হৃদি হক, বাংলাদেশের বরেণ্য সংস্কৃতিজন ডক্টর ইনামুল হক ও লাকী ইনাম দম্পতির জ্যেষ্ঠ কন্যা। মঞ্চ, টিভি নাটক এবং সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি নির্মাতা হিসেবে পরিচিতি আছে তার। সম্প্রতি ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ নামের চলচ্চিত্র পরিচালনার মাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। জীবনের প্রথম চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে সুধীমহলে প্রশংসাও কুড়াচ্ছেন তিনি।
কেমন চলছে আপনার প্রথম পরিচালনার সিনেমা?
যে কোনো পরিশ্রমই সাধনার ফল অথবা ভালো কাজের জন্য মানুষের প্রশংসা সত্যি আনন্দদায়ক। আমি আমার সব কাজেই আমার মেধা শ্রমের সবটুকু দেওয়ার চেষ্টা করি। এই ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম করিনি। হয়তো সে কারণেই দর্শক বরাবরের মতোই আমার এই কাজটি গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া দেশের তরুণ দর্শকদের প্রতি আমার আস্থা ছিল। সাধারণ দর্শকরা বিশেষ করে তরুণরা ভালো গল্প পেলে হলমুখী হন। প্রচুর দর্শক সিনেমাটি দেখেছেন। বাংলাদেশের মানুষ যে প্রচণ্ডভাবে সংস্কৃতিমনা এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি বাঙালি সংস্কৃতিকে যারা লালন ও ধারণ করেন তারা ভালো সিনেমা দেখেন। মুক্তির গল্পের এ সিনেমাটি দিয়ে আমরা ১৯৭১ সালে ফিরে গেছি, আমার এই প্রচেষ্টাকে দর্শক রিলেট করতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে মুক্তির গল্প হিসেবে ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ দর্শকরা দেখে উৎসাহ দিয়েছেন, দিচ্ছেন এটা নিঃসন্দেহে অনেক আনন্দের।মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল?
দেশ স্বাধীনের পর পর আমার বাবা ডক্টর ইনামুল হক এই গল্পটি লিখেছিলেন। সিনেমাটির মূল গল্প বা মূল ভাবনাও তারই। গল্পটা নিয়ে আমাদের দলের একটা নাটক ছিল। সেই ভাবনাটা ঠিক রেখে চিত্রনাট্য করেছি। তবে এতে অনেক চরিত্র যোগ করেছি। কঠিন গল্পটি সিনেমার জন্য বেছে নেওয়ার বিশেষ কারণও ১৯৭১ সাল বাঙালির মননে চিরদিন থাকবে। তবে পর্দায় বিষয়টিকে ফুটিয়ে তোলা অনেক কঠিন ছিল। সময়টাকে ধরাটা অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। ৫২ বছর আগের পরিবেশক্র তখন মানুষের কথা বলার ধরনও একটু অন্যরকম ছিল। বিশেষ করে পোশাক, গেটআপ, মেকআপ, অন্যরকম ছিল। সে সবে ফিরে যেতে হয়েছে সেই সময়ে। জার্নিটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ছিল, যা আমরা উৎরে যেতে পেরেছি বলে এখন মনে হচ্ছে। একটি দৃশ্য করেছি এক হাজারেরও বেশি মানুষ দিয়ে। এক হাজার থেকে দেড় হাজার মানুষ দিয়ে একটি দৃশ্য করার জন্য অনেক খাটতে হয়েছে। সবই করেছি ভালো একটি সিনেমার জন্য। বিশেষভাবে বলতে পারি অনুদানটাকে আমরা সম্মান হিসেবে দেখছি। আসলে তো আরও অর্থ যোগ করতে হয়েছে। সিনেমা তো অনেক বড় বিষয়। আমাদের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘টিকিট’ এগিয়ে আসায় আমাদের জন্য কাজটি সহজ হয়েছে। আব্বা না থাকলেও দূর থেকে তিনি নিশ্চয় শক্তি হিসেবে কাজ করছেন।
সিনেমার ‘যাচ্ছো কোথায়’ গানটিকে অনেকেই টার্নিং পয়েন্ট বলছেন
আমার লেখা ‘যাচ্ছো কোথায়’ গানটির সুর ও সঙ্গীত করেছেন ওপার বাংলার দেবজ্যোতি মিশ্র। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন কামরুজ্জামান রনি এবং ইশরাত এ্যানি। সত্যি কথা বলতে সিনেমার আগে গানটি মুক্তির পর অসংখ্য মানুষের প্রশংসা পেয়েছি। এছাড়া একটি উর্দু গান মুক্তি পেয়েছে। এটার জন্যও প্রশংসা পেয়েছি। আর সিনেমা মুক্তির পরতো আরও। সব মিলিয়ে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছে। তবে শুধু ‘যাচ্ছো কোথায়’ গান নয় ‘১৯৭১ সেইসব দিন’ সিনেমার দর্শক সাড়ায় আমি আপ্লুত।পরবর্তী সিনেমা কবে আসবে?
টিভি নাটক বা থিয়েটারে নতুন কোনো কাজের খবর আছে কি? আমি তো আসলে মঞ্চের মানুষ। সুতরাং এটা নিয়েই থাকি। এই কাজের বিরতি বা দূরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সব সময় মঞ্চভাবনা বা মঞ্চের কাজ নিয়েই থাকতে হয়। আমাদের নাগরিক নাট্যাঙ্গন দলের একটা স্কুল আছে, সেটার কাজও করতে হয়। আবার প্রডাকশন হাউজ ‘টিকিট’ এর কিছু কাজ তো থাকেই। সব মিলিয়ে কাজ কিন্তু থেমে নেই। কাজ করছি, এই তো।
যাযাদি/ এস