সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১
স্টেটসম্যানের প্রতিবেদন

নেতানিয়াহুকে কেন থামাতে পারছে না বাইডেন?

যাযাদি ডেস্ক
  ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৪:৪১
ছবি-সংগৃহিত

দিনের পর দিন দখলদার ইসরাইলী বাহিনী অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যা করছে। এই হত্যা থামাতে জাতিসংঘে বিশেষ বিল পাশ করা হয়। যেখানে ভেটো প্রয়োগ করেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

জানা যায়, রমজান মাসের বাকি দিনগুলোতে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে ২৫ মার্চ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) রেজ্যুলুশন ২৭২৮-এ ভোট দেয়।

রেজ্যুলুশনে হামাসের হাতে বন্দি অবশিষ্ট জিম্মিদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ প্রসারিত করার জরুরি প্রয়োজনের উপর জোর দেয়া হয়েছে। ৭ই অক্টোবরের পর প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মঞ্চে তার মিত্র ইসরাইলকে রক্ষা করার জন্য তার ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করেনি।

বিষয়টি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ক্ষুব্ধ করেছে। ভোটের পর নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রকে তার পদক্ষেপের মাধ্যমে জিম্মি আলোচনাকে দুর্বল করার অভিযোগ তোলেন। হোয়াইট হাউস দ্রুত নেতানিয়াহুর সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে যে, তারা এই ইস্যুতে কোনো বিভ্রান্তিতে জড়াতে চায় না । নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে তার শীর্ষ সহযোগীদের একটি পরিকল্পিত প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনাও পিছিয়ে দিয়েছেন।

ভোট নিয়ে দুই মিত্রের মধ্যে টানাপড়েন দেখে অনেকে ভাবছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব পড়বে কি না। গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের সমালোচক এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আপাতদৃষ্টিতে তাদের ওপর নিঃশর্ত সমর্থন দেখে অনেকেই বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র তার নীতিতে হয়তো পরিবর্তন এনেছে। তাদের জেনে রাখা ভালো, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল সম্পর্ক অটুট রয়েছে, দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত অভিযোগ আসলে প্রাতিষ্ঠানিক। কয়েক মাস ধরে মার্কিন প্রশাসন নেতানিয়াহুর সাথে আলোচনায় বাইডেনের ক্রমবর্ধমান হতাশার কথা বর্ণনা করে প্রেসে রিপোর্ট ফাঁস করছে।

বাইডেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর অস্থিরতা দেখে এবং গাজা যুদ্ধের বিষয়ে মার্কিন পরামর্শ প্রত্যাখ্যানের কারণে রীতিমত বিরক্ত হয়েছিলেন।

এমনকি বাইডেন প্রশাসনের সবচেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রকাশ্য বিবৃতি ক্রমশ কঠোর হয়ে উঠেছে, সেখানে যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনার অভাব এবং উচ্চমাত্রায় বেসামরিক মৃত্যুর কারণে নেতানিয়াহুকে হেয় করা হয়েছে। তবুও ইসরাইলের প্রতি মার্কিন নীতি গত পাঁচ মাসে পরিবর্তন হয়নি, বিশেষ করে সাম্প্রতিক তিনটি পদক্ষেপ দ্বারা বিষয়টি প্রমাণিত। ২২ শে মার্চ মার্কিন সিনেট ২০২৪-এর জন্য একটি ব্যয় বিল পাস করেছে যাতে ইসরাইলের জন্য ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং (FMF) প্রোগ্রামের অধীনে ১৯৭৪, ১৯৭৬ এবং ১৯৭৯ সালে ব্যাপক বৃদ্ধি ছাড়া ১৯৭০ সাল থেকে ইসরাইলে মার্কিন সামরিক সহায়তা প্রতি বছর ৩ বিলিয়ন থেকে ৪ বিলিয়নের মধ্যে রয়েছে। গাজায় ইসরাইলের আচরণের বিষয়ে মার্কিন আইন প্রণেতারা (যেমন সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন ) এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির দ্বারা ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও তহবিলের পরিমাণ কমেনি। এমনকি আন্তর্জাতিক বিচার আদালত গাজায় ইসরাইলি অভিযানকে ‘গণহত্যা’ বলে মনে করা সত্ত্বেও; এবং বাইডেন প্রশাসনের অন্দরে ইসরাইলের ক্রিয়াকলাপের নিয়ে সমালোচনা সত্ত্বেও পরিস্থিতি বদলায়নি।

বাইডেন প্রশাসন ইসরাইলে সহায়তা পাঠানোর সময় কংগ্রেসকে দু’বার এড়িয়ে গেছে। ওয়াশিংটন পোস্ট অনুযায়ী, আমেরিকান জনসাধারণকে না জানিয়ে ৭ই অক্টোবর থেকে ইসরাইলে ১০০টি অস্ত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট ডলারের প্রেক্ষিতে অস্ত্র স্থানান্তরের শর্তাবলী সম্পর্কে জনসাধারণকে অবগত করা হয়নি।

তারপর ২৫শে মার্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলি সরকারের কাছ থেকে একটি লিখিত আশ্বাস গ্রহণ করে যে, পরের অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে করা হয়েছে। ৮ই ফেব্রুয়ারি বাইডেনের অধীনে স্বাক্ষরিত একটি জাতীয় নিরাপত্তা স্বারকে ইসরাইলের আশ্বাসের প্রয়োজন ছিল, যেখানে বলা হয়েছে মার্কিন সহায়তার প্রাপকরা যদি এই অস্ত্র পেয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন লঙ্ঘন করে তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা আটকাতে পারে। ভ্যান হোলেন, টিম কাইন, ডিক ডারবিন এবং বার্নি স্যান্ডার্স সহ সতেরজন সিনেটর ইসরাইলের আশ্বাস না মানতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সিনেটর স্যান্ডার্স বলেছেন ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবস্থান মার্কিন আইন এবং কংগ্রেসকে দেওয়া আশ্বাসকে উপহাসে পরিণত করেছে ’।

অবশেষে, যুক্তরাষ্ট্রের রেজ্যুলুশন ২৭২৮-এ বিরত থাকার পরপরই বাইডেন প্রশাসন দাবি করেছে, ভোটে মার্কিন নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। জাতীয় নিরাপত্তার মুখপাত্র জন কিরবির সাথে জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ভোটটিকে ‘অ-বাধ্যতামূলক’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন- দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং আলোচনার মাধ্যমে জিম্মি মুক্তির বিষয়টিতে যুক্তরাষ্ট্র তার সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। হোয়াইট হাউস, জাতিসংঘ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মঞ্চ থেকে উচ্চারিত এই শব্দগুলি ভবিষ্যতের সংঘাতে জাতিসংঘের বৈধতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন করে। UNSC - তে ভেটো দানে বিরত থাকা এবং নেতানিয়াহুর সাথে মনকষাকষি সত্ত্বেও ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি এবং গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের জন্য প্রকাশ্য সমর্থন উভয়ই অটুট রয়েছে। সূত্র :নিউ স্টেটসম্যান

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে