তিনি ভারতের প্রথম মহিলা সিরিয়াল কিলার। কর্ণাটকের কজ্ঞলিপুরা গ্রামের সাদামাটা অভাবী নারী কেম্পাম্মা। বয়সেই দরিদ্র পরিবারের মেয়েটির বিয়ে হয় একজন দরজির সঙ্গে। অভাবের সংসার চালানোর জন্য গৃহপরিচারিকা হিসেবে বাড়িতে বাড়িতে কাজ করতে শুরু করে কেম্পাম্মা।
আর সেই অবস্থাসম্পন্ন পরিবারগুলোকে দেখেই কেম্পাম্মাকে লোভে গ্রাস করে। তাদের মতো করেই নিজের ভাঙাচোরা জীবনকে সাজাতে চায় সে। প্রথমদিকে সেসব বাড়িতে ছোটখাটো চুরি করা শুরু করে এই নারী। কিন্তু একসময় ধরা পড়ে জেলে যায় সে। জেল থেকে ফিরেও আর স্বামীর কাছে ঠাঁই হয়নি তার।
আর এরপরই অপরাধের কালো দুনিয়ায় নিজের আশ্রয় খুঁজে নেয় কেডি কেম্পাম্মা। ধনী হওয়ার নেশায় আর ছোটখাট ছিঁচকে চুরি নয়, সরাসরি খুনের পথে পা বাড়ায় এই মহিলা।
মোট কত মানুষকে যে সে খুন করেছে, তার হিসেব ছিল না পুলিশের কাছেও। তীব্র বিষ সায়ানাইড-ই হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার খুন করার হাতিয়ার। চরণামৃতে সেই বিষ মিশিয়েই একের পর এক মেয়েকে খুন করত 'সায়ানাইড মল্লিকা' নামে কুখ্যাত এই মহিলা সিরিয়াল কিলার।
বেছে বেছে মহিলাদেরই খুন করত এই মহিলা সিরিয়াল কিলার। তারপর মৃতদেহের থেকেই লুঠ করত টাকা আর গয়না। আর এই উপায়েই দরিদ্র জীবন ছেড়ে বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল সে।
স্রেফ লোভের বশেই সিরিয়াল কিলার হয়ে উঠেছিল কেডি কেম্পাম্মা। অপরাধ দুনিয়ায় যার পরিচয় 'সায়ানাইড মল্লিকা'। বেছে বেছে ধনী মহিলাদেরই নিশানা করত সে। বিশেষ করে সেইসব মহিলা, যাদের অর্থ সম্পত্তি থাকলেও মানসিক শান্তি ছিল না, ধর্মের ছুতোয় তাদের হাত করে ফেলত সে।
আর ধর্মকে হাতিয়ার করেই খুন করার জন্য নিজস্ব এক অস্ত্রও বানিয়ে নিয়েছিল সে। আর তা হচ্ছে চরণামৃত!
তীব্র বিষ সায়ানাইড মিশিয়ে একের পর এক মেয়েকে খুন করত এই মহিলা। এই অভিনব পদ্ধতির কারণেই ধরা পড়ার পর পুলিশের খাতায় তার নাম হয়ে যায় 'সায়ানাইড মল্লিকা'।
পুলিশ জানায়, কার বিয়ে হচ্ছে না, কে নিঃসন্তান, কার স্বামী অন্য সম্পর্কে জড়িত, এমন সব সাংসারিক সমস্যায় জড়িয়ে থাকা মহিলাদের খুঁজে নিত কেম্পাম্মা। এরপর তাদের সামনে সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার টোপ দিত ।
এরপর সেই মহিলাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াত কেম্পাম্মা। তারপর পূজার বাহানা করে কোনও নির্জন স্থানে ডেকে পাঠাত সেই মহিলাকে। সেখানেই বিষ মেশানো চরণামৃত পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন অসহায় মহিলাটি।
এভাবে ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বেঙ্গালুরুর বাইরে মমতা রাজন নামে এক মহিলাকে খুন করেছিল কেম্পাম্মা। এরপর থেকেই চরণামৃত দিয়ে চলতে থাকে একের পর এক খুন।
প্রথম দিকে পুলিশ একের পর মরদেহ খুঁজ়ে পেলেও কোন সুরাহা করতে পারছিল না। মরদেহে কোন আঘাত বা জখম না থাকলেও ময়নাতদন্ত করে দেখা যায় সব খুনের পেছনেই এই বিশেষ ধরনটি রয়েছে। এটিই পুলিশের নজর আকর্ষণ করেছিল। আর সেই সূত্র ধরে তদন্ত করতে করতেই কেম্পাম্মার কাছাকাছি পৌঁছে যান তারা।
অবশেষে ২০০৮ সালে আরও একটি হত্যার পর পালানোর সময় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আর এরপরই শেষ হয় সায়ানাইড মল্লিকার সিরিয়াল কিলিং। সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া