বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রিপার ছাদে জলজ পদ্ম-শাপলার সমাহার

আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
  ৩১ মে ২০২৩, ০৯:৫৯
ফাইল ছবি

বড় বোনের কিনে দেয়া ফুলের চারা রোপন করা আর পরিচর্যা করাই ছিল নেশা। বড় বোনের বিয়ের পর নিজেই বাগানী হয়ে যান। শুরু হয় ফুল বাগানের বাগানী হওয়ার গল্প। বলছিলাম পাবনা শহরের পুরাতন চারতলা মোড়ের সাহাপাড়ার সাবেক ব্যাংকার মীর্জা আব্দুর রহিমের দ্বিতীয় কন্যা রেজওয়ানা বিলকিস রিপার কথা।

সম্প্রতি রেজওয়ানা বিলকিস রিপা পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ছাদ বাগানের পরিচর্যাই তার প্রধান কাজ ও নেশায় পরিণত হয়েছে। ২৭ মে শনিবার বেলা ১২ টায় তার নিজ নামীয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে পোষ্ট করা ‘আমরা পাবনার সৌখিন বাগানী’ পেজ থেকে এক পোস্টে জানা গেল তার বিরল অনুভূতির কথা।

এদিন তার সবচেয়ে একটি খুশির দিন দাবী করেছেন তিনি। তার অনুভূতিতে প্রকাশ পেয়েছে চলতি বছরের ২ মার্চ নরসিংদীর এক ফুল বাগানীর কাছ থেকে নিয়েছিলেন ৮ টি বিভিন্ন রংয়ের পদ্ম ফুলের কন্দ (টিউবার)। ২৭ মে একটি টিউবার থেকে ফুটেছে পদ্মফুল। সাথে দেশি বিদেশি নানা জাতের পদ্ম শাপলা ফুলসহ হরেক রকমের ফুল ফুটেছে। সুগন্ধ আর সৌন্দর্য বিকশিত করতে ফুলপ্রেমিদের।

ফেসবুকের এ তথ্য পেয়েই দৈনিক যায়যায়দিনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় ফুল বাগানী রেজওয়ানা বিলকিস রিপার সাথে। ফুল বাগানী হওয়ার নানা গল্প উঠে আসে। আলাপচারিতায় ফুল বাগানী রিপা জানালেন, ফুল গাছ, ফুল বাগান আর ফুল এখন তার নেশা। তার চারপাশ আষ্ঠেপিষ্টে জড়িয়ে আছে এই বাগানের মায়া। বিকেলে বাগানের পরিচর্যা করতে উঠলে তিনি ভুলে যান ছাদ থেকে নামার কথা।

রিপা বলেন, ছোট্ট বেলা থেকেই ফুলের প্রতি অন্যরকম নেশা কাজ করতো। একটি সুবৃহৎ ছাদ বাগানী হতে পারবো এটা কখনো ভাবতে পারিনি। বাগানের দিকে তাকালে, ফুল ফোটা ও এর সৌন্দর্য দেখলে আমি নিজেই স্থির থাকতে পারিনা। গল্পে গল্পে বাগানী রিপা বলেন, বড় স্কুলে ও কলেজে যেতেন। রিক্সা ভাড়া আর টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আসার সময়ে একটি করে চারা নিয়ে নিয়ে আসতেন। এর বেশি আপু কিছু করেননি। মূলত চারা গুলো রোপন করা, পরিচর্যা করা, ফুল ফোটানো এগুলো আমিই করতাম। কিন্তু মনের মধ্যে একটি বিষয় কাজ করতো। সেটা হলো বাগানী তো আমি না। আপুর পড়ালেখা শেষ করতেই বাগানের পুরো দায়িত্ব পড়ে গেলো আমার কাঁধে। সেই থেকে আমি এই বাগানের মালিক।

রিপা বলেন, আপুর পথ অনুসরণ করেই আমি যেখানে যেতাম, আগে দেখতাম কোন ফুলের গাছ বা চারা আছে কিনা। যা আমার নেই। সুযোগ হলেই কিনে নিতাম, চেয়ে নিতাম। উদ্দেশ্য ফুলের গাছে সমৃদ্ধ হবে আমার বাগান। কথা বলতে বলতে কষ্টের কথা বললেন রিপা। সম্প্রতি তিনি চেন্নাই গিয়েছিল পারিবারিক কাজে। সেখান থেকে কষ্ট করে একটি ফুলের চারা নিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সেটি বাঁচাতে পারেননি।

রিপার ছাদ বাগানে বর্তমানে তিনশয়ের অধিক ফুলের চারা রয়েছে। লণ্ঠন জবা তার বাগানের অন্যতম আকর্ষণ। সেই সাথে জলজ পদ্ম, ৫/৬ প্রজাতির শাপলা, দেশী শাপলা, শালুক, ১০ রকমের বিদেশী গোলাপ, ২ প্রজাতির নাইট কুইন, মে ফুল, কয়েক প্রজাতির কাঠ গোলাপ, বিভিন্ন প্রজাতির লিলি এমাজন এমনই নানা প্রজাতের নানা নামের ফুলের সমাহার রিপার ছাদ বাগানে।

বাগান পরিচর্যা, রোগ বালাই নিরোধের বিষয়ে কথা বললে বাগানী রিপা বলেন, নিয়মিত বিকেলে পানি দেই। আগাছা পরিস্কার করি। জৈব সার প্রয়োগ করি। রাসায়নিক কোন পদার্থ বা জিনিষ প্রয়োগ থেকে বিরত রেখেছি। গাছ গুলো বাচাঁনোর প্রধঅন উপকরণ পানি সেচ দেয়া। এখন বৃষ্টির সময়ে পানি কম দিলেও চলছে।

প্রতিদিনই আত্মীয় স্বজন বেড়াতে আসলে তাদের উদ্দেশ্য থাকে আগে ছাদে যাওয়া। হরেক রকম ফুলের সমাহার দেখা। নয়ন জুড়ানো আর সৌন্দর্যে এক অসম্ভব সময় ব্যয় করেন তারা।

আমরা পাবনার সৌখিন বাগানী ফেসবুক পেজের এডমিন শারমিন কথা ইসলাম বলেন, আমি জানতান রেজওয়ানা বিলকিস রিপার ছাদ বাগান আছে। অনেক কালেকশন আছে। কিন্তু জানা ছিল না তার ছাদ বাগানে জলজ পদ্ম, শাপলা, শালুক আছে। আমি যখন পেজে তার পোষ্ট থেকে জানতে পারলাম। তখন আমারই ইচ্ছে হচ্ছিল ছুটে যাই ওগুলো দেখে আসতে। তিনি বলেন, আমারও তিনশয়ের অধিক কালেকশন রয়েছে। ফুল গাছ, ফুল বাগান এটা অন্যরকম অনুভূতির ব্যাপার।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে