বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গোলাপগঞ্জে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদনে স্বাবলম্বী ৬০ নারী 

গোলাপগঞ্জ (সিলেট) প্রতিনিধি
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৩৭

সিলেটের গোলাপগঞ্জে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে প্রশংসা কুড়িয়েছেন শতাধিক কৃষাণ-কৃষাণী। তস্মধ্যে ৬০ জন নারী উদ্যোক্তাও রয়েছেন। এসব নারী উদ্যোক্তা সারের খামার গড়ে প্রতি মাসে ৫০টন সার উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হয়েছেন।

জানা যায়, উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের শতাধিক খামারী কৃষাণ-কৃষাণীরা ভার্মি কম্পোস্ট সার তৈরির খামার গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে ৬০ জনই নারী উদ্যোক্তা কৃষাণী। তারা নিজেদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভাবে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে তা সরবরাহ করার লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন ‘কেঁচো ভার্মি কম্পোস্ট’ জৈব সার উৎপাদনের খামার।

অনেক উদ্যোক্তা খামারী ভার্মি কম্পোস্ট নামের সাথে নিজেদের নাম সংযুক্ত করে এসব খামার থেকে উৎপাদিত সার সাধারণ কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করছেন। আর এতেই বদলেছে তাদের ভাগ্য, আয় করছেন বাড়তি মুনাফা।

উন্নত মানের জৈব সার বা “ভার্মি কম্পোস্ট” ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি হয় তেমনি প্রকৃতির জন্যও তা খুবই উপকারী, বলছে উপজেলা কৃষি অফিস। উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় বর্তমানে ‘ভার্মি কম্পোস্ট’ উৎপাদনে বিভিন্ন এলাকার আরও উদ্যোক্তা খামারী এগিয়ে আসছেন।

তারা নিজেদের তৈরী সার ব্যবহার করে প্রতি কেজি সার ২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলে জানান উদ্যোক্তারা। কৃষকরা জানান, কচুরিপানা, কলাগাছ, গোবর ও কেঁচো দিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে দেড় মাস রেখে দেয়া হয় বক্সে। পরে কয়েকদিন পর পর আরও মিশ্রিত করে রাখা হয়। এরকম এক মাস পরে পাত্র থেকে কম্পোস্ট তুলে মেশিন দিয়ে সার প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এরপর প্যাকেট জাত করে বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়।

উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, ফসল উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার ব্যবহারের তুলনায় ভার্মি কম্পোষ্ট সার ফসল উৎপাদনে অনেক উপযোগী। এছাড়া রাসায়নিক সার ব্যবহারে অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়।

বর্তমানে হাতের নাগালে ভালো মানের সার পাওয়ায়, কৃষকরা তা কিনে নিজ জমিতে প্রয়োগ করছেন। এতে ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে কেঁচো কম্পোস্ট সার, চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন উপজেলার ১০০জন খামারি। এরকম একজন সফল খামারী উপজেলার লক্ষীপাশা ইউনিয়নের খামারী শাহজাহান আহমদ টিপু জানান, এক বছর আগে কৃষি অফিস থেকে সার উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ভার্মি কম্পোষ্ট’ সারের উৎপাদন করা শুরু করি।

বর্তমানে আমি ৭টন সার উৎপাদন করছি। এ সারের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। এই জৈব সার তৈরি ও প্যাকেট জাত করতে সময় লাগে এক মাস। কৃষকরা সার ব্যবহার করে ফলনও ভালো পা”েছন। ¯’ানীয় বেশিরভাগ কৃষক এখন রাসায়ণিক সারের পরিবর্তে ব্যবহার করছেন এই সার।’ এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হচ্ছি।

কৃষি অফিস আমাকে একটি মেশিন ও অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছে। পশ্চিম আমুড়া ইউনিয়নের খামারী নেওয়ারুন বেগম বলেন, কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতায় আমি জৈব সার উৎপাদন শুরু করি এবং প্রতি মাসে উৎপাদন করি এক টন। সার উৎপাদন করায় আমি আমার ফসল উৎপাদনে নিজের জমিতে প্রয়োগের পাশাপাশি বিক্রি করেও আর্থিক ভাবো লাভমান হচ্ছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরেফুল আলম বলেন, জৈব সার যেমন ফসল উৎপাদনে উপযোগী তেমনি ব্যয়ও কম। তিনি বলেন, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে জমির উর্বরা শক্তি কমে যাচ্ছে । প্রতিনিয়ত জমিতে জৈব সার ব্যবহার হলে জমির উর্বরতা শক্তি বাড়বে। তাছাড়া মহিলাদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এই কার্যক্রম ব্যাপক ভূমিকা রাখছে।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে