শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যে দ্বীপে মানুষকে পাঠানো হত মরার জন্য

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৪৯
ফাইল ছবি

সমুদ্রে ঘেরা দ্বীপে কাছের মানুষের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে কে না চান! কিন্তু ইটালির পভেগ্লিয়া দ্বীপের কাহিনি সুখানুভূতি তো দেয়-ই না, বরং ভয় ধরায়। কথিত আছে, পভেগ্লিয়ায় কাউকে পাঠানো হলে ধরে নেওয়া হত যে, তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে।

অধিকাংশের মতে, এই দ্বীপ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জায়গা। সাধারণ মানুষ এই এলাকায় সহজে যেতে পারেন না। পর্যটকদের যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে এক সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশেষ অনুমতি নিয়ে পভেগ্লিয়া দ্বীপের আশপাশে ঘুরে আসা যায়। কিন্তু সকলকে এই অনুমতি দেওয়া হয় না।

ইটালির উত্তরাংশে ভেনিস এবং লিডোর মধ্যবর্তী এলাকায় রয়েছে পভেগ্লিয়া দ্বীপ। ৪২১ খ্রিস্টাব্দের আগে এই দ্বীপের কোনও খোঁজ পাওয়া যায় না। কানাঘুষো শোনা যায়, এই দ্বীপে জনবসতির লেশমাত্র ছিল না। কোনও এক আক্রমণকারীর হাত থেকে বাঁচতে পভেগ্লিয়া দ্বীপে এসে আশ্রয় নেন কয়েক জন।

১৪ শতক পর্যন্ত পভেগ্লিয়ার বাসিন্দা খুব একটা বেশি ছিল না। নির্জনতার কারণে এই দ্বীপ থেকে একে একে সকলে চলে যেতে শুরু করেন। এই দ্বীপকে পরবর্তী কালে নিভৃতবাসের জন্য বেছে নেওয়া হয়।

১৩০০ খ্রিস্টাব্দে প্লেগ মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়লে প্লেগে আক্রান্ত রোগীদের পভেগ্লিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হত। কথিত আছে, প্রায় এক লক্ষেরও বেশি প্লেগ আক্রান্ত রোগী এই দ্বীপে মারা গিয়েছেন। এমনকি যাঁদের সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকত না, তাঁদেরও পভেগ্লিয়া দ্বীপে পাঠিয়ে দেওয়া হত। তাঁরা ধরেই নিতেন যে, তাঁদের মৃত্যু আসন্ন।

রোগীরা মারা যাওয়ার পর পভেগ্লিয়াতেই তাঁদের দেহ জ্বালিয়ে দেওয়া হত। গোটা দ্বীপ যেন আস্ত এক শ্মশানে পরিণত হয়েছিল সেই সময়। সাধারণ মানুষ এই দ্বীপের সামনে দিয়ে যাতায়াত করতেও ভয় পেতেন। ১৭৯৮ সাল থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত আবার স্থায়ী নিভৃতবাসে পরিণত করা হয় পভেগ্লিয়াকে। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শাসনকালে এই এলাকায় অসুস্থ রোগীদের সেবা-শুশ্রুষা করার জন্য পাঠানো হত।

১৯২২ সালে এই দ্বীপে মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে ওঠে। কানাঘুষো শোনা যায়, মানসিক ভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের নিজেদের পরিবার থেকে আলাদা রাখার জন্য পভেগ্লিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়া হত।

আবার অনেক রোগীকে নিয়ে গবেষণাও করা হত পভেগ্লিয়ার মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্রে। মানসিক চিকিৎসালয়টি ‘ভুতুড়ে’ বলে দাবি করেছেন অনেকেই।

পভেগ্লিয়াতে এক রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে মৃত্যু হয় এক চিকিৎসকের। দ্বীপের একটি টাওয়ার থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা যান তিনি। অনেকের দাবি, ‘প্রেতাত্মা’র ভয়ে মানসিক স্থিতি হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি। তাই টাওয়ার থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

চিকিৎসক মারা যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই মানসিক চিকিৎসালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৬৮ সালে ওই চিকিৎসালয়ের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। পরে পভেগ্লিয়ার জমি চাষবাসের জন্য ব্যবহার করা হলেও এখানকার থমথমে পরিবেশে বেশি দিন কাজ করতে পারেননি কৃষকেরা। চাষের জমিগুলি ছেড়ে তাঁরা আবার বাড়ি ফিরে যান।

বহু বছর পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল পভেগ্লিয়া দ্বীপ। গির্জা, মানসিক চিকিৎসাকেন্দ্র, হাসপাতাল, টাওয়ার এবং একটি খালের ধ্বংসাবশেষ ইতিহাসের সাক্ষী হিসাবে রয়ে গিয়েছে পভেগ্লিয়াতে। আনন্দবাজার

যাযাদি/ সোহেল

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে