে’‌ রবিবারের বদলে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সোমবারই যাচ্ছেন তিনি। তার অভিযোগ, ত্রিপুরায় গণতন্ত্র নেই। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও মানছেনা বিপ্লব দেবের সরকার। ‘‌নির্লজ্জ’‌ বলেও ত্রিপুরা সরকারকে কটাক্ষ করেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সায়নিকে ফোন করে জানিয়েছেন দল তাঁর পাশে থাকবে।

রবিবার সকাল থেকেই আগরতলা পূর্ব থানায় ছিলেন সায়নী। তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে ৩০৭, ১৫৩ এবং ১২০ বি ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ, সোমবার অভিষেকের পদযাত্রা ভেস্তে দিতেই ষরযন্ত্রে লিপ্ত বিজেপি সরকার। ত্রিপুরা পুলিশের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রে সামিল হওয়ার অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতারা।

তাদের অভিযোগ, বেআইনিভাবে থানায় ডেকে এনে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে সায়নিকে। শুধু তাই নয়, সায়নির সঙ্গে তৃণমূল নেতারা থানায় এলে বিজেপি কর্মীসমর্থকরা তাদের ঘেরাও করেন। পুলিশের সামনেই ত্রিপুরা তৃণমূলের আহ্বায়ক সুবল ভৌমিকের গাড়িতে হামলা হয়। বেশ কয়েকজন তৃণমূল কর্মী জখম হন।

পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের অভিযোগ, ত্রিপুরায় গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত। জঙ্গলরাজ চলছে। সাংসদ সুস্মিতা দেবের অভিযোগ, অভিষেকের সভার প্রস্তুতি ভেস্তে দিতেই পরিকল্পিত ষরযন্ত্র চলছে। বিপ্লব দেব এতই নির্লজ্জ যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকেও পাত্তা দিচ্ছেন না। অভিষেকের অভিযোগ, বিপ্লব বার বার তৃণমূল সমর্থক এবং মহিলা প্রার্থীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বদলে তাঁদের উপর হামলা চালাতে গুন্ডা পাঠাচ্ছেন। বিজেপির শাসনে গণতন্ত্রে প্রহসনে পরিণত হয়েছে।’

রাজ্যসভার এমপি সুস্মিতা দেব জানান, শনিবার গভীর রাতে পুলিশ হানা দেয় তাঁদের হোটেলে। তাকে ডাকা হয় হোটেলের রিসেপশনে। তিনি রাজি হননি। রবিবার সকালে থানায় দেখা করতে বলা হয় তাঁকে। সায়নিকেও ডেকে পাঠানো হয়।

কুণাল জানিয়েছেন, পুলিশ বেআইনিভাবে ডেকে পাঠালেও তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা থেকেই তারা হাজির হন থানায়। সেখানে হেলমেট পরে হাতে লাঠিসোটা নিয়ে বিজেপি সমর্থকরা চড়াও হন। কুণালের মতে, তাদের প্রাণে মারার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। পুলিশের সামনেই চলে পাথর বৃষ্টি। সুবল ভৌমিকের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। জখম হন বেশ কয়েকজন। অথচ পুলিশ ছিল নিরব দর্শক। দিনভর সায়নিকে আটকে রাখার পর বিকেলের দিকে গ্রেফতার করা হয় সায়নিকে। তার বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টারও অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সায়নির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ১৫৩ এ, ৫০৬, ৩০৭ ও ১২০বি-তে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে পেশ করা হবে। সায়নির গাড়ি আগরতলায় আশ্রম চৌমহনি এলাকায় স্থানীয় মানুষকে চাপা দিতে গিয়েছিল বলে অভিযোগ পুলিশের। তবে গাড়ির চালককে গ্রেফতার করা হয়নি। পুলিশ কর্তারাই বলছেন, সায়নি সেই সময় গাড়ির চালকের আসনে ছিলেন না। তাই তৃণমূল বলছে পুরোটাই ষড়যন্ত্র।

সায়নি শনিবার ফেসবুকে পোস্ট করেন, মন্ত্রীর সভায় হাতে গুনে ৫০ জন লোক। এর থেকে বেশি আমাদের ক্যান্ডিডেটদের সভায় দেখা যাচ্ছে। ত্রিপুরার মা-মাটি-মানুষের সমর্থনে চোখে চোখ রেখে খেলা হবে ও বিজেপির গুন্ডারাজের অবসান ঘটবে। জয় ত্রিপুরা। সেইসঙ্গে একটি ভিডিওতে তাঁকে গাড়ির ভিতর থেকে বলতে শোনা যায়। পুলিশের একটি মহল থেকে জানা গিয়েছে, এই কারণেই গ্রেপ্তার হয়েছেন সায়নি।

এদিকে, তৃণমূল নেতাদের উপর হামলায় কটাক্ষ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ট্যুইট বার্তায় লিখেছেন, বিপ্লব দেব এতটাই নির্লজ্জ হয়ে উঠেছেন যে, এখন সুপ্রিম কোর্টের আদেশ নিয়েও তিনি আর মাথা ঘামান বলে মনে হয় না। তিনি আমাদের সমর্থকদের এবং আমাদের মহিলা প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে।

যাযাদি/এসএইচ

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে