রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

উত্থান-পতনের টানাপোড়েনে মাহী

মাতিয়ার রাফায়েল
  ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:১৬
ছবি: সংগৃহীত

কী চাইতে কী হয়ে যাচ্ছে একের পর এক মাহিয়া মাহীর। চলচ্চিত্রে থিতু হলেও এর ভেতরে-বাইরে কীসের চাপে যেন লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে ক্যারিয়ারে অর্জিত সাফল্যগুলোও। প্রথম স্বামীর সঙ্গে ভালোবাসার বিয়ে ভাঙা, দ্বিতীয় বিবাহ, ‘মুরাদকাণ্ড’, জাতীয় নির্বাচন- এমন একের পর এক ঝুটঝামেলা যেন তাকে ছাড়তেই চাইছে না। প্রথম বিয়ে কেন ভাঙল জানল না কেউ। আবার সে বিয়ে ভাঙতে না ভাঙতেই অর্থাৎ মাসতিনেক যেতে না যেতেই যোগাড়যন্তর করে ফেললেন কামরুজ্জামান সরকার রাকিব নামে আরেক পাত্র। যা তখন বেশ আলোচনার জন্ম দেয়।

কারণ, ঘটনাটি এতই দ্রুত ঘটল অনেকে মনে করেছেন প্রথম বিয়ে ভাঙার পদধ্বনির সময় থেকেই মাহী হয়তো দ্বিতীয় বিয়ের পাত্রটি খুঁজতে শুরু করেন। অনেকে যেমন চাকরি ছাড়ার আগে আরেক চাকরি ঠিক করেন এবং কিংবা আরেকটি চাকরি নিশ্চিত করার আগে আগের চাকরি ছাড়েন না- ব্যাপারটি যেন সেরকমই ঘটেছিল মাহীর দ্বিতীয় বিয়ের পিঁড়িতে বসার আগে।

প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পরে, ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর রাকিবকে বিয়ে করেন মাহী। প্রথম বিয়ে হয় ২০১৬ সালের ২৫ মে। পাঁচ বছর কাটতে না কাটতেই পঞ্চম বিবাহবার্ষিকীর দু’দিন আগে সেই সম্পর্কের ইতি টানেন অভিনেত্রী। তখনো প্রথম স্বামী অপু বলেছিলেন, ‘ছয় মাস ধরে আমাদের মধ্যে বোঝাপড়ায় সমস্যা হচ্ছিল। তাই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’ নতুন বিয়ের পর মাহী দ্বিতীয় স্বামীর উদ্দেশ্যে লিখেন, ‘আজকের তারিখটা স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখব প্রিয় ডায়েরিতে। তোমার এই একটা লাইনের জন্য আমি যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করেছিলাম। প্রিয়তম, তোমার এই একমাত্র বৌয়ের একমাত্র ব্যক্তিগত চিত্রধারক মৃত্যু পর্যন্ত তুমিই থাকবে ইনশাআল্লাহ, ভালোবাসি তোমাকে।’

এ সময় থেকে মাহী যেন আরও উচ্চাভিলাষী হয়ে উঠলেন। চাইলেন রাজনৈতিক ক্ষমতা। বিয়ের অল্প সময়েই সন্তান নিলেন। নাম রাখলেন ফারিশ। মানে কী? ফারিশতা থেকে ফারিশ! সন্তানকে দেওয়া এমন একটি চমৎকার নাম থেকেও বোঝা যায় এ সংসার কখনো ভেঙে যাবে এমন প্রস্তুতি কখনোই ছিলেন না মাহী। এ সংসার আজীবন চলবে ভেবেই তো এই সন্তান নেওয়া!

অনেকে মনে করেন, ‘মুরাদকাণ্ড’র দুঃসহ স্মৃতিই মাহীকে রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রতি অতি উৎসাহী করে তোলে। যে রাজনৈতিক ক্ষমতার জোরে মুরাদ মাহীকে অপমান করেছে সেটারই শিক্ষা দিতে চাইলেন এমপি হয়ে তিনি। চাইলেন স্বামীর রাজনীতিক পরিচয়কে কাজে লাগাতে। তবে তিনি হয়তো জানতেনই না রাজনৈতিক অঙ্গনেও একটা শ্রেণি বিভাজন থাকে। আপাতত সুসম্পর্ক থাকলেও সেই শ্রেণি বিভাজনে কোন নেতা কোন সারিতে থাকেন তার একটা ভেদ-অভেদ থাকে।

পরে যা হওয়ার হয়েছে। মাহী পারলেন না। প্রথমে উপ-নির্বাচনে তারপরে সরাসরি নৌকা প্রতীক পেতে। ভেবেছিলেন চলচ্চিত্রের পরিচিতিই তাকে পাস করিয়ে দিবে। ‘নৌকা’ না পেয়ে ‘ট্রাক’ প্রতীকে ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হলেন। এখানেও তাকে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। প্রথমে বাতিল হয় তার আবেদন। পরে লড়াই করে প্রার্থিতা ফিরে পান। দিনশেষে আসল নির্বাচনে গো-হারা হারলেন। বাজেয়াপ্ত হলো জামানত। হাল ছাড়তে চাননি। আবারও মনোনয়ন ফরম তুললেন পঞ্চাশ হাজার টাকার বিনিময়ে সংরক্ষিত আসনে ‘নারী সংসদ সদস্য’ হিসেবে। শুধু তিনিই নন, শোবিজের সবাই প্রত্যাখ্যাত হলেন।

তখন কী করবেন মাহী! রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষের স্বপ্নগুলোর সবই ভেঙে চুড়মুড়! হঠাৎই ফেসবুকে ফলোয়ারদের চোখে পড়ল মাহীর দ্বিতীয় সংসারও ভাঙছে! ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে এক ভিডিওবার্তায় জানান মাহিয়া মাহী। নড়েচড়ে বসেেল মিডিয়া। এরপর থেকে ফেসবুকে বিভিন্ন সময় করা পোস্টে নিজের একাকিত্বে ভোগা ও আস্থাহীনতার বিষয় তুলে ধরেছেন তিনি।

তবে কেন বিয়ে ভাঙছে কিছুই বলতে চাইলেন না মাহী। বলেনও নি। এতটুকুই জানান, তাদের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর কী নিয়ে সমস্যা হচ্ছে সেটাও স্পষ্ট করে জানাননি। শুধু জানিয়েছেন, দু’জনে মিলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে প্রথম বিয়েটির মতোই দ্বিতীয় বিয়ে ভাঙার কাহিনীটিও রহস্যই থেকে গেল কেন মাহীর বিয়ে বারবার ভাঙে! কেন তার সংসার এত ঠুনকো! এবার মাহী আবারও বললেন, তার পেটে বোমা মারলেও, মাথায় গুলি চালালেও তিনি কখনোই বলবেন না কেন তার এই বিয়েটি ভেঙে গেল! সদ্য প্রাক্তন হয়ে যাওয়া স্বামী রাকিব সরকারের বিরুদ্ধে তিনি কখনোই কিছু বলতে পারবেন না। ২৭ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার ফেসবুকে তার নতুন ভিডিও বার্তায় এমন কথাই বলেছেন ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহী।

এই বক্তব্যে তিনি স্বামী রাকিব সরকারকে নিজের জীবনের ‘অতীত’ বলে মন্তব্য করেছেন। একই সঙ্গে এই অভিনেত্রী বলেছেন, আমার পেটের মধ্যে বোমা মারলেও, মাথায় পিস্তল ধরলেও আমি রাকিবের ব্যাপারে খারাপ কিছু বলতে পারব না।

মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে এক ভিডিওবার্তা নিয়ে হাজির হয়ে এই কথাগুলো বলেন মাহী। এ সময় সিনেমা থেকে দূরে সরে আসার কারণও জানান অভিনেত্রী। তবে ইতোমধ্যে কেন তাদের বিয়ে ভাঙল এ নিয়ে স্বামী রাকিবও একটি ভিডিও নিয়ে আসার কথা জানিয়েছিলেন। সেটা না আনা পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে আসলেই কেন ভাঙল এ বিয়ে। তবে প্রথম স্বামীর মতো দ্বিতীয় স্বামীকে নিয়েও মাহীর কোনো অভাব-অভিযোগ প্রকাশ্যে না আনা তার চরিত্রের অন্যতম একটি গুণগত বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকবে।

অন্যদিকে বিয়ে ভাঙার পর চার বছর সংযমের পর দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মাহীর প্রথম স্বামী পারভেজ মাহমুদ অপু।

মাহী বলেন, ‘রাকিব আমার সাবেক স্বামী ছিলেন, আমার ভালোবাসার মানুষ ছিলেন। আমি তাকে ভালোবেসেছি। অল্প না, অনেক ভালোবাসি। যার কারণে আমি সিনেমা থেকে অনেক দূরে চলে গিয়েছিলাম। কেন গিয়েছি? কারণ তিনি তা পছন্দ করতেন না। সে আমাকে কখনো বলে নাই যে তুমি সিনেমা করতে পারবে না। আমার মনে হয়েছে যে, ওর এটা (সিনেমা) পছন্দ না। আমি এ জন্য সিনেমা থেকে সরে গিয়েছিলাম।’

রাকিবকে এখনো সম্মান করেন জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘রাকিব ফেসবুকে কি লিখল, কি লিখল না সেটি আমার কিছু যায় আসে নাÑ আমি ‘ডো’ন্ট কেয়ার’। আমার পেটের মধ্যে বোমা মারলেও, আমার মাথায় পিস্তল ধরলেও আমি রাকিবের ব্যাপারে খারাপ কিছু বলতে পারব না। আমি তাকে সম্মান করি এবং এটা মৃত্যু পর্যন্ত থাকবে। ওর কি কোনো নেগেটিভ সাইট নাই? দুইটা মানুষ প্রেম করার সময় বোঝা যায় না কার কী প্রবলেম। বিয়ের হলে বোঝা যায় কার কী প্রবলেম।’

এ সময় সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমার কোনো গান ভালো লাগলে সেটা ফেসবুকে লিখি, কোনো সিনেমা দেখলে ডায়ালগ ভালো লাগলে সেটা ফেসবুকে লিখি, সে জন্য আমার মন খারাপ এমন নয়। তবে হ্যাঁ, দীর্ঘদিনের এক সম্পর্ক থেকে বের হয়ে এসেছি, সে জন্য মন খারাপ। তবে এটা নিয়ে যেভাবে নিউজ করছে, মনে হচ্ছে যেন আমি কাউকে খুঁজতে দ্বারে দ্বারে ঘুরতেছি। না, আমার কাউকে লাগবে না। আমার ফারিশ আছে। আমি তাকে নিয়েই ভালো আছি।’

মাহী আরও বলেন, ‘আমার সামনে এখন আবার বড় লড়াই। আমার সন্তান ফারিশকে বড় করতে হবে। তাই আমি নতুন করে কাজ শুরু করতে চলেছি।’

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে