রোববার, ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১৯ চৈত্র ১৪২৯
walton

আকস্মিক

জোবায়ের রাজু
  ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

মাথার উপরে দুপুরের গরম পড়া তেজি সূর্য। ঘামে ভিজে জবুথবু হয়ে আছেন মোজাম্মেল আলী। গাছের একটি পাতাও নড়ছে না। বাতাসেরতো খবরই নেই। আমিন বাজারের ব্যাংক রোডের কিনারে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। মনটা বড় খারাপ। ডাক্তার সোহরাব তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন। বড় আশা নিয়ে মোজাম্মেল আলী ডাক্তার সোহরাবের কাছে এসেছেন। গত চারদিন ধরে বুকফাটা কাশ তার। কাশতে কাশতে গলাটাও ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ডাক্তার সোহরাব ফি ছাড়া চিকিৎসা করাতে রাজি নন। কিন্তু ফি'র উপযুক্ত টাকা দিনমজুর মোজাম্মেল আলীর কাছে নেই। একজন বাবার বয়সি মোজাম্মেল আলীকে এভাবে চেম্বার কাঁপানো কাশতে দেখেও দয়া হলো না ডাক্তার সোহরাবের।

মোজাম্মেল আলী যখন বোঝে গেলেন পুত্রসম এই নির্দয় ডাক্তার ফি ছাড়া তার চিকিৎসা করাবে না, তখন তিনি মুখটা মলিন করে বেরিয়ে আসতে আসতে ব্যথিত মনে অনুভব করলেন এই জগতে সব মানুষ দয়াময় নয়। হাঁটতে হাঁটতে তিনি ব্যাংক রোডের দিকে চলে এসে খানিকটা হাঁপিয়েও ওঠলেন। পকেটে পয়সা নেই যে ভাড়া দিয়ে দেড় মাইল দূরের বাড়ি যাবেন।

গরমের গতি বাড়ছে। গায়ের সাদা পাঞ্জাবিটা ঘামে ক্রমশ ভিজে যাচ্ছে। রাস্তার পাশের চা দোকান থেকে ভেসে আসছে চায়ের কাপে চামচের টুংটাং শব্দ। এই দুপুরে কার চায়ের লোভ ধরেছে কে জানে!

মোজাম্মেল আলীর সামনে দিয়ে একখানা ভ্যানগাড়ি যাচ্ছে। ভ্যানগাড়ি ভরা কমলা। কমলা আজকাল ভ্যানগাড়িতে বিক্রি হয়, জানা নেই মোজাম্মেল আলীর। কমলার দিকে তাকাতেই নাতি জাবেদকে মনে পড়ল তার। বাবা মরা চার বছরের নাতি জাবেদ গত ক'দিন ধরে কমলার জন্য বড় জ্বালাচ্ছে। পয়সার অভাবে নাতির আবদার পূরণ করা যাচ্ছে না।

ভ্যান থেকে একটি কমলা যে মাটিতে পড়ে গেল, সেদিকে খেয়াল যায়নি ভ্যান চালকের। তিনি ভ্যান চালিয়ে চলেই গেলেন। রাস্তার ঠিক মাঝখানে পড়ে থাকা কমলাটির দিকে তাকিয়ে চোখ চকচক করে ওঠল মোজাম্মেল আলীর। জাবেদের জন্য কমলাটি নেয়া যাবে। নাতি বড় খুশি হয়ে খাবে।

কমলাটি তুলতে যেতেই ঘটনাটি ঘটলো। মোজাম্মেল আলী কমলাটি স্পর্শ করার আগেই এক তরুণের বেপরোয়া বাইকের দ্রম্নতগামী চাকার তলে পিষে গেল সেই কমলাটি। বাইকের অচেনা যুবক সেদিকে ভ্রম্নক্ষেপ না করে বাতাসে ধোঁয়া ছাড়িয়ে চলে গেল আর মোজাম্মেল আলী কাতর চোখে কমলাটির দিকে তাকিয়ে থাকে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে